ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ৫ অক্টোবর ২০২৪ ২০ আশ্বিন ১৪৩১
ফেসবুকের ২০–এ কী পেল বিশ্ব
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Monday, 5 February, 2024, 10:04 AM

ফেসবুকের ২০–এ কী পেল বিশ্ব

ফেসবুকের ২০–এ কী পেল বিশ্ব

বর্তমান সময়ের কোটি কোটি মানুষের দিন শুরু হয় বালিশের পাশে রাখা স্মার্টফোনে সার্ফ করতে করতে। আরও ভালো করে বললে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সার্ফ করে। খবর হোক, আর বন্ধু বা প্রিয়জনের হালহকিকত জানতেই হোক, সামাজিক মাধ্যম এখনকার সময়ের এক বড় বাস্তবতা। এর শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে দুই দশক আগে। ঠিক ধরেছেন আজ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকের জন্মদিন। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করা এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এই দীর্ঘ সময়ে চিরচেনা বাস্তবতার অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। তার দেখানো পথে মঞ্চে হাজির হয়ে সোশ্যাল মিডিয়াকেও অনেকটা বদলে দিয়েছে নতুন নতুন সব প্ল্যাটফর্ম। এ দীর্ঘপরিক্রমায় এই প্রশ্ন তোলাই যায় যে, ফেসবুকের এই ২০ বছরে আদতে কী পেল বিশ্ব?

আজকের তরুণদের কাছে সামাজিক মাধ্যম এক বিকল্পরহিত স্থান। দুই দশক আগে এই স্থানটি হয়তো ছিল কোনো খেলার মাঠ, আড্ডা বা এমনতর কিছু। এখনো এসব আছে। কিন্তু এসব স্থানে উপস্থিত তরুণদের আচরণ গেছে বদলে। কোনো রেস্তোরাঁয় এখন হল্লা করে খেতে যাওয়া বা কোনো পাহাড় বা সাগরসৈকতে বেড়াতে যাওয়া এখন অনেকটাই অর্থহীন হয়ে পড়েছে, যদি সেসব স্থানের ছবিসম্বলিত ‘চেক–ইন’ বা সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়া না হয়।

কত নতুনের সাথে যোগ ঘটিয়ে দিল এই সোশ্যাল মিডিয়া! সেলফির কথাই ধরা যাক। কত বিচিত্র ধরনের সেলফির সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে এই প্ল্যাটফর্ম। কত শত বিতর্ক, প্রেম ও সংঘাতের সূচনাবিন্দুতে নিজের নামটি জড়িয়ে নিয়েছে এটি। আজকের এই যে তরুণ জনগোষ্ঠী, এমনকি বয়সীরাও মেতে আছে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে। ‘মিম’ বা এমন হাজারো শব্দের জন্ম ও তাকে জনপ্রিয় করেছে এটি।

সোশ্যাল মিডিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠার সাথে ফেসবুক সমার্থক হয়ে উঠেছে। না সে একমাত্র নয়। আরও আছে এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রাম, টিকটক, লাইকি; আরও কত কী! এর একেকটির চাল–চলন একেক রকম। প্ল্যাটফর্মের ধরন বিচারে সেখানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কেতা আলাদা। ঠিকঠাক জনপ্রিয় হতে পারলে আবার ‘সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার’ তকমার মালিকানা জোটে। এ শুধু স্বীকৃতি নয়। এটি বেশ অর্থকরীও বটে।

সোশ্যাল মিডিয়া সামাজিকীকরণ করেই ছাড়ে না, একে অর্থকরী বানিয়েও ছাড়ে। অর্থাৎ, আপনার দেখা–শোনা বা আগ্রহ–অনাগ্রহ ইত্যাদিকে যতই ‘ব্যক্তিগত’ বলে জাহির করুন না কেন, পুরোটিই সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অতি অবশ্যই অর্থনৈতিক। এরকই সঙ্গে এ হলো এক অনিঃশেষ বিতর্কের ভাণ্ডার। বিতর্ক যত বেশি, মাইলেজও তত বেশি এবং সেই সূত্রে আয়–ইনকামের সম্ভাবনাও তত বেশি।

গত কয়েক বছর ধরেই ফেসবুকের সাথে এই বিতর্ক তকমাটি বেশ আঁটসাটোভাবে জড়িয়ে গেছে। ফলত, শনৈ শনৈ অর্থনৈতিক উন্নতিও হয়েছে। ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নাম ও যশ সম্পর্কে এখন শিশুও জানে। আর বিত্ত ছাড়া তো নাম–যশ আসে না এই ধরায়। জাকারবার্গ গত কয়েক বছর ধরেই বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের কাতারে। এই তো গেল ১ ফেব্রুয়ারি তিনি নিজের প্রতিষ্ঠানের মূল্যমান জানালেন। কত? ১ লাখ ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার! প্রশ্ন উঠতে পারে যে, এ তো মেটার দাম। ঠিক। কিন্তু এ তো জাকারবার্গেরই প্রতিষ্ঠান, যিনি ফেসবুক দিয়ে যাত্রা করে আজ টেক–মোঘল হয়েছেন।

এর আগের দিনই অবশ্য মার্কিন কংগ্রেসে অন্য টেক–সিইওদের সাথে জাকারবার্গের ডাক পড়েছিল মার্কিন সিনেটে। সেখানে তাঁদের আরও একবারের মতো বেশ ভালোভাবে ধুয়ে দিয়েছেন সিনেটররা। কেন? সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত ভূর  তথ্য, সহিংসতা উসকে দেওয়ার মতো ক্ষতিকর কনটেন্ট ছড়ানোর জন্য।

সামাজিক মাধ্যমের ইতি–নেতি নিয়ে হাজারটা কথা বলা গেলেও এ তো অস্বীকারের জো নেই যে, এটি এক নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছিল। পাঠক–দর্শকদের সাথে নিরন্তর যোগাযোগ এবং মত–দ্বিমত জানানোর প্রক্রিয়ায় প্রচলিত গণমাধ্যমের যে খামতি ছিল, তা পুষিয়ে দেওয়ার দাওয়াই হাজির করেই জনপ্রিয় হয় সোশ্যাল মিডিয়া। গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরসমগ্রের সাথে ব্যক্তিগত ক্ষোভ–বিক্ষোভ, ভালো বা মন্দ লাগার প্রকাশের এক অনিঃশেষ উদ্‌গারের রাস্তা খুলে দেয় এটি। অনেকটা নেশাগ্রস্তের মতো মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে নিজেকে প্রকাশে। কিন্তু এই প্রকাশ আবার নানা তর্ক–বিতর্কের রাস্তা খুলে দিতে থাকে, যা কোনো কোনো সময় একেবারে চেনা বাস্তবতার পথকেও রুদ্ধ করতে সচেষ্ট হয়। এরই জেরে তৈরি হয় সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপ–কালচার। কোনোটি বদ্ধ (ক্লোজড), আবার কোনোটি মুক্ত (পাবলিক) গ্রুপ। ফলে নতুন এই বাস্তবতায়ও নানা বর্গ ও উপবর্গ জায়গা করে নিতে থাকে, যার কিছু কিছু আবার পরস্পরের সাথে যুযুধান।

বর্তমানে বিশেষত ফেসবুকে এসব বর্গ–উপবর্গের হাত ধরে প্ল্যাটফর্মটির যে চরিত্র দাঁড়িয়েছে, তাতে সামাজিক মাধ্যমটির পক্ষে আর মুক্ত বাতায়ন হিসেবে নিজেকে দাবি করার সুযোগ কমে গেছে। মুক্তমতের প্রচার ও প্রসারের যে অভিধা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমের জনপ্রিয়তা, তাতে এসে লেগেছে ভুল শুধু নয় উদ্দেশ্যমূলক ভুয়া তথ্য প্রচারের কলঙ্ক। ফলে সামাজিক মাধ্যম এই সময়ে এসে অনেকটাই বিশ্বস্ততা হারিয়ে বসেছে। হ্যাঁ, মানুষ এখনো এতে বুঁদ হয়ে আছে। কিন্তু একইসঙ্গে মানুষ এ বিষয়েও সচেতন হচ্ছে যে, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে হলে সংবাদমাধ্যমেই চোখ রাখতে হবে। এ সচেতনতা সামাজিক মাধ্যমের মালিকবর্গকেও কিছুটা হলেও সতর্ক করেছে বৈকি। তারা এখন তথ্যের গায়ে নানা ট্যাগ বসিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন পোস্ট সরিয়েও নিচ্ছে। এ ঝাড়াই–বাছাইয়ে আবার খুবই জরুরি কিছু খবরাখবরও ছেঁটে ফেলছে তারা। এলগরিদমের মারপ্যাঁচে ফেলে বিশেষ স্বার্থের বিপরীতে যায়, এমন কনটেন্ট সরিয়ে ফেলছে। সাম্প্রতিক গাজা বা ইউক্রেন ইস্যু এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ফলে তাদের সতর্কতা মাপা হচ্ছে মূলত পশ্চিমের চাওয়া–পাওয়ার নিরিখে। এই নিরিখটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে।

সব মিলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ডিজিটাল দুনিয়ায় উপস্থিত মানুষের সামাজিকীকরণের যে দাবি এখনো করে যাচ্ছে, তাতে ফাটল ধরেছে আগেই। এবার উঠেছে তার বৈশ্বিক পক্ষপাতের প্রশ্ন। সামাজিকীকরণের দোহাইয়ে হাজির হয়ে আরও বেশি করে মেরুকরণে বাস্তবিক সমাজকে চালিত করার দায় তাকে নিতে হচ্ছে ভালোভাবেই। মানুষ এখনো নিজের নার্সিসিস্ট মনোভাব ও সহজে জনপ্রিয় হওয়ার পথ খুঁজতে এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা আর কতদিন চলবে, তা নিয়ে রয়েছে ঘোর সংশয়। বিষয়টি নির্ভর করছে পুরোপুরিই এই প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজেকে নবায়নের মুন্সিয়ানার ওপর।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status