তারেক রহমান-সহ নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে : ফখরুল
ফাহিম ফরহাদ
প্রকাশ: Saturday, 28 September, 2024, 1:47 PM
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনো সংকট কাটেনি। দ্রুত প্রশাসনের সকল ইউনিটকে সংস্কার করে দেশকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের উপযোগী করতে হবে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রয়াত জাতীয় নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ-স-ম হান্নান শাহ এর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৭ বছরের বিএনপির প্রায় হাজারো লোককে গুম করে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের ওপর মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের অত্যাচারে বিএনপি নেতারা নিজ গৃহে ঘুমাতে পারতো না। এখনো আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে। সামনে দুর্গাপূজা আসছে, এই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বলতে চাই, আপনারা বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি। বাংলাদেশের সকল মানুষ আপনাদের পাশে দাঁড়াবে এবং আপনাদের পূজায় যেন সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে।
আলোচনার এক পর্যায়ে জাতীয় নেতা প্রয়াত হান্নান শাহ্'র স্মৃতিচারণ করে উপস্থিত জনতার উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, বিগত দিনে আপনারা যেভাবে হান্নান শাহর পাশে ছিলেন আগামীতেও তার সুযোগ্য ছেলে রিয়াজুল হান্নানের পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সরকারের লোকজন সবাই ভালো মানুষ। এ সরকার সংস্কার চায় এবং আমরাও সংস্কারে বিশ্বাসী। তাই বলে সংস্কারের নামে বেশি সময়ক্ষেপণ করা যাবে না। তাছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে দিতে দেরি হলে অন্য কোনো ব্যবস্থা যেন ঢুকে না পড়ে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, তারেক জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে ইতোমধ্যে টালবাহানা শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সাথে তারেক জিয়াকে দেশে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দেশের সকল বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলাও অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। কারণ এ সকল মামলাগুলো প্রত্যাহার করা না হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বর্তমানে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। কিন্তু বিগত ১৭ বছর ধরে আমরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পেতাম না। আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখতে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। শেখ হাসিনা ও তার দোসররা ভেবেছিল তারা আজীবন ক্ষমতায় থাকবে এবং দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবে।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে দেশের সংবিধানে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান সংশোধন করে এ ব্যবস্থাকে বাতিল করে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের ব্যবস্থা করেছিল। তারা বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতার সুনামির তাণ্ডবে লুটপাট ও চুরির দায় নিয়ে তারা আজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে যে সরকার এসেছে, এটা অন্তবর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। মানুষ বিশ্বাস করে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠন করে সেই পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। তাঁরাও কমিটেড। আমরা বিশ্বাস করি তাঁদের কথায়, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু নজরুল ইসলাম আজাদ।
আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা শেফাউল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান, ওমর ফারুক সাফিন, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মো. শওকত হোসেন সরকার, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মরহুম আ স ম হান্নান শাহ এর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান প্রমুখ।
এর আগে বিকেল ৩টায় ক্বারী আব্দুস সাত্তারের কুরআন তিলাওয়াতের মধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ঘাগটিয়ায় হান্নান শাহ্ এর কবর জিয়ারত করেন।