চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা
মোঃএমরান হোসেন, কমলনগর
প্রকাশ: Sunday, 10 November, 2024, 8:15 PM
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকেই কমলনগর উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা মামলা হামলার ভয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।এসব চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা নাগরিক সেবায় সম্পৃক্ত হলেও কার্যত সেবা প্রদানে টানাপোড়ন বিরাজমান।কারণ উপজেলা প্রশাসনে লোকবল সংকট,তাই প্রায় কর্মকর্তাকে বেশ কয়েক দপ্তরের কাজ সামাল দিতে হয়।ক্ষেত্র বিশেষে নিজ উপজেলা ছাড়াও ভিন্ন উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাই ইউপির ধারাবাহিক নাগরিক সেবা সমূহ প্রদান,একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে অপরদিকে বিড়ম্বনায় আর দুভোর্গের শিকার হচ্ছেন সেবা প্রার্থীরা।
ভুক্তভোগী চরকাদিরা ইউনিয়নের জন্মনিবন্ধন সেবা প্রার্থী আবুল বাশার।তিনি জানালেন,নিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করেছি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রে।সেখান থেকে ফাইল নিয়ে পাঠানো হলো উপজেলা পরিষদে।এই নিয়ে বারকয়েক আসা-যাওয়া, কারণ আমাদের ইউনিয়নের নিবন্ধনকারী কর্মকর্তা দুই উপজেলায় অফিস করেন।কাজেই আসলেই পাওয়া যাবে এমন ভরসা নাই।এমনই দুভোর্গের কথা জানালেন নাগরিক সনদ প্রত্যাশী চরফলকনের মিজানুর রহমান, প্রত্যায়ন পত্র প্রত্যাশী হাজিরহাট ইউনিয়নের ইউসুফ প্রমুখ।
উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা গেল,মৃত্যু এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়াতে চরলরেন্স ও চরকাদিরা ইউপি বিগত ৪-৫ মাস থেকেই শূন্য।খোজ নিয়ে আরও জানা গেল চরফলকন তোরাবগঞ্জ সাহেবেরহাট ও চরমার্টিন ইউনিয়নের চেয়াম্যানরা এলাকায় অবস্থান করলেও মামলা হামলার ভয়ে পরিষদে আসেন না।অন্যদিকে হাজিরহাট ও পাটওয়ারীহাট ইউপির চেয়ারম্যান একেবারেই লাপাত্তা। এ দু'জন (নিজাম উদ্দীন ও এডভোকেট নূরুল আমিন রাজু) উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।একমাত্র চরকালকিনি ইউনিয়নের চেয়াম্যান মাস্টার ছাইফ উল্যাহ নিয়মিত দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
কথা হলো উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফের সাথে।জানালেন,তিনি ২ উপজেলার দাপ্তরিক কার্যক্রম সামলান।নিজ কর্মস্থল কমলনগর ও অতিরিক্ত দায়িত্ব লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা। আরও জানালেন ট্যাগ অফিসার ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করতে হয় সদরের তিয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন ও কমলনগরের চরকাদিরা ইউনিয়নের।এছাড়া কোর্ট থেকে আসা মামলার তদন্ত,ও তদন্ত পূর্বক নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন প্রেরণসহ বহুমুখী কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়।
সাহেবেরহাট ও চরমার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান আবুল খায়ের ও মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানালেন,ইউনিয়ন পরিষদে অফিস করাতো দূরের কথা আমার নিজ বাড়িতে ও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।৫আগস্টের পর থেকে হুমকি-দামকির মধ্যদিয়ে দিন কাটে।
এদিকে বিএনপির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নূরুলহুদা চৌধুরী বলেন চেয়ারম্যানগণ কেন ইউপিতে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন না তা আমি জানিনা। আমাদের দলের পক্ষ থেকে কাউকে হুমকি-দামকি কিংবা বাধা প্রদান করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, ৫আগস্টের পর থেকে বেশ ক'টি ইউপিতে নাগরিক সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়। পরে সেবাকার্যক্রম চলমান রাখার স্বার্থে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে ওই সকল ইউপিতে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে নিবন্ধন ও বিভিন্ন সেবাপণ্য বিতরণ ছাড়া বাকী কাজ গুলো যেমন নাগরিক সনদ প্রত্যায়ন পত্রের কাজ দেখভাল করেন ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যানগণ। তাছাড়া যেসকল চেয়ারম্যান বাড়িতে অবস্থান করছেন তারাও বাড়িতে থেকে নাগরিক সনদ,চারিত্রিক সনদ ও প্রত্যায়ন পত্রে স্বাক্ষর করেন।তবে দুভোর্গ কিছুটা বাড়লেও স্বচ্ছতা আগের চেয়েও প্রশ্নাতীত।