ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
সোমবার ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ৬ মাঘ ১৪৩১
এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট আইন-কানুনের সংস্কার চাই : মো. বোরহান-ই-সুলতান
মজিবুর রহমান পান্না
প্রকাশ: Thursday, 9 January, 2025, 2:30 PM

এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট আইন-কানুনের সংস্কার চাই : মো. বোরহান-ই-সুলতান

এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট আইন-কানুনের সংস্কার চাই : মো. বোরহান-ই-সুলতান

বাংলাদেশ ফুডস্টাফ ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফিসা) দেশে শিশু খাদ্যের পাশাপাশি যেসব খাদ্য বাংলাদেশে উৎপাদন হয় এমন বিভিন্ন খাদ্য পণ্যও আমদানী করে থাকে। ২০১৫ সালে যাত্রা  শুরু করা সংগঠনটি বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরীন খাদ্য ঘাটতি, আমদানী প্রতিবন্ধকতা নিরসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে কাজ করছে। সংগঠনটির সভাপতি সফল উদ্যোক্তা মো. বোরহান-ই-সুলতান টিআর ট্রেডিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি  এফবিসিসিআই এর সদস্যও। এই খাতের সমস্যা, সম্ভাবনা এবং সরকারের কাছে প্রত্যাশা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক নতুন সময়ের সাথে।

নতুন সময়: বাফিসা সম্পর্কে জানতে চাই।
মো. বোরহান-ই-সুলতান: ২০১৪/১৫ সালের দিকে অনানুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় বাফিসার। বর্তমানে তিন শতাধিক সদস্য রয়েছে। সবারই মূল ফোকাস শিশুখাদ্যের উপর। বাংলাদেশে শিশুখাদ্যের বেশ ঘাটতি রয়েছে। আমরা বাচ্চাদের সুস্থতা এবং খাদ্য নিরপত্তায় গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্যই বাফিসার সদস্যরা প্রধানত ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে শিশু খাদ্য আমদানী করে। এছাড়া যেসব খাদ্য উৎপাদনের ফ্যাক্টরি নাই এদেশে কিন্তু প্রয়োজন সেসব খাদ্য পণ্যও আমদানী করা হয়ে থাকে। বলতে পারেন আমরা ঐসব খাদ্যই মূলত বিদেশ থেকে আমদানী করি যেগুলো হেলথ কনসার্স রয়েছে। 

নতুন সময়ঃ প্রচলিত খাদ্যপণ্যের বাহিরে আর কি ধরণের পণ্য আপনারা বিদেশ থেকে আমদানী করেন?
মো. বোরহান-ই-সুলতান: আমরা দুপুর বেলায় ভাত, মাছ, মাংস খাই: বর্তমানে প্রচলিত অভ্যাস। ১০/১৫ বছর পর এই অভ্যাস বা রুচির পরিবর্তন দেখা দিবে। অপরদিকে বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ, জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু জমি বাড়ছে না। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস পরিবর্তন বা ব্যাকআপ কিছু পণ্য আমদানী করি যেমন- ওটস। ওটস অল্প খেলেও চলবে, আপনার ক্ষুধা নিবারণ হবে আবার পুষ্টি চাহিদাও মিটবে। আপনাকে এতো ভাত, এতো কার্বোহাইড্রেট খেতে হবেনা। আমরা স্বল্পমূল্যে ভালোমানের খাদ্য পণ্য ভোক্তাদের হাতে দেওয়ার জন্যই এসব পণ্য আমদানী করে থাকি। 

নতুন সময়ঃ আমদানী পণ্যের মান নিশ্চিতের বাফিসার তদারকি কেমন?
মো. বোরহান-ই-সুলতান: আমরা সকল নিয়মনীতি মেনে আমদানী করি। যেমন- বিদেশ থেকে আমদানী পণ্যের হেলথ সার্টিফিকেট, রেডিয়েশন সার্টিফিকেট, কান্ট্রি অব অরিজিন সংগ্রহ করতে হয়। এছাড়া আমরা আমদানীর আগে পণ্যের ল্যাবটেস্ট, ফিট ফর হিউম্যান কনজামশান টেস্ট, এফডিএ সার্টিফাইড টেস্ট, হ্যাসাফ সার্টিফাইইড এসব ইন্টারন্যাশনাল সার্টিফিকেটগুলো যাচাই করি। এছাড়া নিয়মিত মনিটরিং করার চেষ্টা করি।

নতুন সময়: শিশু পণ্য ছাড়া আর কোনো পণ্য আমদানী করেন কিনা?
মো. বোরহান-ই-সুলতান: শিশু খাবারের বাহিরেও আমরা বয়স্কদের জন্য এবং আমাদের বয়েসীদের জন্যও খাদ্যপণ্য আমদানী করে থাকি। বাফিসার মেম্বাররা বছরে প্রায় ৭/৮শ পণ্য আমদানী করে। উল্লেখযোগ্য পণ্যগুলোর মধ্যে- বাদাম, চকোলেট আমদানী করি। বাদাম যেমন ওয়ালনাট, আখরোট ওয়াল নাট, এলমন, ডার্ক চকোলেট। অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, হল্যান্ড থেকে চীজ আমদানী করি। কিছু তেল আমদানী করা হয় যা আমরা দেশে উৎপাদন করিনা যেমন- সানফ্লাওয়ার ওয়েল, এভাকাডো ওয়েল, ক্যানোলা ওয়েল, অলিভ ওয়েল, যেসব তেল আমাদের জন্য খুবি দরকার। ওটস, উন্নতমানের জুস আসে অস্ট্রেলিয়া থেকে, ফ্রেন্সফ্রাই টা আনা হয় বেলজিয়াম থেকে, হল্যান্ড থেকে নিয়ে আসি চীজ, অস্ট্রেলিয়া থেকে আনি জুস আর আমেরিকা থেকে আমদানী করি বয়স্কদের বিভিন্ন ধরণের খাবার। গম বা ওটস টাইপের খাবারগুলো আনি রাশিয়া থেকে।

নতুন সময়: উদ্দেশ্য অর্জনের বাধাগুলো কোথায়?
মো. বোরহান-ই-সুলতান: বাফিসার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমরা সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যেমন – বিএসটিআই, এনবিআর, শিল্প মন্ত্রণালয়, ফুড সেফটি, ভোক্তা অধিকার, কাস্টমস, পোর্ট বা বন্দর কর্তৃপক্ষ সাথে পলিসি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করছি। কিছু পণ্যের ডিউটি কমাতে পেরেছি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা বিগত সরকারের সদিচ্ছার অভাবে অনেক কিছুই করতে পারিনি। 

বাংলাদেশ সবচেয়ে হাই-ইমপোর্ট-ডিউটি কান্ট্রি। আমাদের ডিউটি বিশ্বের যেকোন দেশের তুলনায় বেশি। ভারতে ডিউটি ১০-১৫%। খুব কম প্রোডাক্টই আছে ২০% ডিউটি। দুবাইয়ে ডিউটি ফ্রি। সিঙ্গাপুরের ডিউটি ৫%, ৭% ও ১০% এর বেশি নয়। চায়না, মালয়েশিয়ায়ও একইরকম। ইউরোপ, আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়ার কথা বাদই দিলাম। 
আমরা যেসব খাদ্যপণ্য আমদানী করি সেসবের উপর ৬০% এর নীচে কোনো ডিউটি নাই। আমাদের ৬০% থেকে শুরু করে ৩০০% পর্যন্ত ডিউটি দিতে হয়। বাংলাদেশে চীজের কোনো ফ্যাক্টরী নাই অথচ চীজের ডিউটি দিতে হয় ৯১%। বিদেশে ৫ লিটার দুধ দিয়ে যতটুকু চীজ হবে বাংলাদেশে সে পরিমান চীজের জন্য ১০ লিটার দুধ লাগবে। কারণ সে পরিমান গো-চারণ ভূমি নাই বাংলাদেশে। গো-চারণ ভূমির জন্য হাজার হাজার বিঘা জমি লাগবে। কিন্তু সে পরিমান জমিতো আমাদের নাই। ডিউটি একদম কমিয়ে দেয়া উচিত ছিল। কোনোভাবেই ডিউটি ২০%-২৫%-৩০% এর উপরে যাওয়া উচিত না। 

এতো ডিউটির ভারে আমরা এগুতে পারছিনা। আমি বলবো যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন হচ্ছে সেসব পণ্যে ইমপোর্ট ডিউটি বাড়িয়ে দিন, আমরা এপ্রিশিয়েট করবো।

বর্তমান যে অন্তর্বতী সরকারের কাছে আমাদের দাবী রাজস্ব খাতে সংস্কার প্রয়োজন। শিল্প এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়গুলোতে দক্ষজনবল বাড়াতে হবে। বাজার নিয়ে গবেষণা করতে হবে। কম দামে ভোক্তাদের কিভাবে সুবিধা দেয়া যায় সেসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান। আমরা বিজনেস করবো। বর্তমানে আইনের কিছু ফাঁকফোকর ও অপব্যবহার করেও ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানী করা হয়। এটা বন্ধ হওয়া উচিৎ। প্রয়োজনে আইন আরও সহজ এবং ব্যবসাবান্ধব করা প্রয়োজন। ট্যাক্স, ভ্যাট ব্যবস্থাপনা বা সিস্টেমেও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

আরেকটা সমস্যা কোন পণ্যের চাহিদা একটু বেশি শুরু হলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নকল ও ভেজাল পণ্য বানিয়ে বাজারজাত শুরু করে। এদের বিএসটিআই’র লাইসেন্সও নাই। দেখা যায় আমরা যেটা ৮০০/৯০০/১০০০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি সেটা তারা সেটা ২০০ টাকায় বিক্রি শুরু করলো। অধিকাংশ সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানালেও কাজ হয় না। এগুলোর কোনো মনিটরিং নেই, জবাবদিহিতা নেই। এই বিষয়টি কঠোরভাবে নজর দেওয়া দরকার। এসব ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।

আর একটা বড় সমস্যা পোর্টে যখন একটা প্রোডাক্ট আসে। প্রোডাক্ট আসার পর বিএসটিআইয়ের টেস্টিং করতে হয়। এটা খুব ভালো কথা আমাদের দেশে এরা এটা টেস্ট করবে। কথা হলো বিএসটিআই যদি এটা টেস্ট করবে তাহলে বিদেশী টেস্টের কি দরকার? বিদেশে যে আমি টেস্ট করাই, ওখানে তাদের ল্যাবরেটরী টেস্ট, আরো অন্যান্য যে টেস্টের জন্য খরচ হয় এ টাকাতো সে আমাদের ইনভয়েসে যোগ করে প্রোডাক্টের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা আমদের দরকার কি? এক রাস্তায় যান। হয় বিদেশী টেস্ট আর না হয় বাংলাদেশী টেস্ট। দুইটার যেকোন একটা করা প্রয়োজন। 

আবার বিএসটিআইয়ের টেস্টে ৩দিন থেকে ১ সপ্তাহ লাগে আবার ১৫দিন বা ২০দিনও লেগে। এতে শিপিং ড্যামারেজ উঠে ৫/৭ লক্ষ টাকা। এই শিপিং ড্যামারেজ ডলার আকারে বিদেশীরা নিয়ে যায়। কারণ শিপাররাতো দেশী না, এরা বিদেশী কোম্পানী। আমরা ডলার বাঁচাতে চাই অথচ প্রতিদিন এই ডলার লিগ্যালী চলে যাচ্ছে। পোর্টে যদি তারা ইলেকট্রনিক সিস্টেম চালু করে, সমস্ত সিস্টেম ওয়ান-গো করে তাহলে প্রোডাক্ট অপেক্ষা করবেনা। সব সংস্থা এক জায়গায় থাকবে। সিস্টেম উন্নত করতে হবে যাতে একদিনও প্রোডাক্ট অপেক্ষা না করে। আমরা খুবই আশাবাদী এ সরকার সমাধান করবে। আমরা বসতে চাই সরকারের সাথে।

নতুন সময়ঃ খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে করণীয় কি?
মো. বোরহান-ই-সুলতান: চাল উৎপাদনে আমাদের বেশি মনোযোগী হতে হবে। চাল যেন বিদেশ থেকে আমদানী করতে না হয় এটা নিয়ে আমাদের ফোকাস দিতে হবে। একই সাথে গম, ডাল বা অন্যান্য দিকে যদি ঝোঁকে যান তাহলে চালের মনোযোগটা কমে যাবে। আমাদের এখানে যা উৎপাদন করা সম্ভব তার উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবে।

 নতুন সময়ঃ অন্তর্বতী সরকারের কাছে কি প্রত্যাশা আপনাদের?
মো. বোরহান-ই-সুলতান: অন্তর্বতী সরকারের কাছে এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট আইন-কানুনের কার্যকর সংস্কার চাই। পুরোন আমলের নিয়ম-নীতি বাদ দিয়ে, সহজ এবং ব্যবসাবান্ধব কার্যকরী নিয়মনীতি চাই। যেসব ক্ষেত্রে আমদানী জটিলতা রয়েছে, এই জটিলতাগুলো নিরসন করা উচিৎ। সহজ করা উচিৎ। এই জায়গাগুলোতে সংস্কার হলে শুধু বাফিসা না, বরং পুরো দেশ, পুরো জাতি উপকৃত হবে। 

নতুন সময় : আপনাকে ধন্যবাদ।   
মো. বোরহান-ই-সুলতান: আপনাকেও ধন্যবাদ।   


� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ। কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status