কী হবে অটোচালকদের জীবিকার?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() কী হবে অটোচালকদের জীবিকার? অটোচালকদের জীবিকার কী হবেঅটোরিকশা অনুমোদনের বৈধ উপায় না থাকায় এটি আইনত অবৈধ যান। প্রধান সড়কগুলোতে যানটি চলাচলের উপযুক্ত নয়, এ নিয়ে কারো সন্দেহ নেই। প্রশ্ন উঠেছে, অটোরিকশা তৈরির সব ধরনের যন্ত্রপাতি আমদানি বৈধ হলে যানটি কিভাবে অবৈধ হয়! আবার অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সংখ্যা জানা জরুরি। কিন্তু দেশে বর্তমানে কতসংখ্যক অটোরিকশা রয়েছে, তার ধারণা নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্য বলছে, সারা দেশে আনুমানিক ৬০ লাখ অটোরিকশা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় চলাচল করছে ১০ থেকে ১৫ লাখ। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছিলেন, দেশে ৪০ লাখের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হুট করে এসব রিকশা বন্ধ করে দেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বরং একটি নীতিমালা করে এসব যানকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন করে রিকশা তৈরি বন্ধে কঠোর হতে হবে। নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে শৃঙ্খলায় আনার সুযোগ রয়েছে। গত মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এর পর থেকে এর বিরুদ্ধে ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করছেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা। জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ওদের দাবি এসেছে। আমাদের উপদেষ্টা আসিফ (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) বিষয়টি দেখছেন। আলোচনা করে নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।’ রিকশা-ভ্যান-ইজি বাইক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে বন্ধ করা কোনো সমাধান হতে পারে না। এতগুলো শ্রমিক কী করে খাবে! এই শ্রমিকদের জীবিকার কী হবে? প্রয়োজনে মডেল আপডেট করা যেতে পারে। যেসব ত্রুটি রয়েছে সেগুলো দূর করা যেতে পারে। আমাদের লাইসেন্স দেওয়া হোক। একেবারে বন্ধ করে দিয়ে সমাধান করা যাবে না।’ আগেও বন্ধের চেষ্টা হয়েছিল গত ১৫ মে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপদেষ্টা পরিষদের সভা থেকে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেন তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে এরপর গত ২০ মে মানবিক কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে ক্ষেত্রে দ্রুত নীতিমালা করে এসব যানকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল। নতুন নকশা করে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে বৈদ্যুতিক যান চলাচলসংক্রান্ত মোটরযানের নীতিমালা অনুমোদন করে সরকার। বৈদ্যুতিক যেসব যান বর্তমানে সড়কে চলাচল করছে, সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট নিরাপদ মডেলে রূপান্তর করতে হবে। বৈদ্যুতিক মোটরযান নিবন্ধন ও চলাচলসংক্রান্ত নীতিমালায় এমন বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায়ের ১২-এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান অনিরাপদ ইলেকট্রিক মোটরযান কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরাপদ মডেল অনুসরণ করে রূপান্তর করতে হবে। অন্যথায় চলাচল করতে পারবে না। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘বিদ্যমান ব্যাটারিচালিত রিকশায় ত্রুটি আছে। তবে রিকশার নকশা পরিবর্তন করে নীতিমালার আওতায় আনা যেতে পারে। ব্রেকিং ব্যবস্থায় ঝুঁকি কমাতে হবে। ছাদ করে সোলার বসানো যেতে পারে।’ অনুমতি কে দেবে? অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত রিকশা মূলত চাঁদার জোরে সড়কে চলত। গত ৫ আগস্টের পর এসব রিকশা থেকে চাঁদা আদায় বন্ধ হয়ে যায়। আবার এর আগে মূল সড়কে অটোরিকশার চলাচল তেমন ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্ট-পরবর্তী তিন দিন কার্যত দেশে সরকার না থাকায় সব সড়কে অবাধে অটোরিকশার চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকে আর অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সঠিক নিয়ন্ত্রণের জন্য বৈধতা জরুরি। সে ক্ষেত্রে এসব যানের অনুমোদন কে দেবে? সাধারণত দেশজুড়ে যান্ত্রিক যান চলাচলের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আর অঞ্চলভিত্তিক ছোট যান চলাচলের অনুমতি দেয় আঞ্চলিক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (আরটিসি)। রাজধানীতে পদাধিকারবলে এই কমিটির প্রধান পুলিশ কমিশনার। আর রাজধানীর বাইরে জেলা প্রশাসক কমিটির প্রধান হিসেবে যান চলাচলের অনুমতি দেন। আবার অযান্ত্রিক যান চলাচলের অনুমতি দেয় সিটি করপোরেশন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ অযান্ত্রিক যান চলাচল করছে। যদিও ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও ইজি বাইক চলাচলের অনুমতি হাইকোর্টের নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। বিআরটিএও এসব যানের নিবন্ধন দেয় না। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলের অনুমতি কোন প্রতিষ্ঠান দেবে তা পরিষ্কার নয়। কারণ যে প্রতিষ্ঠান এসব যান চলাচলের অনুমোদন দেবে, ওই প্রতিষ্ঠানকেই রুট পারমিট, সংখ্যাগত ও পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হবে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, ‘হঠাৎ করে বড় সমস্যার সমাধান করা যায় না। আগে সংখ্যাগত ও চলাচলগত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নীতিমালা বা আইন করলে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।’
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |