সরকারী বালু চুরি, বাবা ভাইসহ কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
ফাহিম ফরহাদ, গাজীপুর
|
![]() সরকারী বালু চুরি, বাবা ভাইসহ কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা মামলার আসামীরা হলেন, কাপাসিয়া সনমানিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মৃত আবদুর রহমানের ছেলে শাহাদাত হোসেন (৬৫), তার বড় ছেলে সনমানিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনকি সম্পাদক জাহিদ (৩৮) এবং ছোট ছেলে বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা কৃষি পরিষদের নেতা গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-সহকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম (৩৫) এবং একই এলাকার মৃত মিয়ার উদ্দিনের ছেলে সোহরাব (৪৫) ও জাকির (৪৮)। গাজীপুর কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সরকারি চাকরি বিধি লংঘন করে গত সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রচাণা চালিয়েছিলেন। যার বেশ কিছু ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া গেছে। মামলার বাদি অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুন দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চরসনমানিয়া গ্রামের দক্ষিন পাড়া জামাল বেপারীর বাড়ির মসজিদ সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদী খননের সরকারী বালু কতিপয় দুস্কৃতিকারী চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করছেন মর্মে খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্সের সহযোগীতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালান করেন। এ সময় বাদি নিজেও উপস্থিত ছিলেন। মোবাইল কোর্টের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ওইসময় সেখানে বালু কর্তনের সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনা স্থলে বালু কাটার যথেষ্ট আলামত বিদ্যমান রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদী খননের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। নদী খননের কিছু বালু নদীর তীরে না রেখে ঠিকাদারের যোগসাজশে নদীর তীর হতে ৪শ মিটার দূরে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে স্তুপ আকারে রাখা হয়। এ স্তুপকৃত বালি সরকারি সম্পদ। এই স্তুপকৃত বালু জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এর মাধ্যমে নিলাম হওয়ার কথা থাকলেও নিলাম হয়নি। স্থানীয় ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে সাক্ষীরা জানায় চরসনমানিয়া গ্রামের দক্ষিন পাড়া জামাল বেপারীর বাড়ির মসজিদ সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্রনদী খননের সরকারী বালু চুরি করে অন্যত্র বিক্রয় করেছেন। ইতিমধ্যে আসামীগণ ঘটনাস্থল হতে আনুমানিক এক লক্ষ ঘনফুট বালু চুরি করে অন্যত্র বিক্রয় করেছেন যার আনুমানিক বাজার মুল্য ২০ লাখ টাকা। সরেজমিনে চরসনমানিয়া গেলে স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম ওরফে তৌহিদ সরকারি বালু চুরির অপরাধে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী ৩৭৯ ধারায় চুরির মামলা হয়েছে। তার পিতা শাহাদাত হোসেন মাস্টার সনমানিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী দুঃশাসনের নৌকা প্রতিকের অবৈধ চেয়ারম্যান ছিলেন। তার আপন বড় ভাই জাহিদুল ইসলাম সনমানিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ভূমিদস্যু, মাদকসেবী ও মাদককারবারী হিসেবে খ্যাত। ইতোপূর্বে জাহিদুল ইসলামের নামে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকায় জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও মোটা অংকের বিনিময়ে সে ধরাছোয়ার বাহিরে রয়ে গেছে জানান একাধিক সূত্র। তৌহিদুল ইসলাম ২০১৭ সালে উপ-সহকারী কৃষিকর্মকর্তা হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। এ চাকরি হওয়ার জন্য তৎকালীন গাজীপুর-৪, কাপাসিয়ার সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এমপির ডিও লেটার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাসিমের সুপারিশপত্র নিয়ে তার সরকারি চাকরি হয়। চাকরি হওয়ার পর থেকে সে কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নে পদায়নকৃত হয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বলেও জানা গেছে। গত ২০২৩ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপালনসহ বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ভোটারদের'কে নৌকা প্রতিকে ভোট প্রদানের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে বলেও গুঞ্জন রটেছে স্থানীয়দের মাঝে। সপ্তাহে অন্তত চার দিনে ব্লকে উপস্থিত থাকার নিয়ম থাকলেও সে তা মানেন না। কারন সে বাড়িতে গরুর খামার করে লালন পালন করে এবং তার বড় ভাই এর সাথে মাটি কাটার ব্যবসা করে আসছেন। স্থানীয় একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কৃষি বিভাগ/অধিদপ্তর থেকে কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত সবজির বীজ, ধানের বীজ ও সার কৃষকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রযেছে। এছাড়াও ফসলে কীটনাশক ও কীটনাশক দেয়ার মেশিন সে মোক্তারপুর ও কালীগঞ্জের বিভিন্ন দোকানসহ তার নিজ এলাকার শুভাকাঙ্খিদের মধ্যে আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিক্রি করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সে আনুমানিক ২০১২ সালে গাজীপুরের টঙ্গীতে তার সাবেক প্রেমিকার বাসায় আটককৃত হয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হন এবং তখন তার পরিবার অসহায় গরীব মেয়ের পরিবারকে চাপ দিয়ে টাকার বিনিময়ে মেয়েকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করেন। পরে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে সে নরসিংদী জেলার বেলাবো থানার পোড়াদিয়া গ্রামে বিয়ে করেন। বিগত সরকারের সময়ে কর্মক্ষেত্রে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করার চেষ্টা করা হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করা হয়। এবিষয়ে মামলায় অভিযুক্ত গাজীপুর -সহকারী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, বালু বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ওই বালু যখন আনা হয় তখন একটি চুক্তি পত্র করে আনা হয়েছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ পরিচালক (ডিডি) রফিকুল ইসলাম খান বলেন, তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় একটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে বলে শুনেছি তবে থানা বা আদালত থেকে এখনো কোন কিছুই জানানো হয়নি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। কাপাসিয়া থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, সরকারি বালি চুরির ঘটনায় মামলা হয়েছে। এছাড়া আসামী গ্রেফতার এবং বালু উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |