গ্যাস সংকটের ছাপ সর্বত্র
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() গ্যাস সংকটের ছাপ সর্বত্র সকালের নাস্তায় নান হাতে নিয়ে অন্যদিনের মত মচমচে ভাব খুঁজে পেলেন না হুমায়ুন কবির। হোটেল বয়ের কাছে অনুযোগ করেও কোনো লাভ হলো না। “আজ এইটা দিয়েই নাস্তা সারেন। তাকায় দেখেন চুলায় গ্যাস নাই; মিনমিন করে জ্বলছে। এরচেয়ে ভালো নানা রুটি আর হবে না,” বলেন হোটেলের এক কর্মচারী। বাসায়ও গ্যাস নেই দুই দিন ধরে। তাই এখানে সেখানে সকাল-দুপুর-রাতের খাবার খেয়েই দিন পার করছেন রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের এই বাসিন্দা। সেখানকার পলাশ বেকারি অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, এই এলাকার পুরোনো একটি হোটেল এটি। লাইনের গ্যাস দিয়েই তাদের চুলা জ্বলে। গত দুইদিন ধরে গ্যাস না পেয়ে বাধ্য হয়ে আজ সিলিন্ডার বসিয়েছেন। হোটেলে মতোই বাসাবাড়ি, শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিএনজি ফিলিং স্টেশনসহ সর্বত্র এখন চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। সরকারি সংস্থা পেট্রোবাংলার গত বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই দিনে ২ হাজার ২৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা গেছে, যদিও চাহিদা ছিল তিন হাজার ৫০০ মিলিয়ন। গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে বঙ্গোপসাগরে দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর থেকেই গ্যাস সংকট বাড়ছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের গ্যাস পাইপলাইন ফুটো হয়ে যায়। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেছে। শুক্রবার সকালে ছিদ্র হওয়া পাইপলাইন মেরামত করা গেলেও এর সুফল পেতে আরও ২৪ ঘণ্টা লাগবে বলে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি- জিটিসিএল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। আর ক্ষতিগ্রস্ত এলএনজি টার্মিনাল ঠিক হয়ে গ্যাস সরবরাহ চালু হতে আরও পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জ্বালানি বিভাগ থেকে জানান হয়েছে। জ্বালানি সচিব নুরুল আলম বলেন, “পাইপলাইনের ছিদ্র মেরামত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এফএসআরইউ মেরামতের পর ফিরে এসেছে। এখন প্লাগ ইনের কাজ চলছে। এরপর আগামী ১৫ তারিখ এখানে একটা এলএনজি কার্গো আসবে। সব মিলিয়ে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে এফএসআরইউ থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।” মধ্যবাড্ডার বৈশাখী স্মরণির বাসিন্দা সানজিদা সুমী বলেন, “তিনদিন ধরে গ্যাস নেই, ভোগান্তিরও কোনো শেষে নেই। নিজেরা হোটেল থেকে কিনে খাচ্ছি। বাচ্চা আর শাশুড়ির জন্য নিকেতন ও বনশ্রীতে আত্মীয়ের বাসা থেকে রান্না করে আনছি।” শুক্রবার ভারী বর্ষণে জীবনযাত্রা অচল হয়ে গেলেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতেও ভিড়ের কমতি ছিল না। এমন ভিড় গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছে। মহাখালীতে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বিল্লাল বলেন, গতকাল কল্যাণপুরে দুই বারের প্রচেষ্টায় ১৮০ টাকার গ্যাস নিতে পেরেছিলেন তিনি। গ্যাস নেওয়ার লাইনে অপেক্ষা করতে করতে চলে গেছে তিন ঘণ্টা। “সারাদিনে এক হাজার টাকার খ্যাপ মারতে পারলাম। জমা খরচও উঠল না। ১১০০ টাকা জমা খরচ বাদ দিলে সিএনজির খরচ গেছে পকেট থেকে। একেবারেই খারাপ অবস্থা,” বলেন তিনি। মহাখালী ইউরেকা ফিলিং স্টেশনের সামনে আরেক সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. জনি বলেন, “বৃহস্পতিবার নীলক্ষেতে দেড় ঘণ্টা দাঁড়ায়া ৮০ টাকার গ্যাস নিতে পারছি। আরেকটা স্টেশনে নিছি ১২০ টাকার গ্যাস। “আগের দিন মিরপুরে একটা স্টেশনে বেলা ১টায় সিরিয়াল দিয়া ২টার দিকে কাছাকাছি গেলাম, হেই সময় কারেন্ট গেছে গা, আইছে আধা ঘণ্টা পনে। প্রত্যেকটা দিন গ্যাসের লাইগ্যা এমন কষ্ট।” গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পকারখানাগুলোর উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বরাদ্দ থাকলেও গত একমাস ধরে দেওয়া হচ্ছে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এতে বিদ্যুতের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের হিসাবে, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন চার হাজার থেকে চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের মধ্যে থাকছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ১১ হাজার মেগাওয়াট থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। গরমের কারণে চাহিদা বেড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াটে উঠলে সেখানে প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। গ্যাসের সংকটের কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে লোডশেডিং। নোয়াখালীর জনতাবাজার এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, দিনে ৪ থেকে ৫ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একেকবার গেলে এক, দেড় ঘণ্টায়ও ফিরছে না।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |