শেরপুরে আবুল হোসেন নামের এক কৃষকের এক বিঘা জমির বেগুনের ক্ষেত ভুল কীটনাশক দিয়ে নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কিটনাশক ব্যবসায়ী মঞ্জু মিয়ার বিরুদ্ধে। ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, স্থানীয় লোকজন ও কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে উঠে আসে এই চিত্র।

শেরপুর সদর উপজেলার বলাইরচর কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন গত ২৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় কিটনাশক ব্যবসায়ী মঞ্জু মিয়ার দোকান থেকে বেগুনের পোকা দমনের কীটনাশক কিনতে গেলে দোকানদার আগাছা দমনের কীটনাশক দেয়। পরবর্তীতে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে এক বিঘা জমিতে লাগানো  বেগুনের গাছ মরে যায়। এতে ওই কৃষকের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান।

এ ঘটনায় স্থানীয় কীটনাশক ব্যবসায়ী মঞ্জু মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রাম-শালিস বসলেও উল্টো নানা ধরনের হুমকির শিকার হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারটি।

স্থানীয়রা জানান, শেরপুর সদর উপজেলার বলাইরচর কান্দাপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আবুল হোসেন। তিনি প্রতি বছরের মতো এবারও এক বিঘা জমিতে উন্নত জাতের বেগুনের চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের প্রায় সব গাছেই ঝুলছে বেগুন। ইতোমধ্যে বেগুন বিক্রিও শুরু করেছেন। তবে মাঝে মধ্যে দু'একটি বেগুন গাছে দেখা দেয় পোকার আক্রমণ।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় কীটনাশক ব্যবসায়ী মঞ্জু মিয়ার কাছে বেগুন ক্ষেতের জন্য পোকা দমনের বালাইনাশক চাইলে সে তাকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মডেল নামে আগাছা দমনের কীটনাশক দেয়।

গ্রামবাসীরা বলছেন, ওই কীটনাশক ব্যবসায়ী একজন মুদী দোকানদার অথচ কীটনাশক সহ নানা ধরণের বালাইনাশক বিক্রি করে এলাকার কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি করে আসছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আবুল হোসেন বলেন, আমি মুর্খ মানুষ। বেগুনে পোকা হয়েছে। তাই পোকা দমনের কিটনাশক চাইলে সে যে কিটনাশক দিয়েছে আমি সেটাই ক্ষেতে স্প্রে করেছি। সকালে দেখি সব গাছ মরা। ধার করে ও সুদে টাকা নিয়ে বেগুনের চাষ করেছিলাম। বেগুনের ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় আমার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আবুল হোসেনের মা অমেলা খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে ক্ষতিপূরণ দিবে বলে ডেকে নিয়ে উল্টা মেরেছে। আবার আমাদের বাড়িতে হামলা করার হুমকি দিচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক মালেক মিয়া বলেন, দিন রাত পরিশ্রম করে তৈরি করা ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেলো ব্যবসায়ীর খামখেয়ালিপনায়। ওই কৃষকের ক্ষেত থেকে সপ্তাহে প্রায় ১০-১৫ মন করে বেগুন বিক্রি করা যেত। অন্তত আরো দুই মাস বিক্রি করতেন বেগুন। এই বেগুন বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচ করেও ধার দেনা পরিশোধ করতেন তিনি। আমরাও বিচার চাই।

এ ব্যাপারে শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা কৃষকদের এই বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করি। যাতে কোনো কৃষক প্রতারিত না হয়। তাছাড়া বেগুনের ক্ষেতে আগাছা দমনের কীটনাশক দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কীটনাশক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কীটনাশক ব্যবসায়ী মঞ্জু মিয়া বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি ওই কীটনাশক দিইনি। তারা মিথ্যা অভিযোগ করছে।