|
খালেদা জিয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে যেসব সুবিধা পাবেন
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() খালেদা জিয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে যেসব সুবিধা পাবেন সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) আইন, ২০২১-এর ধারা ২ (ক) অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কারা? আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তিরা [অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা] পদাধিকারবলে 'অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির' মর্যাদা পান। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান যখন বাংলাদেশে অবস্থান করেন, তখন তারাও আইনের সংজ্ঞানুযায়ী 'অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' হিসেবে গণ্য হন। এছাড়া সরকার যদি সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারি করে কোনো ব্যক্তিকে 'অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' হিসেবে ঘোষণা করে, তবে তিনিও এই মর্যাদার অন্তর্ভুক্ত হবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই ক্যাটাগরিতেই 'অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যেসব সুবিধা পাবেন আইনের ৮(২) ধারা অনুযায়ী, বাংলাদেশে অবস্থানরত 'অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি'কে দৈহিক নিরাপত্তা প্রদান করা বাহিনীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। ফলে বেগম খালেদা জিয়া এখন থেকে এসএসএফ-এর সরাসরি নিরাপত্তা বেষ্টনীতে থাকবেন। তিনি হাসপাতালে, বাসভবনে বা দেশের যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাকে সার্বক্ষণিক ঘিরে রাখবে এবং তার শারীরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি আইনের ৮(৩) ধারা মোতাবেক, তার নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটাতে পারে—এমন যেকোনো গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও আদান-প্রদান করা বাহিনীর দায়িত্ব। অর্থাৎ, বেগম জিয়ার ওপর কোনো হামলার আশঙ্কা বা নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে কি না, সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সার্বক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ করবে এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আইনের ৮(৪) ধারা, যা নিরাপত্তা বাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছে। এই ধারা অনুযায়ী, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেখানে বসবাস বা অবস্থান করছেন, অথবা যে পথ দিয়ে চলাচল করছেন—সেখানে কারও উপস্থিতি যদি নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর মনে হয়, তবে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। গ্রেপ্তারের সময় কেউ বাধা দিলে বা পালানোর চেষ্টা করলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে পারবেন। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এবং যথাযথ হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে ওই ব্যক্তির ওপর গুলি বর্ষণ বা মৃত্যু হতে পারে এমন বল প্রয়োগ করার আইনগত এখতিয়ারও নিরাপত্তা বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে। এই আইনের আওতায় এসএসএফ এর সদস্যদের কৃত কর্মের জন্য সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনো মামলা করা যায় না। আইনে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশোধন বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১-এর ২-এর বাতিলকৃত দফা (খ) ও (গ) অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরাও 'অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির' মর্যাদা পেতেন। একজন 'অতি মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তির' জন্য বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী বা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের জন্যও আজীবন একই ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এইরূপ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিতে 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী আইন, ২০২১'-এ সংশোধন আনে অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট 'জাতির পিতার পরিবার-সদস্যদের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪'-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। আর ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪' জারি করে সরকার। গেজেট অনুযায়ী, সংশোধিত এই আইন ২০২৪ এর ৮ আগস্ট থেকে কার্যকর ও বৈধতা লাভ করে। প্রেস উইং তখন এক বিবৃতিতে জানায়, বিদ্যমান আইনের আওতায় 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যগণের' নিরাপত্তা প্রদানসংক্রান্ত বিধানগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় কার্যকর করা সম্ভব নয়। তাই এ আইনের কিছু বিধান বিলোপসহ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা বিধানের বিষয়টি সংযোজন করে অধ্যাদেশের খসড়া উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়। |
| পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |
