ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২ আশ্বিন ১৪৩২
পলাতক আসামি ও লুটের অস্ত্রে বাড়ছে আতঙ্ক
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Saturday, 27 September, 2025, 10:22 AM

পলাতক আসামি ও লুটের অস্ত্রে বাড়ছে আতঙ্ক

পলাতক আসামি ও লুটের অস্ত্রে বাড়ছে আতঙ্ক

ফাঁসির আসামিসহ পলাতক ৭৪০ জন
শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ কারামুক্ত চার শতাধিক
থানা ও কারাগারের লুট হওয়া ১,৩৭৬টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২,৬৫,১৩৪ গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি


মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার জামালপুর গ্রামে মেঘনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয় গত ২২ আগস্ট। এর দুই দিন পরই ২৫ আগস্ট ওই ক্যাম্পে হামলা চালায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এ সময় তারা পুলিশের দিকে শতাধিক গুলি ও ককটেল ছোড়ে। এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে তিনজনকে দুটি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। উদ্ধার করা অস্ত্রের একটি পুলিশের বলে শনাক্ত হয়েছে, যেটি থানা লুটের কারণে সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গিয়েছিল। র‍্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, উদ্ধার করা একটি অস্ত্র পুলিশের কাছ থেকে লুট হওয়া। সেটির সিরিয়াল নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছিল, যাতে শনাক্ত না হয়।

শুধু মুন্সিগঞ্জের ওই ফাঁড়ি নয়, লুট হওয়া অস্ত্র দিয়ে দেশজুড়ে পুলিশের ওপর হামলা, খুন, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এসব ঘটনা। বিশেষ করে পুলিশের ওপর হামলা, কারাগার ও থানার লুট হওয়া বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে ব্যর্থতা, শত শত সাজাপ্রাপ্ত আসামি পলাতক থাকা এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার চার শতাধিক আসামি কারামুক্ত হওয়াকে ঘিরে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার ও থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদর দপ্তর ও কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় কারাগার ও থানাগুলো থেকে লুট হওয়া ১ হাজার ৩৭৬টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২ লাখ ৬৫ হাজার ১৩৪ গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার হয়নি।

কারা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত পর্যায়ে ২ হাজার ২৪৭ জন বন্দী কারাগার থেকে পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে এখনো ৭৪০ জন পলাতক। এদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, উগ্রবাদী (জঙ্গি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি), সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলার আসামি, মাদক কারবারিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসামি রয়েছেন।

২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ‘হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি)’ সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের নবাবী মোড় থেকে গ্রেপ্তার হন মো. ফয়জুর রহমান (৫৫)। প্রায় সাত মাস জেলে থাকার পর গত বছরের ৬ আগস্ট তিনি জামিনে কারামুক্ত হন। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ‘হিযবুত তাহ্‌রীর’ মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়ে প্রচার-প্রচারণামূলক পোস্টার লাগানোর চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন মো. আনোয়ার হোসেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তিনিও জামিনে মুক্ত হন বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কারাগারে থাকা এমন অনেকেই জামিন পেয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের আগস্ট থেকে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ৪২৬ জন আসামি জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারামুক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে, ১১৭ জন। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ১০১ জন, খুলনা বিভাগে ৮১ জন, রংপুর বিভাগে ৬৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৭ জন, সিলেট বিভাগে ৬ জন ও বরিশাল বিভাগে ১ জন আসামি জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন পেয়েছেন।

থানা ও কারাগার থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ কোথায় গেছে, কারা ব্যবহার করছে, তার স্পষ্ট তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে। নির্বাচন সামনে রেখে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ অপরাধীদের হাতে থাকায় অস্বস্তিতে রয়েছে সরকার। ফলে লুট হওয়া অস্ত্রের তথ্য দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারসহ কারাগার থেকে পলাতক আসামি ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) শাহাদাত হোসাইন  গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ। আর কারাগার থেকে পলাতক আসামি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত অনেক আসামিকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচনের আগেই বাকিদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি ও বিশেষ অভিযান চলছে।’

পলাতক সন্ত্রাসীসহ অপরাধীদের সক্রিয়তা আর লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদের সন্ধান না থাকায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। রাজনৈতিক মহলেও বাড়ছে উদ্বেগ। নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

অপরাধ বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগমুহূর্তে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্রের সরব উপস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিশেষ করে যেসব অস্ত্র রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণে থাকার কথা, সেগুলো অপরাধীদের হাতে গেলে, তা শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, গণতন্ত্রের জন্যও হুমকি। অবিলম্বে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে হারানো অস্ত্র-গুলি উদ্ধারে অভিযান জোরদার করতে হবে। না হলে নির্বাচনী পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।’

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status