ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫ ১ চৈত্র ১৪৩১
খাঁটি দেশপ্রেম আর দু:সাহসী জনমুক্তির-লড়াই জিয়াকে রাষ্ট্রনায়ক বানিয়েছিল
রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী
প্রকাশ: Friday, 17 January, 2025, 10:06 PM

খাঁটি দেশপ্রেম আর দু:সাহসী জনমুক্তির-লড়াই জিয়াকে রাষ্ট্রনায়ক বানিয়েছিল

খাঁটি দেশপ্রেম আর দু:সাহসী জনমুক্তির-লড়াই জিয়াকে রাষ্ট্রনায়ক বানিয়েছিল

জিয়াউর রহমান তাঁর পিতা-মাতা ও অন্যসব পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘জেনেটিক’ কারণেই দৃঢ় আত্মবিশ^াস, খাঁটি দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ আর তার নিজ দেশবাসীর জন্য সর্বদা ন্যায়বিচার কায়েমের এবং আপন মাতৃভূমির হিমালয়সম সমৃদ্ধি প্রত্যাশী এক ব্যক্তিত্ব হয়ে গড়ে উঠছিলেন। তাঁর বড়-পুঁজি ছিল অপরিসীম শ্রমদানের ক্ষমতা আর দেশ ও দেশবাসীকে ভালোবাসার অপরিমেয় ই”ছাশক্তি।
জন্মলাভের পরে নিজ-স্বজনদের দেয়া যার ডাকনাম ‘কমল’, মানে পদ্ম-ফুল, তাঁর জীবনটাও ছিল ফুলের মতো পবিত্র। সৎ-সাহসের প্রতীক আর জীবনভর নির্লোভ এক কর্মবীর থাকার অঙ্গীকারের বিরল ব্যক্তিত্ব বলা যায় জিয়াকে। নিপীড়িত খেটে-খাওয়া মানুষের তথা মধ্যবিত্ত ও নি¤œ-মধ্যবিত্তের জীবন-সংগ্রামের এবং সার্বিক শোষণমুক্তির পথপ্রদর্শক ছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া।
আজ (১৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশের এক মহান জাতীয় নেতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মদিন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির প্রবক্তা জিয়াউর রহমান দুনিয়ার বুকে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবার প্রথম কারিগর ছিলেন, তাই তিনি সারাবিশে^ বাংলাদেশের একজন জাতীয় নেতা ও সফল রাষ্ট্রনায়ক । এই-দেশের একজন সাধারণ দেশপ্রেমিক নাগরিকের অবস্থান থেকে অনন্য মেধা ও পরিশ্রম বিনিয়োগে তিনি মুসলিম-বিশে^র নিপীড়িত মানুষের লড়াইয়ে নিজেকে ক্রমশ সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের বগুড়ায় পূর্বপুরুষদের বাড়ী হলেও জিয়াউর রহমান, যার জন্ম ১৯৩৬ সালে, রসায়নবিদ-পিতার কর্মস্থলের সূত্রেই প্রথমে কলকাতা ও পরে করাচী নগরীতে উন্নত-মানের স্কুল-শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন। চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে, করাচীর মাধ্যমিক স্কুলে মেধার বিবেচনায় ও বিদ্যা-চর্চায় সুনাম অর্জন করেন। ১৯৫৩ সালে, তিনি করাচীর বিখ্যাত ডি.জে. সায়েন্স কলেজে বিজ্ঞান শাখায় উ”চ মাধ্যমিক ক্লাশে অধ্যয়নের সময়েই পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কাকুল মিলিটারি অ্যাকাডেমীতে অফিসার-ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। এই সময়টাতে তিনি নিয়মিতভাবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে অতিথি-শ্রোতা রূপে উপস্থিত হতেন। এইসবকিছু  জিয়াউর রহমানের পরবর্তী-জীবনে অসামান্য দেশপ্রেমিক নাগরিক রূপে বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। খুবই যৌক্তিক যে, সেই সময়টাতেই তার ভেতরে পূর্ব-বাংলার বাঙালীদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানী নয়া-উপনিবেশবাদী শাসক-শোষক গোষ্ঠীর নিপীড়ণের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি সামরিক অফিসার জিয়ার বিশেষ মনোযোগের প্রতিবাদী-চেতনা গড়ে উঠতে থাকে।
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলায় হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন  যুক্তফ্রন্ট বিপুলভাবে বিজয়ী হলে পশ্চিম পাকিস্তানের (তৎকালীন) অ্যাবোটাবাদের সেনা-ছাউনির অ্যাকাডেমী ক্যাফেটেরিয়ায় জিয়া অন্যসব বাঙালী ক্যাডেটদের নিয়ে নির্বাচনী বিজয় উৎসব করেছিলেন। তাঁর নিজের লেখায় জানা যায়‘এ ছিল আমাদের বাংলা ভাষার জয়, এ ছিল আমাদের অধিকারের জয়, এ ছিল আমাদের আশা-আকাঙ্খার জয়, এ ছিল আমাদের জনগণের,আমাদের দেশের এক বিরাট সাফল্য’। তাঁর কনিষ্ঠ-সহোদর আহমেদ কামালের মন্তব্যÑ ‘‘বাঙালিদের প্রতি পাঞ্জাবীদের (পশ্চিম পাঞ্জাবীদের) মনোভাবের ব্যাপারে জিয়া ছিলেন সব সময় সমালোচনামুখর। উপলব্ধির শুরু থেকেই একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক হিসেবে জাতীয়তাবাদে প্রবলভাবে বিশ্বাস করতেন জিয়া, সংকীর্ণ চিন্তা থেকে নয়’।

