মানিকগঞ্জে যমুনার ভাঙ্গনে বিলন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি
শাহজাহান বিশ্বাস মানিকগঞ্জ থেকে
প্রকাশ: Saturday, 6 July, 2024, 6:36 PM
মানিকগঞ্জে যমুনার ভাঙ্গনে বিলন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি
চলতি বছর বর্ষার শুরু থেকেই শিবালয়ের যমুনার পাড় এলাকায়সহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে তেওতা ইউনিয়নের আলোকদিয়া,মধ্যনগর,ত্রিশুন্ডি ও চর বৈষ্টমীর কয়েকশ পরিবার নদী ভাংগনের কবলে তাদের ভিটে-মাটি সর্বস্থ হারিয়েছেন। একই কারণে চরম হুমকির মুখে পড়েছেন তেওতা ইউনিয়নের গাঙধাইল এলাকার মানুষ। এরা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছেন। ইতিমধ্যে ওই এলাকার নদী পাড়ের বেশ কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি বাড়া এবং কমার সময় ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। আগে থেকে জিও ব্যাগ ফেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এসব এলাকার কিছু অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। নদী ভাঙ্গন রোধে ভুক্তভোগী গ্রাম ও চরাঞ্চলবাসীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। গত কয়েকদিন সরেজমিনে উক্ত নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের গাঙধাইল গ্রামের নদী পারের বাড়ি-ঘর এবং ফসলি জমি বিগত বর্ষা থেকেই তীব্র নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে। গত বর্ষায় গ্রামের নদীর পার এলাকায় বিশাল পাড়ালের (খাড়া ঢাল) সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে আলোকদিয়া চরাঞ্চলেও নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এতে এসব এলাকার লোকজন এখন অনেকটা অতংকের মধ্যে রয়েছেন।এবার বর্ষা শুরুর প্রথম হতেই নদী ভাঙ্গনের শুরু হয়েছে এবং দিন যতই যাচ্ছে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা ততই বাড়ছে। ভুক্তভোগীরা নিজ উদ্যোগে বাঁশ ও বন দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছেন। কিন্তু এতে তেমন সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তারা জানিয়েছেন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে , শুস্ক মৌসুমে নদীর পার এলাকায় ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা এবং ভাঙ্গন কবলিত এলাকার অদুরে পশ্চিমে ও উত্তরে নদীর মাঝে চর পরায় পানির স্রোতে এ গ্রামের নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে বহুগুন বেশী। ইতিমধ্যে স্থানীয় অনেকেই ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন। এদিকে আলোদিয়া চর এলাকাতেও তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ এলাকা লোকজন ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিেেচ্ছ।ফসলি জমি যাচ্ছে নদী গর্ভে। এখান একটি হাই স্কুল গতবার নদী গর্ভে চলে যায়। নবনির্মিত মুজিব কেল্লাও ভাঙ্গনের মুখে। এই চরে ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় হুমকির মুখে। দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গাঙধাইল গ্রামের আনোয়ার মাতব্বর বলেন, নদী ভাঙ্গনের কারণে উক্ত এলাকার লোকজন এখন চরম আতংকের মধ্যে বসবাস করছেন। এসব ভাঙ্গন কবলিত নদী পাড় এলাকায় নদী শাসন করে বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করলে হয়তো নদী ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে পূর্ব পুরুষের ভিটাবাড়ি, জায়গা জমি সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন। শুস্ক মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটার জন্য এরকম ভাঙন শুরু হয়েছে। স্থানীয় এস,এম আব্বাস বলেন, প্রতিবছরই বর্ষায় বাড়া-কমার সময় এ নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়। এটি জিও ব্যাগ ফেলে রোধ করা সম্ভব। আর ব্যারি বাধের কথা শুধু শুনেই যাচ্ছি। এর কোন বাস্তব রুপ দেখছিনা। একই গ্রামের রাহুল বলেন, নদীর মাঝে চর পড়ার কারণে পানির স্রােত পাড় এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আমাদের এ গ্রামটিতে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাড়ি-ঘর,পাকা কবর ও আবাদী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে গাঙধাইল গ্রাম ও এর আশপাশের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনাগুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। মানিকগঞ্জ-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এস,এম জাহিদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন অতি দ্রুত এই ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, শিবালয়ের তেওতা ইউনিয়নের নদী ভাঙন তীরবর্তি এলাকায় অতি শিগ্রই কাজ শুরু হবে।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ইতিমধ্যে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি উদ্বোর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।