রাজধানীতে দিনভর পেট্রোল-অকটেন সংকট, কারণ কী?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() রাজধানীতে দিনভর পেট্রোল-অকটেন সংকট, কারণ কী? হঠাৎ কেন এই সংকট? পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বলছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাবে তেলবাহী জাহাজ সময়মতো দেশে আসতে না পারায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। তবে কেউ কেউ অভিযোগ করেন, তেলের দাম বাড়ানো হতে পারে- এমন খবরে তেল মজুত করে রেখে সংকট দেখান পাম্প মালিকরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল ও অকটেন নেই। পাম্পে শুধু সাইনবোর্ড ঝুলছে। মানুষ এক পাম্প থেকে আরেক পাম্প ঘুরছেন। কিছু পাম্পে সীমিত পরিমাণে তেল পাওয়া গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে জ্বালানি নিতে পারছেন না। মো. রায়হান নামে এক গ্রাহক বলেন, তেঁজগাও এলাকার কোনো স্টেশনে তেল পেলাম না। বাইকে যতটুকু তেল আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ আজকের দিনটুকু চলবে। রিফিল করতে না পারলে কাল গাড়ি নিয়ে বের হওয়া যাবে না। প্রাইভেট কার নিয়ে বের হয়েছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা আরিফ। তিনি বলেন, গতকালও এক পাম্পে গিয়ে দেখি অকটেন নেই। তারা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছেন। পরে আরেকটি পাম্পে গেলাম। সেখানে বলা হলো, ২ হাজার টাকার বেশি অকটেন নেওয়া যাবে না। এভাবে হুট করে সংকট সৃষ্টির কোনো মানে বুঝলাম না। এদিকে জ্বালানি সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন রাইড শেয়ার চালকরা। মোহাম্মদপুরে কথা হয় রাইডার মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকালে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার পর কয়েকটা স্টেশনে গেলাম, কোথাও তেল পাইনি। পরে আসাদগেটে গিয়ে একটা পাম্পে তেল পেয়েছি। শুনলাম এমন সংকট নাকি কয়েকদিন চলবে। এভাবে তেল কিনতে না পারলে তো আমরা বিপদে পড়ে যাবো। দেশে হঠাৎ কেন এই জ্বালানি সংকট দেশের জ্বালানি তেলের চাহিদার ৯২ শতাংশ পূরণ হয় আমদানি করা তেলের মাধ্যমে। যার অধিকাংশই আনা হয় সৌদি আরবভিত্তিক সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি (সৌদি আরামকো) এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (অ্যাডনক) কাছ থেকে। এছাড়া আটটি দেশের কাছ থেকে জিটুজি ও আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে তেল আমদানি করা হয়। বহির্বিশ্ব থেকে দেশে জ্বালানি তেল আমদানির অন্যতম একটি রুট হলো হরমুজ প্রণালি। সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশ এই প্রণালি ব্যবহার করে তেল রপ্তানি করে থাকে। গত ১৩ জুন ইসরায়েল কর্তৃক ইরানে হামলা হওয়ার পর দেশটি হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুঁশিয়ারি দেয়। পরে ২২ জুন ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধের অনুমোদন প্রদান করে। এর ফলে হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করে যাতায়াত করা দুটি তেলবাহী জাহাজের ফিরে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক-লরি মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে তেলবাহী জাহাজ সময়মতো দেশে আসতে পারেনি। তাই তেল সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তবে এটা সাময়িক সমস্যা, দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে। সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রতন গণমাধ্যমকে বলেন, যুদ্ধের ফলে সাপ্লাই কিছুটা কম থাকায় স্টেশনগুলো কেবল অকটেনে রেশনিং করছে। অন্যান্য তেলে কোনো সমস্যা নেই। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যা বলছে বিপিসি দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা মেটাতে ১৪টি ট্যাংকারের মাধ্যমে বছরজুড়ে তেল আমদানি করা হয়। এবার ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে রেগুলার তেলবাহী জাহাজ সময়মতো আসতে না পারায় তেলের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে বলে স্বীকার করেছে বিপিসি। তবে, এটির সঙ্গে পাম্পে তেল না পাওয়ার সম্পর্ক নেই বলে দাবি করছে সংস্থাটি। তাদের বক্তব্য, পাম্পে যথেষ্ট তেল থাকার কথা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের পরিচালক (অপারেশন ও বিপণন) ড. এ কে এম আজাদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মূলত ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে আমাদের রেগুলার যে পারসেল এসে থাকে, সেটা ব্যাহত হয়েছে। তবে ৩০ জুন একটি পারসেল আসবে, ফলে এ সমস্যা আর থাকবে না। তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলছেন তেলের দাম বাড়বে বলে পাম্পমালিকরা তেল মজুত করে রেখেছেন। আমরাও এমন খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের টিম রেডি আছে। যেখানেই এমন খবর পাচ্ছি সেখানে লোক পাঠানো হচ্ছে। পাম্পমালিকরা যারা ভাবছেন এবারে তেলের দাম অনেক বাড়বে তারা ভুল ভাবছেন। এবার আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম খুব একটা বাড়েনি। তাই দেশের বাজারেও তেলের দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই (ইতোমধ্যে দাম না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার)। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |