ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে আলুর বীজের চড়া দাম
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Saturday, 30 November, 2024, 3:39 PM

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে আলুর বীজের চড়া দাম

সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে আলুর বীজের চড়া দাম

বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর চাষিরা এখন আলুর বীজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও একদল অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বীজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ৬৫ টাকায় পাওয়া যাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে বীজের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় চাষিরা ফসলের মাঠে নামার আগেই হতাশায় ভুগছেন।


জানা গেছে, রাজশাহী জেলার আলু আবাদ প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এবারও দেখা যাচ্ছে বীজ আলুর সংকটের একটি কৃত্রিম পরিস্থিতি। এই সংকটের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম আদায় করছে এবং কৃষকরা এর শিকার হচ্ছে। কৃষি দফতরও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা বিভিন্ন বৈঠক করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। একদিকে যেখানে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে, সেখানে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হওয়া মানে কৃষকদের জন্য একটি বড় সংকট।


রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, এবারের আলু আবাদ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে হওয়ার কথা, যার মাধ্যমে উৎপাদন লক্ষ্য রাখা হয়েছে ৯ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে বীজ আলুর প্রয়োজনীয়তা ৫৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন হলেও, বর্তমানে রাজশাহীর কোল্ডস্টোরেজগুলোতে মজুদ রয়েছে ৩৭ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন বীজ আলু। এতে দেখা যাচ্ছে, প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন বীজ আলু উদ্বৃত্ত রয়েছে। এমন অবস্থায়ও বাজারে কেন বীজ আলুর সংকট তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে সাধারণ কৃষকরা ক্ষুব্ধ।


অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিকাংশ কৃষক তাদের নিজস্ব উৎপাদন থেকে বীজ আলু সংগ্রহ করলেও, ক্ষুদ্র কৃষকরা কখনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ কিনে থাকেন। 


কৃষি দফতরের তথ্য মতে, সরকারি সংস্থা বিএডিসি মোট চাহিদার মাত্র ২-৩ শতাংশ বীজ সরবরাহ করে। এর বাইরে ব্রাক এবং অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বীজ উৎপাদন করে। কিন্তু সমস্যা হলো, সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বীজ সাধারণত ভালো হয় এবং চাষিদের চাহিদা মেটাতে এই বীজই তারা কিনতে চায়। তবে, এসব বীজের দাম ডিলার ও প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বাড়িয়ে দেয়, যা কৃষকদের জন্য একটি বড় চাপ।


এছাড়া, বিএডিসি তিনটি জাতের বীজ বিক্রি করে: এ্যাস্টেরিক, ডায়মন্ড, এবং সানশাইন। এই বীজগুলির দাম ডিলার পর্যায়ে ৫২-৬০ টাকা প্রতি কেজি হওয়া উচিত, তবে কৃষকের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে ৮০-১০০ টাকার মধ্যে, যা একটি বড় অস্বাভাবিকতা। বেশিরভাগ চাষি অভিযোগ করছেন যে, বাজারে বীজের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হচ্ছে। তাদের মতে, তারা কখনো ৬০-৬৫ টাকায় বীজ পেয়েছেন, কিন্তু এখন দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।


পবা উপজেলার আলু চাষি এন্তাজুল হক বলেন, বীজ আলুর সংকট তৈরি করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে, এতে আমাদের কাছে বীজের দাম অত্যধিক বাড়ানো হয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন অজুহাতে বীজের দাম বাড়াচ্ছে এবং আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। এর ফলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং ক্ষুদ্র কৃষকরা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।


সাইফুল ইসলাম নামে এক চাষি জানান, আমি প্রতি বছর নিজের তৈরি বীজ ব্যবহার করতাম, তবে এবছর তা সম্ভব হয়নি। গত বছর যেখানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বীজ বিক্রি হয়েছিল, এবার তা ৮০ টাকা কেজি দরে কিনেছি। আর এখন তো তা ৯০ টাকায় পৌঁছে গেছে। তার মতে, বীজের দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে চাষিদের জন্য আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়বে।


রাজশাহী শহরের গ্রেটাররোড এলাকার ব্যবসায়ী খোকন তালুকদার বলেন, বীজ আলু উৎপাদনে আমরা নিজেরাই নিয়োজিত, তবে এবছর প্রজেক্টের বীজ বিক্রি করা হচ্ছে বেশিরভাগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা নওগাঁ ও নাটোরে বীজের সংকট তৈরি হওয়ায় অনেক বীজ সেগুলোর দিকে চলে যাচ্ছে, যার ফলে এখানকার চাষিদের জন্য বীজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।


এ ব্যাপারে রাজশাহী কোল্ডস্টোরেজ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বক্কর জানান, বাজারে ৮০ টাকা প্রতি কেজির ওপরে বীজ আলু বিক্রি হচ্ছে এবং বীজের সংকটের কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে। রাজশাহীতে বীজ আলু কম হওয়া এক্ষেত্রে অন্যতম কারণ হতে পারে।


রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা জানিয়েছেন, "আমাদের কাছে পর্যাপ্ত বীজ আলু মজুদ রয়েছে, এমনকি বিএডিসির বীজও পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। কিন্তু কিছু অভিযোগ আসছে, যা নিয়ে আমরা প্রতিটি উপজেলায় কাজ শুরু করেছি এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status