গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার মালেকেরবাড়ি, কলম্বিয়া এলাকায় টিএন্ডজেট গ্রুপের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। শনিবার (৯নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে রিপোর্ট লেখা অবদি রবিবার (১০নভেম্বর) বিকেল সারে ৬টা পর্যন্ত ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা। এতে প্রায় ৩৪ ঘন্টাব্যাপী ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানচলাচল স্থবির হয়ে পড়লে এ মহাসড়কটি অচল হয়ে থাকে।
বেতন পরিশোধ ও অন্য কাখানায় ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্থানান্তর না করার দাবীতে গাজীপুরের চান্দন চৌরাস্তা সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মালেকেরবাড়ি বাসন সড়কের মাঝামাঝি কলম্বিয়া কারখানার সামনের মহাসড়কের উভয় দিকে ২দিন ব্যাপী যানবাহন অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা। টি এন্ডজেড গ্রুপের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের অংশগ্রহণে মহাসড়ক অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু করলে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে শনিবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা গড়ীয়ে রাত পেরিয়ে ভোর হলেও শ্রমিকদের বিক্ষোভে যান চলাচল স্থবির হয়ে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সড়ক ব্যাবহারকারী হাজারো চালক ও যাত্রী সাধারণ। তবুও তাদের বেতন সমস্যার দাবি আদায় না হওয়ায় পালাক্রমে সড়কেই অবস্থান নেয় শ্রমিকরা। এসময় পায়ে হেটেই গন্তব্যে রওয়ানা হন সাধারণ যাত্রীরা। তবে নিরুপায় হয়ে নিরব ভূমিকায় রয়ে গেছেন যানচালকরা। তবে কিছু চালক বিকল্প উপায় হিসেবে বিভিন্ন মহল্লার সড়ক ব্যাবহার করে গন্তব্যে রওনা হন।
শ্রমিক ও কারখানার একাধিক স্টাফরা জানান তিন থেকে পাঁচ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলেন ৩৪ঘন্টা অবরোধ সময় অতিক্রম হতে চল্লেও এখনও কোনও প্রকার সুরাহার আভাস দেয়নি সরকার সংশ্লীষ্ট কিংবা মালিক কর্তৃপক্ষ কেউ। তবে তারা বলেন দু'একদিনের মধ্যে দিবে বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা সেই আশ্বাস মানতে নারাজ।
তারা বলেন আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের বেতন পরিষোধের সমস্যা সমাধান করা না হলে ফের নতুন করে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কোন আশ্বাসেই তারা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিবেন না। এ ঘটনায় ওই এলাকায় প্রায় ৩০টি পোষাক কারখানা সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। জানাগেছে সে কারখানার শ্রমিকরাও এ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
শ্রমিক ও স্টাফরা বলছেন, বকেয়া বেতন যতক্ষণ পর্যন্ত না দেওয়া হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকবে, এসময় আশপাশের সকল কারখানা বন্ধ রেখে তাদের দাবীর সাথে একাত্বতা ঘোষণার আহ্বান জানালে শ্রমিকদের সাড়া পেয়েছেন বলেও জানান টিএন্ডজেড কারখানার শ্রমিকরা। অপ্রিতিকর পরিস্থিতী এড়াতেই স্থানীয় অন্য বেশকিছু কারখানা সাময়িক ছুটিও দিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ।
কারখানার শ্রমিক হোসনেআরা, বিউটি, সালমা, শাহিদা, রুজিনা, রেখা আক্তার ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্টাফ বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে নিয়ে কয়েক দফায় সময় নিয়েও কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন পরিশোধ করেনি। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করা না হবে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ রাখবেন।
বিক্ষোভে ২ দিনব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকায় ২০ কিলোমিটার বিস্তৃত এলাকা জুড়ে দীর্ঘ যানজটের দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে আশপাশের বিভিন্ন জেলাতেও যানজট দেখা দিয়েছে। এতে করে সাধারণ লযাত্রীরা, রোগীবাহি গাড়ী ও শিশুরাও পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হতে দেখা গেছে সাধারণ যাত্রীদেরও। তবে এসব বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে গাজীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন-সহ গাজীপুরের দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তারাও শ্রমিক ও গণমাধ্যমকে বলেন শ্রমিকদের সাথে বিজিএমইএ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কারখানা মালিক কর্তৃপক্ষের আলোচনা চলছে, বর্তমানে মালিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছেন, আলোচনা করে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে টাকার ব্যাবস্থা করছেন মালিক কর্তৃপক্ষ, শীঘ্রই সমাধানের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এসময় শ্রমিকদের কিছু সময়ের জন্যে সড়ক মুক্ত করার প্রস্তাব দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তা প্রত্যাখ্যান করেন শ্রমিকরা।