ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩০ ভাদ্র ১৪৩১
চাঁদপুরে দীপু মনির বাসায় বসতো তদবিরের হাট
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Thursday, 29 August, 2024, 1:34 PM

চাঁদপুরে দীপু মনির বাসায় বসতো তদবিরের হাট

চাঁদপুরে দীপু মনির বাসায় বসতো তদবিরের হাট

দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন চাঁদপুরে তার বাসায় বসতো তদবির-বাণিজ্যের হাট। সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকায় বেচাবিক্রি হতো শিক্ষা প্রশাসনের নানা পদ। ঘুস-দুর্নীতি ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতার অপব্যবহার করার সুযোগে চাঁদপুরে প্রায়ই চলে আসতেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি থেকে শুরু করে শিক্ষা বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। শিক্ষা বিভাগের এসব কর্তাদের তদবির জায়েজ করতে শিক্ষামন্ত্রীর দিনের কর্মসূচিতে তাদের নিয়ে যেতেন। সমাবেশে তাদেরকে দিয়ে নিজের এবং আওয়ামী লীগের গুনকির্তন শোনাতেন। নীরিহ জনগন বাধ্যহয়ে তা হজম করতো।


শিক্ষা খাতে ঘুস-দুর্নীতির বিষয় দীপু মনির ভাই টিপু ছাড়াও স্থানীয়ভাবে দেখতেন চাঁদপুর পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার। এ বাণিজ্যকে পাকাপোক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করে রতন কুমার মজুমদারকে পুনঃপুনঃ পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ চলমান রাখতেন। একই সাথে রতন কুমার মজুমদারকে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের নাম সংশোধন কমিটির সদস্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ন কমিটির সদস্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি কল্যান ট্রাস্টের সদস্য ও এনসিটিবির তথ্যজ্ঞ হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। যদিও সর্বশেষ মহিবুল হাসান নওফেল শিক্ষামন্ত্রী হয়েই ওই পরিপত্রটি বাতিল করে দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু না হয়েও অঘোষিতভাবে দীপু মনির ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু ও রতন কুমার মজুমদার মিলে সব বদলি, নিয়োগসহ মন্ত্রণালয়ের নানা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তদবির-বাণিজ্যের জন্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মশিউর রহমান অন্তত অর্ধশতবার চাঁদপুরে দীপু মনি ও রতন মজুমদারের বাসায় আসেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনেও বিশাল ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন এ দুজন। এদের ভয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা তটস্থ থাকতেন বলে জানান ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক স্কুল ও কলেজশিক্ষক।

মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ পর্যন্ত তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হওয়ার সুযোগ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের জন্য দুই কোটি এবং কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য তিনি ৫০ লাখ টাকা ঘুস নিতেন, এমন অভিযোগ এখন সংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে। এছাড়া শিক্ষা প্রশাসনে প্রতিটি বদলিতে তার ভাই টিপুর হাতে ছিল পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকায় বেচাবিক্রি হতো শিক্ষা প্রশাসনের নানা পদ। তার সময়ে শিক্ষা খাতে ঘুস-দুর্নীতি ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’।

হয়রানির স্বীকার একাধিক শিক্ষক জানান, রাজধানী কলাবাগান ও বনানীতে ছায়া অফিসের মাধ্যমে দীপু মনির মন্ত্রণালয়ের অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করত তার ভাই টিপুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের এমপিওভূক্তি নিয়ন্ত্রন করতো। দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে তার ভাই টিপুর মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের এক বিশাল রাজত্ব কায়েম করেন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল দীপু মনির ভাই টিপুর হাতে। এ খাতে সব ঠিকাদারকে ৫ শতাংশ কমিশন দিয়ে কাজ নিতে হতো। দীপু মনি ও তার ভাই টিপুর হাত থেকে রক্ষা পায়নি চাঁদপুরে দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত আল-আমিন একাডেমি নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের শ্রেষ্ঠ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবকিছু তছনছ করে তার ভাই নিজের লোক বসান।

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুধু জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯কোটি টাকা দুর্নীতির পাঁয়তারা করেন দীপু মনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেন টিপু ও তার নিকট আত্মীয়রা। তারা ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জায়গা ঠিক করে নিজেদের নামে দলিল করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে সেসব জমিই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করে এবং জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে। সেখান থেকে ৩৫৯ কোটি অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস। তিনি চাঁদপুরে দীপু মনির ভাইসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর জমি দখলের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য আলোচিত ছিলেন। টিপুসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ভুয়া দলিলের মাধ্যমে চাঁদপুরের হাইমচরে ৪৮ একরের বেশি খাস জমির দখল নেওয়ার প্রতিবাদ জানানোর ৪৮ ঘণ্টা পর তাকে নেত্রকোনায় বদলি করা হয়। পরে সরকার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সেই জায়গায় ওই বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়টি বাতিল করে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, নোট-গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও সারা দেশে দেদার বিক্রি হচ্ছে এসব বই। মুখে নোট-গাইডের বিরোধিতা করলেও দীপু মনি নোট-গাইড বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন এক প্রকাশনীর মালিক। সেই প্রকাশনীর মালিকের বাড়িও চাঁদপুর সদরে।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status