আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ফিলিস্তিনের মানবিক চাহিদা পূরণের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে এসেছেন। ফলে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে পূর্ববর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্টের পথেই হাঁটতে যাচ্ছেন তিনি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, কমালা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ, ও সার্বিকভাবে, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সম্প্রতি শিকাগোতে দলের সম্মেলনে প্রার্থিতা গ্রহণের স্বাগত ভাষণে কমালা তার অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল যেন নিরাপদ থাকে, জিম্মিরা মুক্তি পায়, গাজার দুর্দশার অবসান হয় এবং ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের আত্মসম্মান, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অধিকার উপভোগ করতে পারে, সে লক্ষ্যে এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং আমি কাজ করছি।’
তবে এখনো নিজের নীতিমালা নিয়ে বিস্তারিত জানাননি কমালা। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে আগ্রহ সারাবিশ্বের।
বাইডেন দীর্ঘদিন সিনেটের পররাষ্ট্রনীতি কমিটির সদস্য হলেও কমালা মূলত ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়েই পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের সিনিয়র ফেলো নাতাশা হল বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে পূর্বঅভিজ্ঞতা’ না থাকার বিষয়টি ডেমোক্র্যাটিক ভোটারদের চোখে কমালাকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০০২ সালের অক্টোবরে বাইডেনসহ ৭৭জন সিনেটর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেন। এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে বাইডেনের জন্য বোঝায় পরিণত হয়। একই ভাবে, ইসরায়েলের প্রতি তার অন্ধ সমর্থনও ডেমোক্র্যাটিক দলের এক মহলের কাছে তাকে অজনপ্রিয় করে তোলে।
ইসরায়েলের বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্টাডিজ বিভাগের প্রধান জোনাথান রাইনহোল্ড বলেন, কমালা প্রশাসন ইরান প্রসঙ্গে অত্যন্ত সতর্ক থাকবে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে প্রতিহত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আরও সামরিক সম্পদ নিয়োজিত করেছে। প্রশাসনের এই উদ্যোগের সঙ্গে কমালা সরাসরি সম্পৃক্ততা ইসরায়েলিদের দৃষ্টিতে ‘ভালো খবর’।
কমালার বর্তমান সহযোগীরা ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, তিনি বাইডেনের দেখিয়ে দেওয়া পথেই হাঁটতে আগ্রহী: যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য পূরণের পর ইসরায়েলের নিরাপত্তায় কোনো ধরনের ছাড় না দিয়ে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের দিকে যাওয়া।
সিনেটে থাকার সময় কমালার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন হ্যালি সোইফার। তিনি এ বিষয়টিতে একমত হয়েছেন।
কমালার সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়েছেন। এবং শুধু ইসরায়েলের সঙ্গে বর্তমান চুক্তির অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত আসেনি।“
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত সোইফার বলেন, “একইসঙ্গে, এ বছর তাদের নিরাপত্তা চাহিদার কারণে সহায়তার পরিমাণ বাড়াতেও তারা সম্মত হন।”
বাইডেন নিজেকে জায়োনিস্ট হিসেবে অভিহিত করেন, যা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে একটি ঘৃণিত তকমা। সে তুলনায়, কমালা দক্ষিণের দেশগুলোর মতামতের প্রতি আর বেশি সংবেদনশীলতা দেখাতে পারেন।
নাতাশা হল বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে বিশ্বের বাকি দেশগুলো কী ভাবে, বিশেষত, নব্য-ঔপনিবেশিকতা, নব্য-আভিজাত্য নিয়ে তাদের ভাবনাগুলো সম্পর্কে কমালা অবগত আছেন আমি আশা করব তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন।’
তবে রাইনহোল্ড বলেন, এ মুহূর্তে তিনি নির্বাচন জেতা ও ডেমোক্র্যাটিক দলকে একতাবদ্ধ রাখার জন্য যা বলা দরকার, তাই বলবেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু দলের অর্ধেক মানুষ ইসরায়েল ও বাকি অর্ধেক ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি দেখানোর পক্ষে, তাকে ভারসাম্য রক্ষা করেই চলতে হবে। এবং তিনি ঠিক সেটাই করছেন।’