রাত পোহালেই লোকসভা ভোট, নদী-পাহাড় ডিঙিয়ে ভোটারদের কাছে কর্মকর্তারা
নতুন সময় ডেস্ক
|
ভারতের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ শুরু হচ্ছে শুক্রবার। এদিন ভারতের ১৭টি রাজ্য এবং চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ভোট হবে ১০২টি আসনে। এ তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি কেন্দ্র।লোকসভার পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশের ৬০ এবং সিকিমের ৩২টি বিধানসভা আসনের সবক’টিতেই ভোটগ্রহণ হবে এই দফায়। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ। ভোট অনুষ্ঠানের এই শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি তুঙ্গে। ভারতজুড়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তারা সুউচ্চ পহাড়ে চড়ছেন, নদী পাড়ি দিচ্ছেন, সহিংস বিদ্রোহী তৎপরতা প্রবণ এলাকাগুলোর ভেতর দিয়েও গন্তব্যে পৌঁছচ্ছেন তারা। প্রায় ২ মাসব্যাপী ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্থাপন করতে হবে ১০ লাখের বেশি ভোটকেন্দ্র। এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তাকর্মী। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের একটি দুর্গম পাহাড়ি গ্রামে ১৩৯ জন ভোটারের কাছে পৌঁছতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে ছোট একটি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নির্বাচনী কর্মকর্তা ডব্লিউ মনিং বেলগিট। তিনি বলেন, “নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরকে পাহাড়ে উঠতে হবে, নদী পাড়ি নিতে হবে কিংবা হেলকপ্টারে চড়তে হবে। কেউ যাতে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন তার কাজ করছে।” মনিং বেলগিটের দল পাহাড়ের ১২ কিলোমিটার ওপরে ওঠার পর শত শত ধাপ নিচে নেমে একটি নদী পার হয়ে নোংরিয়াত গ্রামে পৌঁছায়। সেখানে একটি স্কুলে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবে তারা। শুক্রবার প্রথম দফায় অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং মেঘালয়ের দু’টি করে আসনে ভোটগ্রহণ হবে। একটি করে আসনে ভোটগ্রহণ হবে ছত্তীসগঢ়, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর, জম্মু ও কাশ্মীর, লক্ষদ্বীপ এবং পুদুচেরিতে। মণিপুরে মোট দু’টি লোকসভা আসন। মণিপুর এবং আউটার মণিপুর। তবে নির্বাচন কমিশন আউটার মণিপুরকে ভাগ করে দু’দফায় ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আউটার মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর এবং চান্দেল জেলার ১৫টি বিধানসভা আসনে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচন কমিশন বলেছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী আয়োজনের চেষ্টা চলছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাওবাদী সহিংসতাপূর্ণ হিমালয় ও মধ্য ভারতীয় নির্বাচনী এলাকা গাদচিরোলি-চিমুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহুসংখ্যক নির্বাচন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। ৮৫০ জন ভোটগ্রহণ কর্মীও সেখানে পাঠানো হচ্ছে। নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে নিরাপত্তায়ও জোর দেওয়া হয়েছে। উত্তরের যে তিন কেন্দ্রে শুক্রবার ভোটগ্রহণ হবে, সেগুলোতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতয়েন রয়েছে। সঙ্গে মোতায়েন রয়েছে প্রচুর সংখ্যক রাজ্য পুলিশও। নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। এই নির্বাচনী ময়দানে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা হচ্ছে- তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএম ও কংগ্রেস। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) হাতে কোচবিহারের ক্ষমতা। তৃণমূল বিজেপি’কে চ্যালেঞ্জ করে উত্তর দখলের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে বিজেপির বিদায়ী সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের প্রতিপক্ষ তৃণমূলের জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া। ফরওয়ার্ড ব্লকের নীতীশ চন্দ্র রায়ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় ছিলেন নিশীথ। বেশকিছু অশান্তির চিত্রও উঠে এসেছে এই কেন্দ্রে। আলিপুরদুয়ার তফসিলি উপজাতি (এসটি)-র জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্র। এই জেলায় চতুর্মুখী লড়াই হবে।লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় উত্তরবঙ্গের অন্য দুটি নির্বাচনী কেন্দ্র - জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার - এর সঙ্গে লড়াইয়ে নামবে। জলপাইগুড়ি ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে একটি। উত্তরবঙ্গে অবস্থিত, এই আসনটি তফসিলি জাতি (এসসি)-র জন্য সংরক্ষিত। ভোটের প্রথম দফায়, বিজেপির বিদায়ী সাংসদ ড. জয়ন্ত কুমার রায়, তৃণমূলের নির্মল চন্দ্র রায় এবং সিপিআইএম-এর প্রার্থী দেবরাজ বর্মনের ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য জয়ের পর উত্তরবঙ্গ বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। রায়গঞ্জ বাদে বিজেপি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টিতে জয়লাভ করেছিল। এবারও বিজেপি আশাবাদী যে, উত্তরের তিনটি আসনেই আবার তারা জিততে চলেছে। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |