ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫ ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
জাল টানেন, ঝুঁকি নেন, তবু ‘জেলে’ নন উপকূলের নারী মৎস্যজীবীরা
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Thursday, 1 May, 2025, 11:38 AM

জাল টানেন, ঝুঁকি নেন, তবু ‘জেলে’ নন উপকূলের নারী মৎস্যজীবীরা

জাল টানেন, ঝুঁকি নেন, তবু ‘জেলে’ নন উপকূলের নারী মৎস্যজীবীরা

আজ পহেলা মে, আন্তর্জাতিক মে দিবস। শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার প্রতীকী দিন। এই দিনে শহরের মিছিল, স্লোগান আর ব্যানারের আড়ালে হারিয়ে যায় এক অদৃশ্য শ্রমজীবী শ্রেণি—উপকূল অঞ্চলের নারী মৎস্যজীবীরা। যাদের শ্রম আছে, ঘাম আছে, জীবন ঝুঁকি রয়েছে তবুও তাদের নেই কোনো সরকারি পরিচয়, নেই কোনো স্বীকৃতি।



পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার আগুনমুখা নদীর পাড়ে ভোরে দেখা মেলে ৫৭ বছর বয়সী নারী জেলে মনোয়ারা বেগমের। সূর্য ওঠার আগেই একটি ছোট কাঠের নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে পড়েন তিনি। একাই জাল টেনে মাছ ধরেন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে।

 
তার সহকর্মী পুরুষ জেলেরা পেয়েছেন সরকারি নিবন্ধন কার্ড, ভিজিএফ চাল, প্রণোদনা ও দুর্যোগকালীন সহায়তা। অথচ মনোয়ারা বেগম আজও বঞ্চিত। শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে তাকে ‘জেলে’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।
 
তিনি বলেন, ‘এত বছর মাছ মারলাম, জাল বাইলাম, কিন্তু এখনো জ্যাইল্লা কাড (জেলে কার্ড) পাইলাম না। কাডের লাইগা গ্যালে কয়, মহিলা মানুষ কিরে জ্যাইল্লা। পুরুষেরা পাইছে, আমাগো দেয় না। কাড নাই দেইখা কিছুই পামু না।’
 

 
গলাচিপার মানতা সম্প্রদায়ের নারী গোলাভানু বেগম বলেন, ‘জন্ম হইছে নৌকায়, জীবনও চলে নদীতে। মাছ ধরি বাপ-দাদার পেশায়। কিন্তু সরকার কয় আমরা মাইয়া মানুষ, জেলে না! এই দুঃখ কই রাখি?’
 
রাঙ্গাবালী উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরমোন্তাজে দেখা যায়, শত শত নারী বসে মাছ কাটছেন, চিংড়ি বাছাই করছেন, শুটকি তৈরি করছেন। তাদেরই একজন নুরনাহার বলেন, ‘রোজ ৭টা হইতে ৪টা পর্যন্ত কাম করি। মহাজন ৩০০-৪০০ টাকা দেয়। তাও পুরুষদের চাইতে কম। জেলে কার্ড না থাকায় সরকারি কোনো সহায়তাও পাই না।’
 
 
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৭ লাখ ৬৪ হাজার। তবে এর মধ্যে নারী জেলেদের কোনো আলাদা পরিসংখ্যান নেই। শুধু পটুয়াখালীতেই নারী মৎস্যজীবীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার, অথচ নিবন্ধন পেয়েছেন মাত্র ৫০০ জন।
 
আন্তর্জাতিক মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশ-এর গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ‘নারী জেলেরা পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। ৯৩ শতাংশ নারী জেলে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু তাদের কথা কেউ শোনে না।’

 
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নারী জেলেরা মৎস্যখাতের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হলেও তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। আজ মে দিবসে তাদের কথা না বললে এই দিবসের দাবি শুধু স্লোগানেই রয়ে যাবে।’
 
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, ‘সম্প্রতি নারী মৎস্যজীবীদের নিবন্ধনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এসেছে। আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি।’
 
তবে মাঠ পর্যায়ে এখনও তেমন কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। তবুও আশা করা যায়, এবার হয়তো উপকূলের নারী মৎস্যজীবীরা পাবেন শ্রমের স্বীকৃতি ও মর্যাদা।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status