মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বুঝতে যে ১২টি বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে
নতুন সময় ডেস্ক
|
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ঐতিহাসিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই প্রজেক্টকে “বিপজ্জনক পরিকল্পনা” অভিহিত করে মিজ হ্যারিস দাবি করেছেন যে, মি. ট্রাম্প ওই প্রেজেক্টে জড়িত রয়েছেন। ফলে সাবেক ওই প্রেসিডেন্ট এবার নির্বাচিত হলে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিবেন বলে ভোটারদের সতর্ক করেছেন মিজ হ্যারিস। তবে মি. ট্রাম্প অবশ্য ওই প্রজেক্টের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। দুইপ্রার্থীর প্রচারণায় দেশটির গর্ভপাত নীতির বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ডেমোক্রেটরা গর্ভধারণের ‘নবম মাসে’ গর্ভপাতের অনুমতি দিতে চায় বলে দাবি করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী মি. ট্রাম্প। অন্যদিকে, মি. ট্রাম্পই দুই বছর আগে সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতিকে নিয়োগ করে গর্ভপাতের জাতীয় অধিকারকে বাতিল করেছিলেন বলে অভিযোগ করেন মিজ হ্যারিস। উভয় প্রার্থীর ভোটের প্রচারণায় গাজা-ইরায়েল যুদ্ধ প্রসঙ্গও গুরুত্ব পাচ্ছে। ওই যুদ্ধের “অবসান হওয়া উচিৎ” মন্তব্য করে মিজ হ্যারিস বলছেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয়’ সমাধানের পথে হাঁটলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে, মি. ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি ক্ষমতায় থাকলে গাজা-ইরায়েল যুদ্ধ ““কখনোই শুরু হতো না”। মিজ হ্যারিসকে “দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভাইস-প্রেসিডেন্ট” উল্লেখ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. ট্রাম্প এটাও বলছেন যে, ডেমোক্র্যাটরা নভেম্বরের নির্বাচনে জিতলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও বেঁধে যেতে পারে। কারা ভোট দিতে পারেন? এক কথায় বললে, আঠারো বছর বা তার উপরের যেকোনো মার্কিন নাগরিক নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে নর্থ ডাকোটা বাদে যুক্তরাষ্ট্রের বাকি ৪৯টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে আগেই ভোটার নিবন্ধন করা হয়। ভোটের আগেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এমনকি, বিদেশে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকরাও ভোটার নিবন্ধনে নাম লেখাতে পারেন। এক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালোটে বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার জন্যও তারা আবেদন করতে পারেন। ভোটাররা কতক্ষণ ভোট দিতে পারবেন, সেটি অঙ্গরাজ্যগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যে সাধারণত আগাম ভোটের সুযোগ দেয়া হয়। যার ফলে তালিকাভুক্ত ভোটাররা নির্বাচন দিনের আগেই তাদের ভোট দিতে পারেন। সেখানে ডাকযোগে ভোট দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এক্ষেত্রে যারা অসুস্থতা, প্রতিবন্ধিতা, ভ্রমণ বা অন্য কোনো কারণে দেশ বা অঙ্গরাজ্যের বাইরে থাকায় ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন না, তাদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। যারা নির্বাচনের দিন ভোট দিতে যাবেন, তাদের সশরীরে ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়ে ভোট দিতে হবে। ভোট বেশি পেলেই প্রেসিডেন্ট? সাধারণত নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়লাভ করেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী বেশি সংখ্যক ভোটারের ভোট (পপুলার ভোট) পাওয়ার পরও বিজয়ী নাও হতে পারেন। এর কারণ দেশটিতে ভোটাররা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন না। সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয় ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে বিশেষ একটি ব্যবস্থায়। এক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের নির্বাচনি লড়াইয়ের বদলে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে স্থানীয়ভাবে, তথা প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনি লড়াইয়ের মাধ্যমে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের একটিতে জয়ী হওয়ার অর্থ হলো একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সেই অঙ্গরাজ্যের সবকটি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পেয়ে যাবেন। দেশটিতে ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮টি। মাইন ও নেব্রাসকা- এই দু’টি অঙ্গরাজ্য বাদে বাকি ৪৮টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট যোগ দিয়ে যে প্রার্থী ২৭০টি বা তারও বেশি ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ভোট পাবেন, তিনিই হবেন পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আর বিজয়ী প্রার্থীর প্রার্থীর রানিং মেট হবেন দেশটির ভাইস-প্রেসিডেন্ট। সাধারণ ভোটারদের ভোটে পিছিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত পাঁচজন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, যার মধ্যে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প 'ইলেক্টোরাল কলেজ' আসলে কী? 'ইলেক্টোরাল কলেজ' হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত রাষ্ট্র ও কেন্দ্রীয় আইনের একটি জটিল ব্যবস্থা, যা দেশটির সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত। ‘কলেজ’ শব্দটির অর্থ এখানে সেই ব্যক্তিদের বোঝানো হয়, যারা একটি অঙ্গরাজ্যের ভোট দেওয়ার অধিকারী। 'ইলেক্টোরাল কলেজ' হচ্ছে কর্মকর্তাদের একটি প্যানেল, যাদের 'ইলেকটরস' বলা হয়। এরা এক কথায় নির্বাচক মণ্ডলী। প্রতি চার বছর পর পর এটি গঠন করা হয় এবং এরাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বাছাই করেন। কংগ্রেসে প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে প্রতিটি স্টেট বা অঙ্গরাজ্যে ইলেকটরসের সংখ্যা নির্ধারিত হয়: যা নির্ধারিত হয় স্টেটে সেনেটরের সংখ্যা (প্রত্যেক স্টেটে দুইজন) এবং প্রতিনিধি পরিষদে প্রতিনিধির (যা জনসংখ্যার অনুপাতে) যোগফল মিলে। ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি অনুযায়ী যেসব রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, সেসব রাজ্যে ইলেকটোরাল ভোটও বেশি। সবচেয়ে বড় ছয়টি স্টেট হলো ক্যালিফোর্নিয়া (৫৫), টেক্সাস (৪০), নিউইয়র্ক (২৯), ফ্লোরিডা (২৯), ইলিনয় (২০) এবং পেনসিলভেনিয়া (২০)। এই পদ্ধতির ফলে ছোট রাজ্যগুলোকে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়, যার অর্থ হচ্ছে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে অবশ্যই পুরো দেশজুড়ে ভোট পেতে হবে। সাধারণত অঙ্গরাজ্যগুলো তাদের হাতে থাকা ইলেক্টোরাল ভোট সেই প্রার্থীকেই দেয়, যিনি ওই অঙ্গরাজ্যের ভোটারদের সরাসরি ভোটে জয়ী হয়েছেন। ধরা যাক, টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১% পেয়েছেন, তাকে ওই অঙ্গরাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবগুলিই সেই প্রার্থী পেয়ে যাবেন। একটি অঙ্গরাজ্যে জয়ের ব্যবধান যদি বিরাট হয়ও, তাহলেও বিজয়ীপ্রার্থী ওই নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোটই পাবেন। ফলে সবগুলো অঙ্গরাজ্য মিলিয়ে একজন প্রার্থী ভোটারদের ভোট বেশি পাওয়ার পরেও ইলেকটোরাল ভোট কম পাওয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যেতে পারেন। ২০০০ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর এবং ২০১৬ সালে আরেক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটেছিল। ইলেক্টোরাল কলেজ নিয়ে আরো পড়তে এখানে ক্লিক করুন অনিচ্ছা সত্ত্বেও এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন জো বাইডেন ইলেক্টোরাল ভোটে ‘টাই’ হলে কী হবে? ইলেক্টোরাল ভোটে যদি কোনো প্রার্থী এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পান, সেক্ষেত্রে মার্কিন আইন সভার নিম্ন-কক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস’ ভোট দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। এক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা শীর্ষ তিন প্রার্থীর ভেতর থেকে একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে বাছাই করে থাকেন। বাকি দুইজন প্রার্থীর ভেতর থেকে একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নেয় দেশটির সিনেট। যদিও এরকম ঘটনা মার্কিন ইতিহাসে একবারই ঘটেছে। ১৮২৪ সালে এভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জন কুইনসি অ্যাডামস। তবে বর্তমানে অবশ্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টি দু’টির যে আধিপত্য রয়েছে, তাতে ওইরকম ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। শিল্পীর চোখে ইলেক্টোরাল কলেজে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি দৃশ্য নির্বাচনের ফলাফল কখন জানা যায়? যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল পেতে কয়েকদিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এর কারণ হলো, অঙ্গরাজ্যগুলোর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়। এরপর ভোট গণনা শুরু হয়। কিন্তু যখন কোন কোন অঙ্গরাজ্যে ভোটগণনা শুরু হয়, তখন আলাস্কা বা হাওয়াইয়ের মতো কোন কোন অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা চলতে থাকে। কোন কোন নির্বাচনে দ্রুত ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, আবার কখনো কখনো সময় লাগে। যেমন, ২০১৬ সালের ভোটের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কে তার বিজয়ীর ভাষণ দিয়েছিলেন ভোররাত তিনটের দিকে, উল্লসিত সমর্থকদের সামনে একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে অবশ্য জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করতে কয়েক দিন সময় লেগে গিয়েছিল। সব ভোট গণনা করতে সময় লাগায় চীড়ান্ত বিজয়ীর নাম প্রকাশে বিলম্ব হয়েছিল বলে তখন জানিয়েছিল প্রশাসন। তবে পরদিন নাগাদ বিজয়ী প্রার্থীর সম্পর্কে একটি ধারণা পরিষ্কার হতে শুরু করে। কারণ অঙ্গরাজ্যগুলোয় ভোটের হিসাবে ইলেক্টোরাল কলেজের একটি হিসাব পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু সুইং স্টেট হিসাবে পরিচিত কোন রাজ্যে যদি ভোট গণনা বা আইনি ঝামেলা তৈরি হয়, তাহলে বিজয়ী প্রার্থী সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে আরও সময় লাগতে পারে। ২০০০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী জর্জ বুশ ও ডেমোক্র্যাট অ্যাল গোরের মধ্যে এত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল যে তা শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছিল ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ভোট গণনায়। দুই প্রার্থীর মধ্যে মাত্র কয়েকশ' ভোটের ফারাক ছিল। এ নিয়ে শুরু হয় কয়েক সপ্তাহব্যাপী আইনী যুদ্ধ, যার পরিণামে ভোট পুনর্গণনা করতে হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। অবশেষে মি. বুশকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, ফলে তিনি ফ্লোরিডা রাজ্যের ২৫টি ইলেকটোরাল ভোটের সবগুলো পেয়ে যান। তাতে তার মোট ইলেকটোরাল ভোট দাঁড়ায় ২৭১ এবং বিজয় নিশ্চিত হয়। মি. গোর পপুলার ভোট বেশি পেলেও পরাজয় স্বীকার করে নেন। সব মিলিয়ে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। সাধারণ রীতি অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি, যখন বিভিন্ন রাজ্যের ইলেকটোররা বসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদে ভোট দেবেন। এরপর ভোটের ফল ওয়াশিংটন ডিসিতে পাঠানো হবে এবং জানুয়ারির শুরুতে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাইস প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা করবেন। পপুলার ভোট কম পেয়েও ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জর্জ ডাব্লিউ বুশ বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর কী হয়? নির্বাচনের পরপরই নতুন সরকার গঠন করা হয় না। বিজয়ীদেরকে কিছুদিন সময় দেওয়া হয়, যাকে ‘রূপান্তরকালীন সময়’ বলা হয়ে থাকে। ওই সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাই করেন এবং পরিকল্পনা তৈরি করে থাকেন। এরপর নতুন বছরের শুরুতে, অর্থ্যাৎ জানুয়ারিতে নতুন বা পুননির্বাচিত প্রেসিডেন্টের অভিষেক ও শপথ অনুষ্ঠান হয়। রীতি অনুযায়ী, ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৯৩৩ সালে হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২০তম সংশোধনীতে নির্ধারণ করে দেয়া হয় যে, প্রেসিডেন্টের ওই অভিষেক অনুষ্ঠান হবে ২০শে জানুয়ারি। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনের সামনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে নতুন প্রেসিডেন্টে অভিষেক হয়। এ অনুষ্ঠানের পরই নতুন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে যান তার চার বছরব্যাপী মেয়াদ শুরু করার জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে ১৯৫১ সালের আগ পর্যন্ত অবশ্য দেশটিতে দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনের মাধ্যমে একই ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা তুলনামূলক কম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি আরও যে নির্বাচন হচ্ছে আগামী পাঁচই নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে সবার নজর যে প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের দিকে থাকবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ওই নির্বাচনের মাধ্যমে মার্কিন ভোটাররা তাদের আইনসভার নতুন সদস্যদেরকেও বেছে নিবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভাকে বলে কংগ্রেস, যা মূলত দু'কক্ষবিশিষ্ট। এর নিম্নকক্ষকে 'হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস' বা প্রতিনিধি পরিষদ এবং উচ্চকক্ষকে 'সেনেট' বলা হয়ে থাকে। কংগ্রেসের এই দুই ধরনের সদস্যের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হন দুই বছরের জন্য। এবারের নির্বাচনে মার্কিন নিম্নকক্ষের ৪৩৫টি আসনের সব ক’টিতেই ভোট হবে। অন্যদিকে, সেনেট সদস্যদের মেয়াদ হয়ে থাকে ছয় বছর। তবে প্রতি দুই বছর পরপর সেনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে পাঁচই নভেম্বরের নির্বাচনে সেনেটের ৩৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে জানা যাচ্ছে। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে এখন রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। অন্যদিকে, সেনেটে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। ফলে এবারও তারা উচ্চকক্ষে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার পাশাপাশি প্রতিনিধি পরিষদেরও নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট মার্কিন আইনসভা ‘সুইং স্টেট’ কোনগুলি? বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যই প্রতিটা নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে একই দলকে ভোট দিয়ে আসে। আমেরিকান নির্বাচনে রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত এই অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় 'রেড স্টেট' বা 'লাল রাজ্য' আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া স্টেটগুলোকে বলা হয় 'ব্লু স্টেট' বা 'নীল রাজ্য'। ফলে এসব রাজ্য নিয়ে প্রার্থীদের খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না বা মনোযোগ দিতে হয় না। কিন্তু হাতে গোণা কিছু অঙ্গরাজ্য আছে যে রাজ্যগুলোর ভোট, প্রার্থীদের কারণে যে কোনো শিবিরে যেতে পারে। ফলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু ‘সুইং স্টেট’এর দিকে নজর দেন যেখানে ভোট কোন পার্টির পক্ষে যাবে, তা নির্দিষ্ট করে বোঝা যায় না। এগুলোই হল আমেরিকান নির্বাচনের ব্যাটলগ্রাউন্ড বা নির্বাচনি রণক্ষেত্র। এগুলোকেই অনেকে বলে থাকে 'বেগুনি রাজ্য'। প্রার্থীদের কাছে এসব অঙ্গরাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। যেগুলোকে বলা হয় ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বা নির্বাচনি রণক্ষেত্র। আর এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় জয় পরাজয়ের মূল চাবিকাঠি। এই রাজ্যগুলোতেই হয় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, মিশিগান, নেভাডা, পেনসিলভেনিয়া এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যগুলি ২০১৬ সালে এভাবেই ‘ব্যাটল-গ্রাউন্ড স্টেট’ হয়ে উঠেছিল। প্রত্যেক নির্বাচনের সময় দেখা গেছে যেসব রাজ্যের ভোট বেশি, প্রার্থীরা সেসব রাজ্যে নির্বাচনি প্রচারণার পেছনে অনেক বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করে থাকেন। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |