|
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি নায়েক আক্তার হোসেনের মৃত্যু
নতুন সময় প্রতিনিধি
|
![]() নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি নায়েক আক্তার হোসেনের মৃত্যু ৩১ অক্টোবর (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই সন্তান এবং অসংখ্য সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলম বলেন, “নায়েক আক্তার হোসেন দায়িত্ব পালনকালে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। আমরা তাকে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষায় তাঁর এই আত্মত্যাগ জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।” গত ১২ অক্টোবর সকালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্তের ৪০ নম্বর পিলারের কাছাকাছি নিয়মিত টহল দিচ্ছিলেন বিজিবির সদস্যরা। টহলের একপর্যায়ে সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় হঠাৎ একটি ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে নায়েক আক্তার হোসেনের ডান পা সম্পূর্ণ উড়ে যায় এবং বাম পা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সহকর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে রামু সেনানিবাস হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং অবস্থার অবনতি হলে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে টানা ২০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসকরা জানান, পায়ে সংক্রমণ ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছিল। সর্বোচ্চ চিকিৎসা সত্ত্বেও তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তর থেকে প্রায়ই গুলিবর্ষণ, মর্টারশেল ও মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ায় সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে অব্যবহৃত মাইন পড়ে আছে। এই মাইন বিস্ফোরণেই আহত হন নায়েক আক্তার হোসেন। বিজিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দায়িত্ব পালনকালে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা নায়েক আক্তার হোসেনকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে। বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, “দেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনকালে জীবন দিয়েছেন আমাদের এক সাহসী সদস্য। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে আছি।” আক্তার হোসেনের মৃত্যুর খবর পৌঁছালে তার গ্রামের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বলেন, তিনি ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও সাহসী একজন সৈনিক, যিনি সবসময় সীমান্ত রক্ষাকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের মাইন পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে মিয়ানমারের দিক থেকে ছড়িয়ে পড়া পুরনো ও সক্রিয় মাইনগুলো শনাক্ত ও নিষ্ক্রিয় করতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। পরিসংখ্যানে জানা যায় জানুয়ারী ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ১৮ জন আহত হয়েছেন—এর মধ্যে ২০২৩ সালে ৩ জন, ২০২৪ সালে ৩ জন এবং ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১২ জন। গত ১২ অক্টোবর বিজিবির নায়েক আক্তার হোসেন গুরুতর আহত হন এবং ৩১ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এর পর পোয়মুহুরী সীমান্তে মিয়ানমারের এক নাগরিক নিহত হন ও এক বাংলাদেশি ম্রো আহত হন। ২০২৪ সালে টেকনাফের নাফ নদীতে কাঁকড়া আহরণ করতে গিয়ে এক রোহিঙ্গা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে প্রাণ হারান। ---
|
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
