নারায়ণগঞ্জে ২২৪ পূজামণ্ডপে সম্প্রীতির বার্তা, পাশে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রসাশক
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
নারায়ণগঞ্জে ২২৪ পূজামণ্ডপে সম্প্রীতির বার্তা, পাশে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রসাশক নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আজ বলেছেন, শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমা যেদিন থেকে তৈরি শুরু হয়েছে সেদিন থেকে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত প্রতিটি মণ্ডপ মনিটরিংয়ের আওতায় রাখতে হবে। পূজা উদযাপনের সাথে জড়িত পূজা উদযাপন কমিটি, পুলিশ, আনসার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যে উদ্দেশ্যে এই আয়োজন করছেন এবং যারা যে উদ্দেশ্যে আপনাদের আয়োজনে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের উদ্দেশ্য যেন সফল হয়। তিনি আরো বলেন, যারা ধর্মীয় আচার এই আয়োজনে অংশ নেবেন, তারা যেন নির্বিঘ্নে তা করতে পারেন। আপনারা সুন্দর আয়োজন করলেন কিন্তু যদি দেখা গেলো পুজা মণ্ডপের সামনে অনেক ভিড় আছে, তাহলে যারা আসবেন তাদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে। আপনারা কষ্ট করে আয়োজন করছেন, আর যারা আসছেন তারাও এক বছর আগে থেকেই চিন্তা করেছেন যে মণ্ডপে গিয়ে প্রার্থনা করবেন। তারা একটা আশা ও উৎসাহ নিয়ে আসেন। সেই আশা ও উৎসাহ যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে। আমরা চাই উৎসবমুখর পরিবেশ। বিশ্বের কাছে আমরা সেটা ফুটিয়ে তুলতে চাই। যত নেতিবাচক প্রচারণা আসবে, আমরা ততই শক্তিশালী হব। আমাদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন ততই দৃঢ় হবে। আমরা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরব আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বসবাস করছি। আমরা বিশ্ববাসীকে বলব—তোমরা দেখে যাও আমরা কীভাবে সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করছি। আমরা এটা বিশ্ববাসীর কাছে দেখাতে চাই। জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক আপনাদের পাশে আছি। ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন, আমি নিজে আড়াইহাজার উপজেলায় একাধিক পূজার প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখতে গিয়েছি। জেলার পুলিশ সুপার মহোদয়, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গিয়েছেন, আনসার ও পুলিশের কর্মকর্তারা গিয়েছেন। তারা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। সামনেও যতটুকু সম্ভব আমরা পূজা উদযাপনের সার্বক্ষণিক তদারকি করব। এরপরও যদি কোনো সমস্যা থাকে, রাস্তায় কোনো অসুবিধা থাকে, আমাদের জানাবেন। আমাদের কন্ট্রোল রুমের নাম্বার দেওয়া আছে। জানালে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি হবে না বলেও তিনি হিন্দু সম্প্রদায়কে আশ্বাস দেন। জেলা প্রশাসক বলেন, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবিসহ সব বাহিনী একযোগে দায়িত্ব পালন করবে এবং প্রতিটি পূজামণ্ডপ কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় থাকবে। আমরা সকলে মিলে সুন্দরভাবে সাম্প্রদায়িক বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে, সকল কালিমামুক্ত থেকে এই দুর্গাপূজা উদযাপন করতে চাই এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাই। এর আগে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জেলা পরিষদের উদ্যোগে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের ২২৪টি পূজামণ্ডপের প্রত্যেকটিতে আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শংকর কুমার দে বলেন, পূজার আগেই মণ্ডপ পরিদর্শন করে কোনো ত্রুটি আছে কিনা তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার যে নির্দেশনা জেলা প্রশাসক দিয়েছেন, এজন্য আমরা সবাই তার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য সচিব কার্তিক ঘোষ বলেন, পূজার সময়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য অনেক কুচক্রী মহল এখনো সক্রিয় রয়েছে। তাদের বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরাও জেলার পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করব। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক অভয় কুমার রায় বলেন, আমরা সবাই যেন ভালো কাজের পাশে থাকি। প্রতিটি মণ্ডপ সিসিটিভির আওতায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ জেলা প্রশাসক সমস্ত পূজা উদযাপন কমিটির সবাইকে নিয়ে যে মহতী আয়োজন করেছেন, এজন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা সবাই জানেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম একজন মানবিক জেলা প্রশাসক। তিনি রাজবাড়ীতে থাকাকালে অনেক ভালো কাজ করেছেন। রাজবাড়ী জেলায় তার মানবিক কর্মকাণ্ড বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর থেকেও তিনি অনেক ভালো কাজ করেছেন। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ পদ সাহা, সহ-সভাপতি উত্তম কুমার সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুশীল দাস, নারায়ণগঞ্জ মহানগরের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্যফ্রন্টের সদস্য সচিব খোকন সাহাসহ ২২৪টি পূজামণ্ডপের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের বক্তব্যে এই মহতী আয়োজনের জন্য এবং আইন-শৃঙ্খলাসহ যাবতীয় বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়ায় জেলা প্রশাসকের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |