থাকেন ৪৩০ কোটির ফ্ল্যাটে আর জেটটা সেই ১৯৯৪ মডেলের! এইটা মানাইলো না’
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Wednesday, 11 September, 2024, 5:03 PM
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী সরকার পতনের পর থেকেই সামনে আসছে তৎকালীন মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের পাহাড়সম সম্পদের ফিরিস্তি। এই তালিকার শুরুর দিকে থাকা বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সম্পদ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ভাই সোহেল রহমান, ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের সম্পদের পাহাড়।
সম্প্রতি দেশের গণমাধ্যমগুলোতে সালমানপুত্র আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানের লন্ডনের নানা সম্পত্তির ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) শায়ানকে নিয়ে মশকরার সুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামি।
এতে তিনি লেখেন, ‘নাহ বিষয়টা তেমন একটা পছন্দ হইলো না! ভদ্রলোক থাকেন ৪৩০ কোটি টাকা (২৬.৫ মিলিয়ন পাউন্ড) এর ফ্ল্যাটে, ওমানে ম্যারিজ এনিভার্সারি করতে খরচ করেন ১.৫ -২ মিলিয়ন ডলার, সিংগাপুরে দামি সব গাড়ির ফ্লিট মেইনটেইন করেন। আর প্রাইভেট জেটটা সেই ১৯৯৪ মডেলের বোম্বার্ডিয়ার ৬০১-৩ আর?
এইটা মানাইলো না! দুনিয়াব্যাপি সম্পদ (চুরি বাটপারি আর শেয়ার মার্কেটে মাইনষ্যের মাথায় বাড়ি দিয়া) আপনারা মেইনটেইন করবেন গালফ স্ট্রিম জি-৭০০, সেইটা না কইরা ২ মিলিয়ন ডলারের বোম্বার্ডিয়ার ৬০১-৩ আর, ধুৎ একদমই মানাইলো না!
যাইহোক T7-SFR রেজিস্ট্রেশনের এই ব্যক্তিগত বিমানটির মালিক সালমান এফ রহমান পুত্র শায়ান ফজলুর রহমান। বিমানটি তার বেশ পছন্দের। সে কারণেই তার ৪০০ কোটি টাকার বাড়িতে লাখ'খানেক টাকা খরচ করে একটি পেইন্টিং ও কমিশন করিয়েছেন, যেখানে তার প্রাইভেট জেটের রেজিস্ট্রেশনসহ ছোট একটা ছবিও আঁকা রয়েছে।’
সম্প্রতি দেশের গণমাধ্যমগুলোতে রাজনীতির ‘দরবেশ’ খ্যাত সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের সম্পদের নানা তথ্য উঠে আসে। এসব প্রতিবেদন বলছে, সালমান এফ রহমান ও তার ভাই সোহেল রহমানের ছেলের যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের সবচাইতে অভিজাত এলাকায় ৮৪৬ কোটি টাকায় ৬টি ফ্ল্যাট কিনেছেন। সবচাইতে মূল্যবান ফ্ল্যাটের দাম ২৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন পাউন্ড বা ৪১৬ কোটি টাকা, সর্বনিম্নটির মূল্য ১ দশমিক ২ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১৯ কোটি টাকা। সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান—দুজনই ব্রিটিশ নাগরিক।
গত ৬ সেপ্টেম্বর বাংলা আউটলুকে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, বাকিংহাম প্যালেসের খুব কাছের সবচেয়ে দামি এলাকার একটি হলো লন্ডনের এক গ্রোসভেনর স্কয়ার এলাকা। এই এক গ্রোসভেনরে স্কয়ারেই বিশ্বের অতি ধনীদের অতি বিলাসবহুল একটি আবাসিক ভবন অবস্থিত।
২০২২ সালের ৭ মার্চ এই ঐতিহাসিক আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ৪১৬ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় (২৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড) বিক্রি হয়। এই ভবনটিতে ২৪ ঘণ্টা পাঁচ তারকা হোটেলের সুযোগ-সুবিধা এবং দূতাবাসস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।
আর এর ক্রেতা হলেন ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে নিবন্ধিত ওয়ান গ্রোসভেনর স্কয়ার নামের একটি কোম্পানি। যার সুবিধাভোগী হলেন সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান। সবচেয়ে বড় কথা, এই অ্যাপার্টমেন্টই লন্ডনে শায়ানের একমাত্র স্থাবর সম্পত্তি নয়। লন্ডনে তার আরও সম্পত্তি আছে।
এই এক গ্রোসভেনর স্কয়ার থেকে মাত্র ৩৫০ মিটারেরও কম দূরত্বে ১৭ গ্রোসভেনর স্কয়ারে ১৭শ শতকের আরও একটি ঐতিহাসিক বাড়ি আছে। যেটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে রূপান্তর করা হয়েছে।
২০১০ সালের ২৫ জুন এই ঐতিহাসিক ভবনের ষষ্ট তলার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ৭২ কোটি ১৩ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি টাকায় (৬ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ডে) ক্রিকলউড বেঞ্চার নামের একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়। এই ক্রিকলউড বেঞ্চারও ওই আইল্যান্ডের বাসিন্দার নামে নিবন্ধিত কোম্পানি। যার সুবিধাভোগী ৪২ বছর বয়সী শায়ান।
ক্রিকলউড ভেঞ্চার নিবন্ধনে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেই একই ঠিকানা তিনটি ট্রাস্টে ব্যবহৃত হয়েছিল, যাদের নাম প্যান্ডোরা পেপার্সে (অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বিদেশে নিয়ে লুকানোর এবং কর ফাঁকির গোপন জগত নিয়ে অনুসন্ধানী এক রিপোর্ট) এসেছিল।
লন্ডনে শায়ানের আরও একটি বাড়ি আছে। আর সেটি লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিনের অভিজাত পাড়ায় অবস্থিত একটি সেমি-ডিটাচড বাড়ি। এই বাড়িটি ২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি ১৮ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকায় (১.২ মিলিয়ন পাউন্ড) কেনা হয়। আর বাড়িটির মালিকানায় রয়েছে লেডিবার্ড প্রোপার্টি। ক্রিকলউড ভেঞ্চার ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপের যে ব্যক্তির ঠিকানায় নিবন্ধিত, সেই একই ঠিকানায় এই লেডিবার্ড প্রোপার্টিও নিবন্ধিত। আর এর সুবিধাভোগীও শায়ান। এই বাড়িটিতেই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোটবোন শেখ রেহানা বিনা ভাড়ায় থাকেন বলে ২০২২ সালের শুরুর দিকে সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়।