বরগুনায় ডেঙ্গুর করাল ছায়া: ৩২৯১ আক্রান্ত, মৃত্যু ২৮ জনে আতঙ্কে জনজীবন
নতুন সময় প্রতিনিধি
|
![]() বরগুনায় ডেঙ্গুর করাল ছায়া: ৩২৯১ আক্রান্ত, মৃত্যু ২৮ জনে আতঙ্কে জনজীবন এই সংখ্যা শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি সংখ্যা একটি পরিবারে কান্নার রোল, একটি নিভে যাওয়া মুখ, একটি অসমাপ্ত ভবিষ্যতের গল্প। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন: · বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল: ১৭৪ জন · তালতলী: ১৪ জন · পাথরঘাটা: ১৬ জন · বামনা: ১২ জন · আমতলী: ৫ জন · বেতাগী: ৩ জন উপজেলা ভিত্তিক মোট আক্রান্তের চিত্র (৩২৯১): · বরগুনা সদর: ২৯৩৯ জন · পাথরঘাটা: ১৪১ জন · বামনা: ৯৪ জন · তালতলী: ৪৬ জন · আমতলী: ৩৭ জন · বেতাগী: ৩৪ জন ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা (মোট ২৮ জন): · বরগুনা সদর: ২৪ জন · বেতাগী: ৩ জন · পাথরঘাটা: ১ জন চিকিৎসক বলছেন, “সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে পরিস্থিতি” বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবুল ফাত্তাহ স্পষ্ট ভাষায় বলেন: দিন যত যাচ্ছে, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ততই বাড়ছে। কিছুতেই এটি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়বে।” তিনি আরও বলেন: মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, নইলে ভবিষ্যৎ ভয়াবহ।” ![]() বরগুনায় ডেঙ্গুর করাল ছায়া: ৩২৯১ আক্রান্ত, মৃত্যু ২৮ জনে আতঙ্কে জনজীবন এডিস মশা মূলত একধরনের স্ত্রী মশা, যা মানুষ ও পশুর রক্ত পান করে। তবে অন্যান্য সাধারণ মশার মতো নয়—এই মশা বাহক deadly ভাইরাসগুলোর, যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস এবং ইয়েলো ফিভার। প্রজাতি পরিচিতি: সাধারণত Aedes aegypti ও Aedes albopictus প্রজাতির মশাগুলো এসব রোগ ছড়ায়। এডিস মশা দেখতে তুলনামূলক ছোট, শরীরে সাদা-কালো ডোরাকাটা দাগ থাকে (জেব্রার মতো) কখন কামড়ায়? এডিস মশা সাধারণত ভোর ও দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সক্রিয় থাকে। অন্য মশাদের মতো রাতেই শুধু নয়, দিনেও কামড়ায় এটাই সবচেয়ে বিপজ্জনক বৈশিষ্ট্য। বংশবিস্তার (Breeding): খুবই পরিষ্কার ও স্থির পানিতে ডিম পাড়ে। যেমন: ফুলের টব, ফ্রিজের ট্রে, পুরনো টায়ার, প্লাস্টিক ক্যান, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত পাত্র ইত্যাদি। একটি এডিস মশা একবারে ৫০–১০০টি ডিম পাড়তে পারে এবং তা ৭–১০ দিনের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক মশায় রূপ নেয়। রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা: এই মশা কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে তার শরীরে ভাইরাস ঢোকে এবং ৮–১২ দিনের মধ্যে তা সংক্রামক হয়ে ওঠে। এরপর এই মশা যখন অন্য কাউকে কামড়ায়, তখন তার শরীরেও ভাইরাস প্রবেশ করে এবং সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভয়াবহতা ও মৃত্যুঝুঁকি: ডেঙ্গুতে জ্বর, হাড়ভাঙা ব্যথা, রক্তপাত, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হওয়া ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার’ বা ‘ডেঙ্গু শক সিনড্রোম’ শিশু ও বয়স্কদের জন্য মারাত্মক প্রাণঘাতী। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি: এডিস মশা খুব দ্রুত সংখ্যায় বাড়ে। একটি ডিম কয়েক মাস শুকনো অবস্থায় পড়ে থেকেও পানি পেলেই বেঁচে উঠতে পারে। নগরজীবনের অগোছালো পরিবেশ, ড্রেনেজ সমস্যা, নির্মাণাধীন ভবন সবই এই মশার জন্য স্বর্গরাজ্য। প্রতিরোধই একমাত্র উপায়: মশার জন্মস্থান ধ্বংস করা বাড়ি ও অফিসের চারপাশ পরিষ্কার রাখা জমে থাকা পানি দূর করা ফুলের টব, কুলার, টায়ার নিয়মিত পরিষ্কার করা দিনে ও রাতে মশারি ব্যবহার সরকারি মশক নিধন কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ এডিস মশা কামড় দেয় নিঃশব্দে, কিন্তু রেখে যায় মৃত্যু বা দুর্ভোগের উপাখ্যান। তাকে নির্মূল করতে হলে শুধু ওষুধ নয়, দরকার সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা এবং সম্মিলিত উদ্যোগ। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |