কেন নাচ-গান, মারপিট আর কাল নাগিনীর বিষে ভরপুর ছিল চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের ভাষা?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
বাংলাদেশের ছবিতে অবশ্য ট্যাগলাইনের ব্যবহার কম দেখতে পাওয়া যায়। একাধিক বাক্যে একটি বক্তব্য উপস্থাপনের চেষ্টা বরং এখানে বেশি। সারা পৃথিবীর সব বাণিজ্যিকধারার ছবির বিজ্ঞাপনের ভাষা একই। উদ্দেশ্যে যেহেতু ফারাক নেই, তাই ভিন্ন হওয়ার কথাও নয়। 'এই প্রথম', 'অবাক করা', 'শিহরণ জাগানো', 'দুঃসাহসিক', 'অবিশ্বাস্য', 'বিস্ময়কর' ইত্যাদি শব্দে উত্তেজনাপূর্ণ থাকে বিজ্ঞাপনের ভাষা। চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, 'যেহেতু দর্শক আকর্ষণ করাই উদ্দেশ্য, তাই শব্দগুলো হয় লারজার দেন লাইফ, যেমনটা হয় এর গল্প বা চরিত্রের ক্ষেত্রেও।' কথাপ্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলেন তিনি। 'নায়ক ওমর সানি একটি ছবিতে খলনায়কের চরিত্র করলেন। ততদিনে তিনি বাজার হারিয়েছেন। প্রযোজকের ইচ্ছা, পোস্টারে তাকে ছোট করে এক কোণে জায়গা দেওয়া। আমি বিষয়টিকে উলটো দিক থেকে ভাবলাম। পোস্টারে তার একটি ফুল সাইজ ছবি দিয়ে বড় করে লিখে দিলাম: নায়ক ওমর সানি এবার হাজির হচ্ছেন খলনায়ক হয়ে। আর এতেই বাজিমাত করা গিয়েছিল।' নাচে-গানে ভরপুর, মেগাস্টার, ইন্দ্রজাল, মায়ার খেলা, বোম্বাইয়া মাইরপিট শব্দগুলোর ব্যবহার কখন থেকে? অনুপম হায়াৎ জানান, চলচ্চিত্র যখন টকি বা সবাক হয়ে উঠল, তখন থেকেই নানান অলংকারে একে সাজানো শুরু হয়ে গেল। ছবির ধরন, নায়কের ইমেজ, দর্শকের সাম্প্রতিক চাহিদা বা নায়িকার সৌন্দর্যকে পুঁজি করে নির্বাচন করা হতো বিজ্ঞাপনের ভাষা। "যেমন নসিব হিট হওয়ার পর উজ্জ্বল মেগাস্টার তকমা পেলেন, তিনি একাই একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠলেন। তারপর থেকে তার উসিলাসহ সব ছবিতেই লেখা হতো 'মেগাস্টার উজ্জ্বল অভিনীত'।" বোম্বাইয়া মারপিট কথাটা লেখা হয়েছিল সোহেল রানা আসার পর থেকে। কারণ তিনি মারপিটের গতানুগতিক ধারাটিকে বদলে দিয়ে নতুনত্ব এনেছিলেন। বিকেডি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বললেন, সামাজিক ছবি সবসময়ই ভালো ব্যবসা করেছে। শাবানা যে ছবিতে থাকতেন, সে ছবিতে দর্শকের অভাব হতো না। "তার অভিনীত একটি ছবির বিজ্ঞাপনে লিখেছিলাম, 'হলে রুমাল না নিয়ে যাবেন না।' এতে দর্শক বুঝে ফেলেছিল, এ ছবি হৃদয়ে দাগ কাটবে।" বিজ্ঞাপনে নতুনত্ব আনার চেষ্টাও থাকত। "একবার নায়িকার মুখ দিয়ে সরাসরি বলিয়েছিলাম: 'দাঁড়াও, কথা আছে। আমি তোমাদেরই ঘরের মেয়ে, কিন্তু মাতব্বর আমাকে ঘরে থাকতে দিলো না। তারপরও তোমরা চুপ করে থাকবে?' একটি বিজ্ঞাপনে লিখেছিলাম, 'আপনার ঘরেও আছে এটিএম শামসুজ্জামান, সাবধান থাকবেন।'" বলেন বিকেডি। চলচ্চিত্র বিজ্ঞাপনের রকম ছিল বহু। কিছু বিজ্ঞাপনে দেখা যেত, নায়ক-নায়িকা বা বিশিষ্ট ব্যক্তি নির্দিষ্ট ছবিটি দেখার আহ্বান জানাচ্ছেন এবং গ্যারান্টি দিচ্ছেন পয়সা বিফলে যাবে না। কিছু বিজ্ঞাপন ব্যতিক্রমী চমক দিত গণমানুষের সংগ্রাম, ফুটবল বিশ্বকাপ বা নারীর অধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বক্তব্য তৈরি করে। উপমহাদেশে প্রথম ছবি দেখানো হয় বোম্বাইয়ের ওয়াটসন হোটেলে। তারিখটা ছিল ১৮৯৬ সালের ৭ জুলাই। ছবি প্রদর্শনের স্থান, সময় ও টিকিটের হার জানিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় যে বিজ্ঞাপন ছাপা হয় তা ছিল এমন: 'পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য! বায়স্কোপ! আসুন। দেখুন! যাহা কেউ কল্পনাও করেন নাই তাহাই সম্ভব হইয়াছে। ছবির মানুষ, জীবজন্তু, জীবন্ত প্রাণীর ন্যায় হাঁটিয়া, ছুটিয়া চলিয়া বেড়াইতেছে।' বাংলা থ্রিলার চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ কে? এ থেকে বোঝা যায়, সূচনালগ্ন থেকেই চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের ভাষা ছিল উত্তেজক ও চমক সৃষ্টিকারী। পরবর্তীকালে এ ধারাবাহিকতা বজায় ছিল, এখনো আছে। হলিউডে বেশি কথা বলার চল নেই, কয়েক শব্দের একটি ট্যাগলাইনে বলা হয় ছবিটিতে কী ধরনের বিনোদন আছে। আর তা বলা হয় এমন আকর্ষণীয়ভাবে যে, দর্শক না দেখা পর্যন্ত আফসোস করতে থাকেন। ১৯৪৪ সালে প্যারামাউন্টের ব্যানারে বিলি ওয়াইল্ডার নির্মাণ করেন ডাবল ইনডেমনিটি। লোভ, বিশ্বাসঘাতকতা ও খুন নিয়ে ছবির গল্প। ছবিটির ট্যাগলাইন: যে কাণ্ড তাদের পরিচয়ের কারণ সেটি ছিল হত্যাকাণ্ড [ফ্রম দ্য মোমেন্ট দে মেট ইট ওয়াজ মার্ডার]। ১৯৬০ সালে নির্মিত দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন ছবিটির গল্পে গরীব কৃষকেরা সাতজন বন্দুকবাজকে ভাড়া করে ডাকাতদের হাত থেকে তাদের নিজেদের গ্রাম বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এর ট্যাগলাইন হলো: তারা মাত্র সাতজন, কিন্তু লড়াই করে ৭০০ জনের সমান [দে অয়্যার সেভেন - অ্যান্ড দে ফট লাইক সেভেন হান্ড্রেড!]। ১৯৭৫ সালে স্টিভেন স্পিলবার্গ নির্মাণ করেছিলেন জস। সমুদ্র সৈকতে একটি হাঙর এমন তাণ্ডব চালায় যা দেখে শিউরে উঠেছেন দর্শক কিন্তু দেখা থামাননি। ছবিটি সে সময়ে দারুণ আলোড়ন তুলেছিল। ছবিটির একটি ট্যাগলাইন ছিল, তুমি আর কখনোই পানিতে নামতে চাইবে না [ইউ'ল নেভার গো ইন দ্য ওয়াটার অ্যাগেইন!]। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া প্রথম সুপারম্যান ছবির ট্যাগলাইন ছিল, আপনার বিশ্বাস হবেই যে মানুষ উড়তে পারে [ইউ'ল বিলিভ আ ম্যান ক্যান ফ্লাই]। ট্যাগলাইনে চমক তৈরিতে পিছিয়ে নেই বলিউডের ছবিও, বরং অনেকক্ষেত্রে এগিয়ে। যেমন ইমরান হাশমী অভিনীত জান্নাত ২ ছবির ট্যাগলাইনে বলা হচ্ছে, নরকের মাঝখানেই সে স্বর্গ খুঁজে পেয়েছে। অর্জুন রামপাল অভিনীত ছবি চক্রব্যুহ-এর ট্যাগলাইন, যে যুদ্ধ থেকে তুমি পালাতে পারবে না। জিসম ২ ছবির ট্যাগলাইন, তাকে ভালোবাসা মানেই মৃত্যু। বাংলাদেশের ছবিতে অবশ্য ট্যাগলাইনের ব্যবহার কম দেখতে পাওয়া যায়। একাধিক বাক্যে একটি বক্তব্য উপস্থাপনের চেষ্টা বরং এখানে বেশি। দিতি অভিনীত নারী আন্দোলন ছবির বিজ্ঞাপনে পরিচালক এনায়েত করিম লিখছেন: নির্যাতিত-নিপীড়িত নারীগণ, সারাদেশে শুরু হোক নারী আন্দোলন। আজ এই স্লোগান একজনের নয়-সারা বাংলার নারী সমাজের। লেডি রংবাজ ছবির বিজ্ঞাপন তৈরি হয়েছে নায়িকা মুনমুনের বক্তব্য দিয়ে: পুরুষশাসিত সমাজের পুরুষ রংবাজদের মাঝে আমি এক লেডি রংবাজ। জেএস প্রোডাকশন্স প্রযোজিত ও পরিবেশিত, গাজী জাহাঙ্গীর পরিচালিত পলাতক আসামী ছবির বিজ্ঞাপনে অভিনয়শিল্পীদের নাম বলে প্রশ্ন করা হচ্ছে: পলাতক আসামী কে? রুবেল? দিতি? হুমায়ুন ফরিদী? শাহনাজ? দিলদার? কে এই পলাতক আসামী? রাজ্জাক অভিনীত বাবা কেন আসামী ছবিতে প্রশ্ন দিয়ে দর্শককে বিচিত্র বাস্তবতার মুখোমুখি করার চেষ্টা রয়েছে: সংসার মানেই স্বামী-স্ত্রী আর সন্তানের মমতার বাঁধন। এ কেমন স্বামী যার হাতে স্ত্রী খুনের রক্ত? এ কেমন সন্তান যে চায় তার বাবার বুকের রক্ত ঝরাতে? কেন আজ বাবা সন্তানের চোখে আসামী? প্রশ্ন আছে কাল নাগিনীর প্রেম ছবির বিজ্ঞাপনেও। তবে গল্প ব্যতিক্রমী হওয়ায় তার প্রশ্নও আলাদ: মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রেম হয় কিন্তু রূপসি নাগিনী চায় মানুষের সঙ্গে প্রেম করতে, কিন্তু সে কি পেরেছে ঘর সংসার করতে? নাগ-পূর্ণিমা ছবির প্রশ্নে অবশ্য রোজিনার সৌন্দর্যকে পুঁজি করা হয়েছিল। তাতে বলা হচ্ছে: লাস্যময়ী রোজিনার নৃত্যের তালে তালে বিষাক্ত কালনাগিনীর গর্জনে পূর্ণিমার চাঁদ কেঁপে উঠছে কেন? দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ফাঁসির আসামী ছবির বিজ্ঞাপনেও আছে প্রশ্ন। কিন্তু এর আবেদন দর্শকের কাছে অনেক বেশি ছিল বলেই মনে হয়। প্রশ্নটি হলো: ওমর সানি এখন ফাঁসির আসামী, মৌসুমী কেনই বা ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করাল ওমর সানীকে? ঝন্টুর ২০ বছর পর ছবির বিজ্ঞাপনেও আছে একটি মর্মস্পর্শী প্রশ্ন। নায়ক আলমগীর প্রশ্ন করছেন, আজ ২০ বছর পর প্রমাণিত হলো আমি নির্দোষ, জজ সাহেব আপনি কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন আমার হারানো ২০ বছর? এ প্রসঙ্গে বিকেডি বলছিলেন, 'আমাদের দর্শকেরা ছিলের খুবই সহজ-সরল। যুৎসই একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারলে দর্শককে হলে নিয়ে আসা কঠিন কাজ ছিল না। আলমগীর যে প্রশ্নটি করেছেন সেটি সহস্র দর্শকের নিজেরই প্রশ্ন। বিনা বিচারে বা ভুল বিচারে বছরের পর বছর জেল খাটার অভিজ্ঞতা অনেকের আছে, ভুক্তভোগী পরিবারের সংখ্যাও অনেক। তাই জজ সাহেবের জবাব শোনার আগ্রহ দর্শকের থাকবে ধরেই নেওয়া যায়। পরিচালক-প্রযোজক প্রশ্নটি সামনে এনে বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়েছেন।' নামি অভিনয়শিল্পী এবং পরিচালকের যুগলবন্দিও ছিল বিজ্ঞাপনের বিষয়। উসিলা ছবির বিজ্ঞাপনের বক্তব্য যেমন ছিল: সুপারস্টার পরিচালক মমতাজ আলী এবং নায়কদের নায়ক মেগাস্টার উজ্জ্বলের হ্যান্ডশেকে তৈরি দারুণ, দুর্দান্ত যুগশ্রেষ্ঠ ছবি উসিলা। একইরকম প্রকাশভঙ্গি নায়ক মান্নার মাতৃভূমি ছবির বিজ্ঞাপনেও। 'বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে শোষক, অন্যদিকে শোষিত। নির্যাতিত-নিপীড়িত-বঞ্চিত জনতার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ডায়নামিক পরিচালক নাদিম মাহমুদ অ্যাংরি ইয়ংস্টার হিরো মান্নাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন বিশাল ছবি মাতৃভূমি।' প্রতিবাদী চরিত্র হিসাবে নায়ক মান্না দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, তাই তাকে প্রধান করে সত্যের সংগ্রাম ছবিরও বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছিল: সত্যের সংগ্রাম-এ সুপারস্টার মান্না এগিয়ে আসছে প্রতিবাদী কণ্ঠে বিদ্রোহীর আওয়াজ তুলে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে টর্নেডোর বেগে। গুন্ডা নাম্বার ওয়ান ছবির বিজ্ঞাপন আবার তৈরি করা হয়েছে নায়ক মান্নার সংলাপ ব্যবহার করেই: আমি ঐ আইন মানি না, যে আইন মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না। 'প্রথম' কিছুর উপস্থাপনও হয়েছে বাংলা ছবির বিজ্ঞাপনের বিষয়। শহীদুল ইসলাম খোকনের লড়াকু ছবিতে যেমন বলা হচ্ছে, 'উপমহাদেশে এই প্রথম সহস্রাধিক ক্যারাটিম্যান, শতাধিক সামুদ্রিক ট্রলার, মার্শাল আর্টের ইনস্ট্রুমেন্ট এবং এদেশের ইয়াং ব্লাড সেরা কুশলীদের নিয়ে লড়াকু।' আকবর কবীর পিন্টু তার ওগো বিদেশিনী ছবির বিজ্ঞাপনে লিখেছেন, 'ইস্টম্যান কালারে নির্মিত লন্ডনে চিত্রায়িত বাংলাদেশের প্রথম ছবি ওগো বিদেশিনী।' ইফতেখার আলম পরিচালিত সুপারম্যান ছবির বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, 'বাংলাদেশে এই প্রথম কম্পিউটারের মাধ্যমে ছবির বিশেষ কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়েছে, যা ছোট-বড় সবাইকে অবাক করে দিবে।' কিছু ছবির বিজ্ঞাপনে সব শ্রেণীর দর্শককে আকর্ষণের চেষ্টা ছিল। দেওয়ান নজরুলের ধর্ম আমার মা ছবি সম্পর্কে বলা হচ্ছে: কেউ বলে মায়ের ছবি, কেউ বলে বোনের ছবি, কেউ বলে বধূর ছবি, কেউ বলে টেক্সাস ছবি, কেউ বলে সামাজিক ছবি, কেউ বলে প্রেমের ছবি। কৌতুক অভিনেতা দিলদারকে নায়ক করে আব্দুল্লাহ ছবিটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কিছুকাল আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে খেলার মর্যাদা লাভ করে। এ বিষয়টিকে সামনে এনে ছবির বিজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল" কি মজা!! '৯৯-এ বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলবে। আর আমি খেলব ৯ মে ১৯৯৭ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি প্রেক্ষাগৃহে।' কেমন প্রভাববিস্তারি ছিল বাংলা ছবির বিজ্ঞাপনের ভাষা? অনুপম হায়াৎ বলেন, 'খুব প্রভাবশালী ছিল ওসব বিজ্ঞাপন। অল্প কিছু শব্দ বা বাক্য ছিল লক্ষ্যভেদী। উত্তেজক সব শব্দ দিয়ে তৈরি হতো বিজ্ঞাপনগুলো। আমার অভিজ্ঞতা বলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনদাতারা সফল হয়েছিলেন।' ১৯৮৩ সালে নির্মিত মান-সম্মান ছবির বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'সব শব্দই উত্তেজক — দুর্ধর্ষ মারপিট, ফ্লাইং ড্রাইভ, স্বপ্নমাতাল নাচ, মাতৃত্বের অহংকার এবং সেন্টিমেন্টাল ড্রামা। সুচিন্তিতভাবেই শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। যারা মারপিট পছন্দ করে, যারা নাচে মাতাল হতে চায় কিংবা যারা মাতৃত্বকে বড় করে, দেখে সবার জন্যই রসদ আছে ছবিটিতে।' নিজের ব্যক্তিগত এক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন এ চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ। তখনো তিনি ছাত্র। চৌষট্টি সাল। মুক্তি পেয়েছে সুভাষ দত্তের সুতরাং। কৌতুকাভিনেতা হিসেবে সুভাষ দত্ত ছিলেন সুপরিচিত। সুতরাং দিয়ে তিনি নায়ক হয়ে পর্দায় আসেন। নায়িকা ১২ বছরের মেয়ে কবরী। অনুপম হায়াৎ বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে রূপমহলে ছবিটি দেখতে গিয়েছিলেন, কারণ তাদের বহুদিনের চেনা চার্লি (আদর করে সুভাষ দত্তকে ভক্তরা চার্লি ডাকতেন) নায়ক হয়েছেন। বারো বছর বয়সি একটি মেয়ে কেমন অভিনয় করে সেটি দেখারও আগ্রহ ছিল। ইভিনিং শোতেও টিকিট পাননি, শেষে রাত ৯টার শো দেখে ফিরতে গিয়ে দেখেন গাড়ি নাই। শেষতক এক গৃহস্থের গোয়ালঘরে রাত কাটাতে হয়েছিল সেবার। 'সিনেমার জন্য এমনই ছিল উন্মাদনা। শুধু দরকার পড়ত কিছু ভরপুর টালমাটাল শব্দ। বিজ্ঞাপন সে চাহিদার সবটুকুই পূরণ করতে পেরেছিল বলে মনে হয়,' বলেন অনুপম। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |