|
শাহবাগে আড়াই ঘণ্টা অবরোধ শিক্ষকদের
প্রজ্ঞাপন না হলে যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা আজ
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() প্রজ্ঞাপন না হলে যমুনার উদ্দেশে পদযাত্রা আজ গতকাল দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ওই এলাকাসহ আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। পরে অবরোধ শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী। পাশাপাশি সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ব ঘোষিত কর্মবিরতি চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি। এর আগে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অভিমুখে রওনা হন। তবে তাদের শাহবাগ থানার সামনে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় স্লোগান দিয়ে পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। শিক্ষকরা ‘২০ পার্সেন্ট, বেতন নিয়ে টালবাহানা চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, আমরা এর আগে একাধিকবার আলোচনা করেছি। একটা প্রতিনিধি দল আসছিল। আলোচনার জন্য লোকজনকে পাঠিয়ে শিক্ষকদের দুর্ভোগ বাড়ানো ছাড়া আর কোনো ফল আসবে না। আমাদের কাছে স্পষ্ট– মন্ত্রণালয় আলোচনা নয়, বরং সংঘর্ষ বাধানোর জন্য নস্যাৎকারীদের শাহবাগে পাঠিয়ে বানচালের ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষক হয়ে জনদুর্ভোগ করতে পারি না। কিন্তু দেয়ালে পিঠ ঠেকায় আমরা বাধ্য হয়েছি। আমরা দুর্ভোগের কারণে দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রজ্ঞাপন জারি না হলে আমরা ঠিক বৃহস্পতিবার ১২টায় লাখো শিক্ষক নিয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা পালন করব। আমাদের তিনটি দাবির ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন না হলে আমাদের লাশ বাড়িতে যাবে। সদস্য সচিব আরও বলেন, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দাখিল শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষা। কোনো শিক্ষক টেস্ট পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন না। সারাদেশে লাগাতার কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। প্রজ্ঞাপন না হলে আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাব না। প্রয়োজনে আমরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পুষিয়ে দেব। এদিকে বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগে শিক্ষকদের অবরোধস্থলে এসে তোপের মুখে পড়েন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি এবং এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। এ সময় তাদের উদ্দেশ করে ‘ভুয়া, ভুয়া, দালাল’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। তোপের মুখে পড়ে মঞ্জু বলেন, আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পক্ষ থেকে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। আমরা আপনাদের চূড়ান্ত কথা তাদের কাছে জানাতে চাই। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলতে থাকেন, ‘২০ পার্সেন্ট চূড়ান্ত, আর কীসের কথা।’ তারা ‘২০ পার্সেন্ট, ২০ পার্সেন্ট’– স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষক প্রতিনিধি মাইকে বলেন, আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদরা এসেছেন। তবে আমরা একাধিকবার শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বসেছি। আমাদের তিন দফা দাবি মেনে নিতে হবে। পরে মাইক হাতে জোনায়েদ সাকি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবস্থা কী জানতে হবে। সরকারের দাবি কী শুনবেন, সরকারের বাস্তবতা কী সেটা জানবেন। সরকারের প্রস্তাব তো শুনতে হবে। গত কয়েক দিন থেকে তিন দফা দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার তারা শহীদ মিনারে অবস্থান করে শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আলোচনায় ডাকতে পারেন শিক্ষা উপদেষ্টা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সংগঠনগুলোর নেতাদের আলোচনায় ডাকতে পারেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সিআর আবরার। গতকাল তিনি তাঁর অফিসে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া ও অতিরিক্ত মহাসচিব মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সেখানে উপদেষ্টা বলেন, সামনের মাসে স্কুল শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা। এ সময় আন্দোলন তাদের পড়াশোনার ক্ষতির কারণ হবে। সরকার শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিকভাবে পূরণের চেষ্টা করছে। সূত্র জানায়, আজ এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হবে। এরপর দিনের কোনো একসময় বেসরকারি শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন উপদেষ্টা। সভায় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট, মাদ্রাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদাররের্ছীন এবং জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত আদর্শ শিক্ষক পরিষদকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। শিক্ষকরা যে কারণে রাজপথে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের ব্যানারে রোববার থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল তারা চতুর্থ দিনের মতো শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তবে ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