জিয়া পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে যখন তরুণ-যুবা অফিসার (লেফটেন্যান্ট, ক্যাপ্টেন বা মেজর), যখন তিনি প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি পূর্ব বাংলার বাঙালি ক্যাডেট-অফিসারদেও, প্রায়ই বলতেন ‘‘আমরা কোনো অংশেই পশ্চিম পাকিস্তানী ক্যাডেটদের চেয়ে অনগ্রসর নই, প্রকৃতপক্ষে আমরা তাদের চেয়েও ভালো করতে পারি, আমাদের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে, পাকিস্তানীরা (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানীরা) কখনোই আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য এগিয়ে আসবে না”। বাঙালি ক্যাডেটদের জন্য জিয়ার সেসব কথাগুলো ছিল অনেক বড় প্রেরণার উৎস এবং যে কোন্ োসেনা-ক্যাডেটের কঠোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতো।
জিয়া বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জার্মানীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন কিছুকাল, এর আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে (তৎকালীন) সামরিক গোয়েন্দা অফিসার হিসেবে কাজ করেন বেশ কয়েক বছর। ইতিহাসে অল্প কয়েকজন সামরিক অফিসার দেশের জন্য দু-দুটো যুদ্ধে অংশগ্রহণের ও পরে জেনারেল পদে উন্নীত হবার সুযোগ পেয়েছেনÑ তাদের একজন জিয়াউর রহমান। ১৯৬৫ সালে জিয়াউর রহমান পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধে এবং ১৯৭১ সালে মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-যুদ্ধে (মুক্তিযুদ্ধে) অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশাল ভূমিকা পালন করেনÑযা বাঙালি সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে-লেখার মতো বিষয়। মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরঙ্কুশ রাখতে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় ছিলেন তিনি, জীবনের সমাপনী দিন অবধি।

একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাক-দখলদার সেনারা যখন মুক্তিকামী নিরীহ বাঙালির ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে চরম নৃশংসতা ও বর্বরতার শক্তি দিয়ে, চট্টগ্রামে অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মেজর জিয়াউর রহমান তখন এক মূহুর্ত দেরী না-করে তাঁর সঙ্গী বাঙালি অফিসার ও সেনা-জোয়ানদের নিয়ে বিদ্রোহ করেন এবং হানাদার পাকিস্তানী-সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে দেন। মেজর জিয়া আগে থেকেই পাকিস্তানী ইয়াহিয়া সামরিক-জান্তা এবং তাদের দখলদার বর্বর-সেনাদের গতিবিধি নজরে রেখে সাবধানতার সাথে অপেক্ষমান ছিলেন স্বাধীনতা-যুদ্ধের প্রথম-ধাপটি আরম্ভ করার লক্ষ্য নিয়ে। সারাদেশের সংগ্রামী মানুষের দিশাহারা দশার মধ্যে প্রায় তিনশো বাঙালি সেনা ও অফিসার নিয়ে প্রতিরোধ-যুদ্ধে প্রবল সক্রিয়তার মধ্যে মেজর জিয়া ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে সেখানকার বেলাল মোহাম্মদসহ অন্যান্য লড়াকু বেতার-কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণাটি দেন। সারাদেশের প্রতিরোধ-যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাঙালি সেনা ও ছাত্র-জনতার মধ্যে প্রচন্ড এক শক্তিমত্তার বিপ্লবী-কান্ড ঘটে গেলন সবাই হানাদার-সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
তারপরে সৈয়দ নজরুল-তাজউদ্দীনের অ¯’ায়ী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে মেজর জিয়া প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও পরে লে.কর্নেল জিয়া ব্রিগেড কমান্ডার (‘জেড’ ফোর্স) নিযুক্ত হয়ে স্বাধীনতা-যুদ্ধের অন্যতম সেরা বীর-কমান্ডার রূপে পরিগণিত হন। পরবর্তীকালে স্বাধীন-বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পরে সেনা-প্রধান হন। এবং তারও পরে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার অভ্যূত্থানে রাষ্ট্র-ক্ষমতায় অভিষেক ঘটে। এবং এক পর্যায়ে ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট হন। এরই মধ্যে আধিপত্যবাদী চক্রান্তের মধ্যেই জিয়া ১৯-দফা কর্মসূচী দিয়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতির উদ্বোধন ঘটান এবং তার মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৯ সালে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে পরিপূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম করেন। আওয়ামী লীগের চক্রান্তকারীদের এক দলীয় বাকশাল শাসন বেবস্থার পরিবর্তে বহু দলীয় গণতান্ত্রিক বেবস্থা চালু করেন তিনি।
জিয়াউর রহমান স্বে”ছাশ্রমে খাল-কাটা কর্মসূচী চালু করে সেচ-ব্যব¯’া ও নৌপথের উন্নয়নে অসামান্য উদ্যোগ নেন, আলস্যপ্রিয় মানুষকে কর্ম-উদ্দীপনায় উদ্বুদ্ধ করেন। এক বাকশাল(বিলুপ্ত) জেলা-গভর্নর ও চিত্তরঞ্জন সূতারের শ’-পাঁচেক সশস্ত্র সন্ত্রাসী আধিপত্যবাদী প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সহায়তায় ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধ শুরু করেছিল, সেসব নস্যাৎ করে দেন জিয়া। প্রেসিডেন্ট জিয়া চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বেজায়-রকম ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তার মেধা ও বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে। তিনি ওআইসি শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখেন, সারাদুনিয়ায় কূটনৈতিক অবস্থান শক্তিময় করেন। জিয়ার বিশেষ উদ্যোগেই দেশের কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, রপ্তানীমুখী তৈরী-পোশাক শিল্পসহ সব ধরণের শিল্প-কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে দ্রæত অগ্রগতি হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন সম্পদশালী রাষ্ট্রে বাংলাদেশের মানবসম্পদ রপ্তানীর ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়। জিয়া রাষ্ট্রনায়ক হতে পেরেছিলেন, তাই তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় সার্ক প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধ বন্ধে বিশাল কূটনৈতিক উদ্যোগে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তাই তো প্রেসিডেন্ট জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে হাজার হাজার বছর ধরে অমর-নায়ক হয়ে থাকবেন। # লেখক # বিএনপি-র সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status