সাদা পোশাকে অপরাধে জড়াচ্ছে পুলিশ
নতুন সময় ডেস্ক
|
গায়ে নেই পুলিশের পোশাক, দেখান না আইডি কার্ড, কিন্তু পরিচয় দিচ্ছেন– পুলিশ। এভাবে ঘটছে কখনও ডাকাতি, কখনও অপহরণ। সম্প্রতি চট্টগ্রামে এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে নিষেধ থাকার পরও সাদা পোশাকে চলছে পুলিশের অভিযান। পরিচয় দেওয়া ছাড়াই ফিল্মি স্টাইলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে আসামিদের। মানা হচ্ছে না বিধিবিধান। এতে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। গত ১০ ডিসেম্বর খুলনায় আইনশৃঙ্খলা-বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় সাদা পোশাকে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এর পরও থেমে নেই পুলিশের সাদা পোশাকে অভিযান। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, গত ২১ ডিসেম্বর এক যুবককে ধরে একটি নম্বরহীন সিএনজি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায় তিন ব্যক্তি। অটোরিকশার পেছনে লেখা ছিল সামিহা-সুমাইয়া। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মোশাররফ আলী মিয়ার বাজারের পূর্বকূলের পিপাসা কুলিং কর্নার থেকে ফিল্মি স্টাইলে ওই যুবককে তুলে নেওয়া হয়। এ সময় তিনজনের কারও গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল না। তারা নিজেদের পরিচয়ও দেয়নি। পরে স্থানীয় লোকজন জানতে পারেন, যুবককে তুলে নেওয়া ব্যক্তিরা বাঁশখালী থানার বাহারছড়া ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ সদস্য। জিসান নামে যে যুবককে তুলে নেওয়া হয়, তিনি ছাত্রলীগের কর্মী। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন সাংবাদিক এফ এম মিজানুর রহমান। তাঁকে আগ্রাবাদ অ্যাক্সেস রোডের মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ারের সামনে থামায় এক দল লোক। তারা পুলিশ বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু তাদের কারও গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল না। পরিচয়পত্র দেখাতে বললেও দেখায়নি। তারা তাকে তল্লাশি চালায়। মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাদা পোশাকে যারা তল্লাশি চালিয়েছে, তাদের একজন নিজেকে আল আমিন বলে পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের কারও গায়ে পুলিশের পোশাক ছিল না। পরিচয়পত্রও তারা দেখায়নি। স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক তৈরি হবে।’ পরে তিনি জানতে পারেন, এরা সবাই সিএমপির হালিশহর থানা পুলিশের সদস্য। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে পুলিশ পরিচয়ে নগরের বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকায় নর্ম ভিলা নামে একটি ভবনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ৩৬ হাজার টাকা ও আট ভরি স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। সাদা পোশাকে ডাকাতিতে নেতৃত্ব দেন বাকলিয়া থানার চাক্তাই থানার এএসআই ফারুক মিয়া। পরে তাঁকেসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় কল্পলোক আবাসিক এলাকার নর্ম ভিলার কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ বাকলিয়া থানায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন। কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। পুলিশ পরিচয়ে তারা অভিযান চালায়। লাল মিয়া টাকা ও স্বর্ণালংকার ফেরত চাইলে তারা পুলিশের ভয় দেখিয়ে হুমকি দেয়। তারা যখন ফ্ল্যাট থেকে নিচে নেমে গেট দিয়ে বের হয় তখন স্থানীয় লোকজন ও নিচে থাকা কিছু ছাত্র পাঁচজনকে আটক করেন। এ সময় এএসআই ফারুকসহ বাকিরা পালিয়ে যান। পরে ফারুককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।’ গত ৯ ডিসেম্বর রাতে নগরের সদরঘাট থানার পশ্চিম মাদারবাড়ি যুগী চাঁদ লেনের রামকৃষ্ণ ফার্মেসি থেকে ডিবি পরিচয়ে রাজু মজকুরী ও আব্দুল নবী নামে দু’জনকে কালো রঙের প্রাইভেটকারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাজু মজকুরীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। তাদের নগরের বিভিন্ন সড়কে ঘুরিয়ে রাজু মজকুরীর দোকান থেকে ব্যাংকের এটিএম কার্ড আনার জন্য আবদুল নবীকে আগ্রাবাদের বাদামতলীতে নামিয়ে দেওয়া হয়। নবী এলাকায় গিয়ে লোকজনকে জানালে তারা সদরঘাট থানা পুলিশকে জানায়। পুলিশ গিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের একজন পুলিশ কনস্টেবল ফাহাদ ইসলাম। সাদা পোশাকে পুলিশের অভিযান প্রসঙ্গে সিএমপির উপকমিশনার মো. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘সাদা পোশাকে কেউ অপরাধে যুক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাদা পোশাকে অভিযান না চালানোর জন্য কঠোর বার্তা দেওয়া আছে। কৌশলগত কারণে সাদা পোশাকের কোন টিম অভিযান চালালেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। সঙ্গে অবশ্যই ইউনিফর্মধারী পুলিশ সদস্য থাকতে হবে। এ ধরনের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) রাসেল বলেন, সাদা পোশাকে অভিযানের কোনো সুযোগ নেই। আসামি গ্রেপ্তারে অবশ্যই ইউনিফর্মধারী পুলিশ থাকতে হবে। যেসব প্রক্রিয়া আছে তা মানতে হবে। আপনি যে ঘটনার কথা বলেছেন, সেখানে কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |