ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ৬ অক্টোবর ২০২৫ ২১ আশ্বিন ১৪৩২
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন
রফিক মাহমুদ, উখিয়া
প্রকাশ: Wednesday, 1 October, 2025, 12:32 PM

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং হিন্দু শরণার্থী ক্যাম্পে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে মহাষষ্ঠীর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পূজামণ্ডপে আনুষ্ঠানিকভাবে পূজা শুরু হয়।

সরজমিনে দেখা যায়, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক হিন্দু পরিবারের নারী, পুরুষ ও শিশুরা পূজামণ্ডপে উপস্থিত হয়ে মা দুর্গার আরাধনায় অংশ নিচ্ছেন। শরণার্থী জীবনের নানা দুঃখ-কষ্টের মাঝেও পূজার পরিবেশে এক ধরনের মানসিক শান্তি ও আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন তাঁরা।

ক্যাম্পে বর্তমানে ১২৫ পরিবারের প্রায় ৫৪০ জন সনাতন ধর্মাবলম্বীর জন্য রয়েছে একটি মাত্র উপাসনালয়—‘শক্তি রাধাকৃষ্ণ’ মন্দির। মন্দিরের পুরোহিত বাপ্পা চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিবছরের মতো এবারও নির্বিঘ্নে দুর্গোৎসব পালন করতে পারছি। মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়েই পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পূজা-অর্চনা করতে পারায় আমরা আনন্দিত।”

“আমরা কষ্টে আছি, শরণার্থী জীবনে আছি, কিন্তু দুর্গাপূজা আমাদের মানসিক শান্তি দেয়”— এমন আবেগঘন প্রতিক্রিয়া জানালেন রনজিতা নামের এক নারী পূজারি।

ক্যাম্পের বাসিন্দা নির্জন রোদ্র জানান, “প্রতিবছর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আমাদের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা শেষে স্থানীয়দের মতোই কক্সবাজার সৈকতে মা দুর্গার বিসর্জন দেওয়া হবে।”

মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রতন রোদ্র বলেন, “বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো আমরাও একইভাবে দুর্গোৎসব পালন করি। স্থানীয় প্রশাসন সবসময় সহযোগিতা করে। দশমীতে আমরা স্থানীয়দের সাথে কক্সবাজার সৈকতে বিসর্জনে অংশ নিই।”

মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মধুরাম পাল জানান, “পূজার প্রস্তুতি আমরা অনেক আগেই সম্পন্ন করেছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সার্বিক সহায়তা করছে। শরণার্থী জীবনে থেকেও এ উৎসব আমাদের জন্য আনন্দ ও শক্তির উৎস।”

উখিয়া উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রূপন দেওয়ানজী বলেন, “উপজেলায় ৯টি পূজামণ্ডপ প্রস্তুত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্যও একটি পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “স্থানীয়দের মতো শরণার্থী ক্যাম্পের হিন্দুরাও যেন নির্বিঘ্নে পূজা উদ্‌যাপন করতে পারে সে জন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে।”

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের অতিরিক্ত কমিশনার শামসু দ্দৌহা বলেন, “বাংলাদেশ সরকার সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। শরণার্থী হলেও তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন নিশ্চিত করতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।”

২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসে কয়েকশ হিন্দু পরিবার। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি তাঁদেরও আশ্রয় মেলে কুতুপালং ক্যাম্পে। ২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে এখানে দুর্গোৎসব পালিত হয়ে আসছে।

শরণার্থী জীবনের নানা অনিশ্চয়তার মাঝেও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ঢাক-ঢোলের শব্দ, ভক্তিমূলক সংগীত ও আনন্দ ভাগাভাগির মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ক্যাম্পের হিন্দু সম্প্রদায়। দশমীতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে স্থানীয়দের সাথে একত্রে অনুষ্ঠিত হবে মা দুর্গার বিসর্জন।


পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status