ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
মনোদৈহিক চাপের প্রভাবে এখন ছোটখাটো ইস্যুতেও রেগে যাচ্ছেন, জড়িয়ে পড়ছেন সংঘাতে
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকে ভয়াবহ ট্রমায়
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Sunday, 4 May, 2025, 9:54 AM
সর্বশেষ আপডেট: Sunday, 4 May, 2025, 9:58 AM

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকে ভয়াবহ ট্রমায়

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকে ভয়াবহ ট্রমায়

জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকে ভয়ংকর ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। আন্দোলনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল শিক্ষার্থীরা। সে সময় সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মারামারি, গুলি ছোড়া, লাশ ও রক্ত দেখেছে। অনেক শিক্ষার্থী হাত-পা, চোখ হারিয়েছে এবং অঙ্গহানি ঘটেছে। ফলে সেখান থেকে এক ধরনের সহিংস আচরণে উদ্বুদ্ধ হয়েছে শিক্ষার্থীরা। মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক চাপ, তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এখন তারা ছোটখাটো ইস্যুতেও রেগে যাচ্ছে, এক অপরের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেগুলোতে দেখা যায় শিক্ষককে ঘিরে ধরে পদত্যাগের জন্য জোর করছে শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো জায়গায় শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে।

দেশে মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৭৮৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬০ শিক্ষার্থী এবং ৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৯ জন শিক্ষক আছেন। মাধ্যমিক স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়-প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে অনিশ্চয়তা, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা। গত আট মাসে অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষকসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।


শিক্ষাবিদরা বলেন, অস্থির এই প্রবণতা জাতির ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি। তরুণদের মধ্যে সহনশীলতা, যুক্তিবাদ ও নিয়মতান্ত্রিকতার পরিবর্তে অহেতুক আন্দোলনের সংস্কৃতি গড়ে উঠছে; যা আগামী দিনে আরও বড় সামাজিক সংকট তৈরি করতে পারে।

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি. আর আবরার বলেছেন, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছেন, সেই কারণে স্বাভাবিক আচরণ সবার কাছ থেকে আশা করবেন, সেটা ঠিক নয়। সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা এমন একটা জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, আমাদের এই অস্থিরতাটা ক্রমেই দিনদিন বিভিন্নভাবে শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে টেনশন দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। একই সঙ্গে ছাত্রদেরও বুঝতে হবে। তাদের দাবি-দাওয়া থাকতে পারে, মতদ্বৈত থাকতে পারে কিন্তু সেটা সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করতে হবে। একই সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে।            


সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক প্রধান শিক্ষককে মারধর করে অপদস্থ করার ঘটনা জাতীয়ভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কুয়েটসহ দেশের বিভিন্ন প্রকৌশল ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যর্থতা ও অনিয়ম নিয়ে নিয়মিত আন্দোলন করে আসছেন। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মিছিল-সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া ছেড়ে মারধর-ভাঙচুরসহ নানা বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা রোধে শিক্ষা-সংশ্লিষ্টবিহীন মিছিল ও সমাবেশে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তীব্র মানসিক চাপে :বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, সামাজিক আচরণ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ জুলাই অভ্যুত্থান। এ আন্দোলনের কারণে আমরা এখন মুক্ত। জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও তীব্র মানসিক চাপ রয়েছে। এটি নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের সামাজিক আচরণ পরিবর্তন (এসবিসি) বিষয়ক গবেষণা রিপোজিটরি শেয়ারিং প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ইউজিসি-ইউনেস্কোর যৌথ উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আন্দোলনে অংশ নেওয়া ১০ হাজার শিক্ষার্থী :জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রকল্পের আওতায় দেশের পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও ইউনেস্কো যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা ইউজিসি সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা ভয়ংকর ট্রমার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ অবস্থা থেকে বের করে আনতে হলে কাউন্সিলিং সেবা অতীব জরুরি। শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে ভালো রাখা এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করা গেলে এ সংকট দূর করা সম্ভব হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহজাবিন হক বলেন, জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের মনোদৈহিক চাপ তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রংপুরে আবু সাঈদের সঙ্গে যারা মিছিল ও সমাবেশ এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অনেকের মধ্যে মেন্টাল ডিজঅর্ডার (মানসিক ভারসাম্যহীন) হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের ট্রমা থেরাপিসহ যথাযথ ট্রিটমেন্ট সহায়তা দিতে হবে সম্মিলিত উদ্যোগে।

শিক্ষার্থীদের আচরণে পরিবর্তন :সংশ্লিষ্টরা বলেন, জুলাই আন্দোলন ঘিরে বিক্ষোভ ও সংঘাত দমনের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ও ‘মাত্রাতিরিক্ত’ বলপ্রয়োগের গুরুতর ও বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী অপর এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে। ফলে স্কুল থেকে তার পরিবারকে সতর্ক করা হয়েছে। যে শিক্ষার্থী মেরেছে, সেই শিক্ষার্থীর মা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে কিছুটা চঞ্চল ছিল ঠিকই, কিন্তু মারামারি করার নালিশ কখনো আসেনি। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার আচরণে এত বেশি পরিবর্তন এসেছে যা ভাবনার বাইরে। চাইলেও অনেক সময় ওকে ঘরে রাখতে পারি না। বাসায় ওর ভাইকেও মারধর করে, অল্পতেই রেগে যায়। আমরা তাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত।’

তার মতো অসংখ্য শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্দোলনের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারো কারো আচরণে ভয়, আতঙ্ক, দুঃখবোধ, অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা, অশান্তি, চমকে ওঠা, বাকরুদ্ধ হওয়া, বিচ্ছিন্নতাবোধ, অসহায়ত্ববোধ, অপরাধবোধ, ক্লান্তিবোধ, রাগ প্রকাশ পাচ্ছে।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status