|
ডুবন্ত ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া ৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() ডুবন্ত ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া ৬ জনের মরদেহ হস্তান্তর ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বাকিদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রোববার দুপুরের দিকে কক্সবাজার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস লাশগুলো উদ্ধার করলেও তাৎক্ষণিকভাবে কারও পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। কারণ মরদেহগুলো পচে গলে, অর্ধ কঙ্কালে রূপ নিয়েছিল। লাশগুলো উদ্ধারের পর সেগুলো কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। সেখানেই ময়নাতদন্ত করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় পরিচয় শনাক্তের পর ছয়জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরা সবাই কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন। বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। রোববার রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত নিহতদের আত্মীয় স্বজন দাবি করে অনেকে মর্গের সামনে ভিড় করতে থাকেন। তারা লাশগুলোর চেহারা দেখে, আবার অনেকে পরনের পোশাক দেখেই পরিচয় শনাক্তের দাবি করেন। স্বজনরা বলছেন, নিহতরা সবাই জেলে এবং তাদের মধ্যে সাত জনের বাড়ি মহেশখালী উপজেলায় এবং বাকি তিনজন চকরিয়ার বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে ট্রলারের মালিক শামসুল আলম রয়েছেন বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে। গত ৭ই এপ্রিল রাতে শামসুল আলম তার ট্রলারে ১১ জন জেলেকে নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলেও এখনও ফেরেননি। স্থানীয়রা বলছেন উদ্ধার হওয়া ট্রলারটি শামসুল আলমের হতে পারে। ইতোমধ্যে লাশের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই তদন্তে মাঠে নেমেছে সিআইডি এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে এই ট্রলারটি কোথা থেকে এসেছে, এতো মানুষ নিহতের কারণ কী, এর পেছনে কারা জড়িত- এসব বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য তারা দিতে পারেননি। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “কিভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে সেটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। ঢাকা থেকে সিআইডি, পিবিআই-এর বিশেষ দল এসেছে। আমরা ঘাতকদের চিহ্নিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।” পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে এটি পূর্বপরিকল্পিত বা পূর্ব শত্রুতার জেরে হত্যাকাণ্ড হতে পারে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, লাশগুলো ট্রলারের যে খোল থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল সেটির ঢাকনা পেরেক দিয়ে বন্ধ ছিল। তিনজনের হাত-পা দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় ছিল। কয়েকজনের শরীরে জাল প্যাঁচানো ছিল। দুটি লাশের অঙ্গ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। এদিকে লাশের পরিচয়ের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য আসছে পুলিশের কাছে। নিহতদের স্বজন দাবি করা ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছেন যে, নিহত সবাই পেশায় জেলে। গভীর সাগরে জলদস্যুরা তাদেরকে হত্যা করে ট্রলারটি ডুবিয়ে দিতে পারে। আবার স্থানীয়দের দাবি নিহতদের সবাই জলদস্যু। জলদস্যুদের আরেকটি দল কিংবা স্থানীয় জেলেরা এক হয়ে তাদের হত্যা করতে পারে। আবার আরেকটি পক্ষ বলছে মাছ আহরণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জেলেদের দুই গ্রুপের কোন্দলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে পুলিশ বলছে, বিষয়টি তদন্তের একদম প্রাথমিক পর্যায়ে থাকায় এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করার অবস্থায় তারা পৌঁছাননি। সবগুলো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, "আমাদের কাছে নানা রকম তথ্য আসছে। আমরা কোনটাকে নিচ্ছি না, আবার ফেলছিও না। আমরা তদন্ত করে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই প্রকৃত ঘটনা উন্মোচনে কাজ করছি।" তিনি আশা করছেন, দ্রুতই ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে। লাশগুলোর অবস্থা দেখে পুলিশের ধারণা, গভীর সমুদ্রে অন্তত ১৫-২০ দিন আগেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ঈদের দিন ডুবে যাওয়া এই ট্রলারটি আরেকটি মাছ ধরার ট্রলারের সাথে আটকে পড়লে জেলেরা সেটা দড়ি দিয়ে টেনে তুলে উত্তর কুতুবদিয়া উপকূলের দিকে টেনে নিয়ে আসে। কিন্তু ট্রলারটি বালিয়াড়িতে আটকে যাওয়ায় সেটি পুরোপুরি তীরে আনা যায়নি। পানিতে অর্ধ-নিমজ্জিত অবস্থায় ছিল। ট্রলারটির ভেতরে জেলেরা লাশের উপস্থিতি টের পেলে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা নিয়ে রোববার উদ্ধার অভিযানে নামে এবং নৌকার কোল্ড স্টোরেজ থেকে একের পর এক লাশ বের করে আনে। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
