ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
রোববার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয় বংশোদ্ভূতসহ ৯০ লাখ মানুষ
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Saturday, 13 December, 2025, 2:23 PM

যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয় বংশোদ্ভূতসহ ৯০ লাখ মানুষ

যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয় বংশোদ্ভূতসহ ৯০ লাখ মানুষ

যুক্তরাজ্যে দেশটির কর্তৃপক্ষের নাগরিকত্ব বাতিলের ‘চরম ও গোপন’ ক্ষমতা লাখো মুসলিম নাগরিককে গুরুতর ঝুঁকিতে ফেলছে। এ ক্ষমতার ফলে বহু মানুষের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হতে পারে। একটি নতুন প্রতিবেদনে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের দুই স্বনামধন্য মানবাধিকার ও নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রানিমিড ট্রাস্ট এবং রিপ্রিভ গত বৃহস্পতিবার এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে প্রায় ৯ মিলিয়ন (৯০ লাখ) মানুষ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতায় আইনগতভাবেই নাগরিকত্ব হারাতে পারেন।

অধিকারকর্মীরা বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে পারিবারিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে, এমন নাগরিকদের ওপর অসমভাবে প্রভাব ফেলছে। একই সঙ্গে তা ঝুঁকিতে ফেলছে তাঁদের।

দুটি প্রতিষ্ঠানই সতর্ক করে বলেছে, বর্তমান ‘নাগরিকত্ব বাতিলের ব্যবস্থা’ এখন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি পদ্ধতিগত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি ক্যারিবীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের উদাহরণ হিসেবে পরিচিত ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি’র সঙ্গে তুলনা করা যায়।

বর্তমান আইনে কোনো ব্রিটিশ নাগরিকের নাগরিকত্ব বাতিল করা যেতে পারে, যদি সরকার মনে করে যে তিনি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য। এমনকি তিনি সেই দেশে কখনো বসবাস না করে থাকলেও বা নিজেকে সে দেশের নাগরিক বলে মনে না করলেও এ সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, এমন ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ এসব দেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

অধিকারকর্মীদের মতে, এর ফলে নাগরিকত্বের একটি বর্ণভিত্তিক স্তরবিন্যাস তৈরি হয়েছে। এতে মুসলিমদের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার শর্তসাপেক্ষ হয়ে পড়ছে, যা শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

রিপ্রিভের মায়া ফোয়া মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধার জন্য আগের সরকার মানব পাচারের শিকার ব্রিটিশ নাগরিকদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়েছিল। আর বর্তমান সরকার এ চরম ও গোপন ক্ষমতা আরও বাড়িয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে ৯০ লাখ মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে পারেন, তাঁদের জন্য এটি (এ চরম ও গোপন ক্ষমতা) বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে যদি পুরোপুরি কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকার সামনে ক্ষমতায় আসে।’

রানিমিড ট্রাস্টের পরিচালক শাবনা বেগমও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যথেচ্ছ কর্তৃত্ব ব্রিটেনের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে অসমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

শাবনা বেগম মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ‘উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী আইনগুলোর মতোই এখানে কার্যকর কোনো নজরদারি ব্যবস্থা নেই, যা এ ক্ষমতার ব্যাপক অপব্যবহার ঠেকাতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, নাগরিকত্ব কোনো সুযোগ নয়, এটি একটি অধিকার। অথচ একের পর এক সরকার নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে দ্বিস্তরের নীতি চালু করছে। ফলে বিপজ্জনক একটি নজির তৈরি হচ্ছে, যেন কারও ‘ভালো’ বা ‘খারাপ’ আচরণের ওপর নির্ভর করেই নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে তাঁর পরিবার এ দেশে কত প্রজন্ম ধরে বসবাস করছে, তা কোনো ব্যাপার নয়।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই ঝুঁকিতে

রিপ্রিভ ও রানিমিড ট্রাস্টের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর পাঁচজনের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি মাত্র ২০ জনে ১ জন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রায় ৯ লাখ ৮৪ হাজার, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ৬ লাখ ৭৯ হাজার, বাংলাদেশিসহ ঝুঁকিতে থাকা ৩৩ লাখ এশীয় ব্রিটিশ সবচেয়ে বেশি সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে আছেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রায় ৯ লাখ ৮৪ হাজার, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ৬ লাখ ৭৯ হাজার, বাংলাদেশিসহ ঝুঁকিতে থাকা ৩৩ লাখ এশীয় ব্রিটিশ সবচেয়ে বেশি সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে আছেন। তবে বাস্তবে যাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মুসলিম।
তবে বাস্তবে যাঁদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই দক্ষিণ এশীয়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মুসলিম।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অশ্বেতাঙ্গ মানুষ নাগরিকত্ব হারানোর ১২ গুণ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হলো শামিমা বেগমের। যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া এই কিশোরীর নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় এই দাবি করে যে তিনি নাকি বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ সরকার সে দাবি অস্বীকার করেছে। শামিমা কিশোর বয়সে আইএসে যোগ দিতে যুক্তরাজ্য ছেড়েছিলেন। পরে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয় যুক্তরাজ্য।

এদিকে এ প্রতিবেদন এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন কনজারভেটিভ ও রিফর্ম ইউকে দলের রাজনীতিকেরা আরও কঠোর ভাষায় কথা বলছেন। দুই দলই এমন পরিকল্পনার কথা বলছে, যাতে যুক্তরাজ্যে আইনিভাবে বসবাসকারী লাখো মানুষকে দেশ ছাড়া করা হতে পারে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status