ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
বুধবার ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১০ বৈশাখ ১৪৩২
গাজার শিশুদের আকুতি শুনছে কি কেউ
‘মা, আমি ক্লান্ত আমি মরে যেতে চাই’
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Wednesday, 19 March, 2025, 10:55 PM

‘মা, আমি ক্লান্ত আমি মরে যেতে চাই’

‘মা, আমি ক্লান্ত আমি মরে যেতে চাই’

‘আমার সব চুল কেন পড়ে গেল? আর কি কখনোই চুল গজাবে না আমার মাথায়? মা, আমি ক্লান্ত, আমি মরে যেতে চাই মা! আমি বেহেশতে গিয়ে আবার চুল বড় করতে চাই!’ আয়নার সামনে চুল আঁচড়ানোর ভঙ্গি করতে করতে কেঁদে ফেলে ছোট শিশু সামা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে বেশ লম্বা চুল ছিল সামার। বন্ধুদের সঙ্গে তখন সে বাইরে খেলতেও যেত। কিন্তু এখন চুল না থাকায় অন্য শিশুরা তাকে উত্ত্যক্ত করে, এটা একদম ভালো লাগে না তার। তাই সারা দিন ঘরের মধ্যেই থাকে। বাইরে গেলেও স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখে। ফলে দিন দিন আরও বেশি অন্তর্মুখী হয়ে পড়ছে শিশুটি। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের আগে রাফায় নিজেদের বাড়িতে থাকত সামা। ইসরায়েলি হামলায় বাড়িঘর হারিয়ে জীবন বাঁচাতে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে তারা। সবশেষ থিতু হয়েছে খান ইউনিসে।

সামার মা সিএনএনকে বলেন, গত বছরের আগস্টে ঠিক তাদের পাশের বাড়িতে আঘাত হানে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র। ভয়ে কুঁকড়ে যায় সামা। আর এরপর থেকেই শুরু হয় তার চুলপড়া। চুলপড়া বন্ধ করতে নানা চেষ্টা করা হয়েছে। ফল হয়নি। এখন একেবারেই টাক হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নার্ভাস শকের (স্নায়বিক আঘাত) কারণে চুল পড়ে গেছে। কিন্তু ছোট শিশুটি কি আর বোঝে এসব বিষয়? চুল না থাকার কষ্টে মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে সে। বেঁচে থাকার স্পৃহাই হারিয়ে ফেলেছে!

‘আমি খুব কষ্ট পাই, কারণ আঁচড়ানোর মতো একটা চুলও আমার নেই,’ মাথায় হাত রেখে সিএনএনকে বলে সামা। সে বলে, ‘আমি মুখের সামনে আয়না ধরে রাখি, আমি চুল আঁচড়াতে চাই : আমি সত্যিই আবার চুল আঁচড়াতে চাই!’

শুধু সামাই নয়, গাজার বেশিরভাগ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থাই এমন শোচনীয়। তেমনই দুই শিশু আনাস আর তার বোন দোয়া। তাদের একজনের বয়স সাত আর অন্যজনের আট। ইসরায়েলি হামলায় বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে তারা। এখন দাদির সঙ্গে আল মাওয়াসির শরণার্থী শিবিরে থাকে। আনাস বলে, ‘আমি বল খেলছিলাম। একটা ড্রোনের শব্দ শুনতে পাই। তারপর সিঁড়ির কাছে গিয়ে দেখি মা-বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।’


জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে গাজায় বর্তমানে শিশুর সংখ্যা ১২ লাখ, যাদের সবারই মানসিক সহায়তা প্রয়োজন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সংস্থার প্রধান কর্মকর্তা টম ফ্লেচার বলেছেন, পুরো একটা প্রজন্ম ট্রমাটাইজড হয়ে গেছে। নির্বিচারে বোমা হামলা চালানো হয়েছে তাদের ওপর, অভুক্ত রাখা হয়েছে, ঠান্ডায় জমে মৃত্যু হয়েছে, এমনকি পৃথিবীর আলো দেখার আগেই জীবন দিয়েছে কত শিশু!

৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ জনের প্রাণ কাড়ল ইসরাইল : এএফপি জানায়, পবিত্র রমজান মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় দখলদার ইসরাইলের চালানো নির্বিচার হামলায় গত দুদিনে অন্তত ৯৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। বুধবার গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানির এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গত ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা ৪৮ হাজার ৫৭৭ জনে পৌঁছায়। এরপর বুধবার দুপুরের দিকে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৯ হাজার ৫৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। বোমা হামলায় নিহতদের মধ্যে ১৮৩ জন শিশু রয়েছে। পুরো উপত্যকার আকাশ ছেয়ে রেখেছে ইসরাইলি ড্রোন। হতাহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে ছিন্নভিন্ন মাংস পেয়েছে উদ্ধারকারীরা। এদিকে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম নিয়ে আসা ত্রাণের ট্রাক উপত্যকায় ঢুকতে দিচ্ছে না আইডিএফ সেনারা।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি: এমদাদ আহমেদ | প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ | কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status