গান গেয়ে যুবককে হত্যা, জিজ্ঞাসাবাদের পর যা বলছে পুলিশ
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
ছিনতাইকারী সন্দেহে শাহাদাত হোসেনকে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের খুঁটির সঙ্গে দুই হাত ও পা বেঁধে মারধর করা হয়েছিল। গত ১৩ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে বেশ কিছু সময় ধরে গান গেয়ে দফায় দফায় তাকে পেটানো হয়। মারা যাওয়ার পর শাহাদাতের লাশ ফেলে রাখা হয় নগরীর প্রবর্তক মোড়ে অদূরে বদনা শাহ মাজারের বিপরীতে সড়কের ফুটপাতে। ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। নিহত শাহাদাতের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে। নির্মম এ হত্যকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ এর এডিমন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল (৪২) নামে এক ব্যক্তিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ। বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগর পুলিশের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ। গ্রেপ্তার অন্য দুজন হলেন- আনিসুর রহমান ইফাত (১৯) ও অপরজন ১৬ বছর বয়সী কিশোর। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ছাত্র পরিচয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হলেও গ্রুপে কোনো ছাত্র নেই। গ্রেপ্তার হওয়া ওই গ্রুপের এডমিন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েলের রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তিনি ইট-বালুর ব্যবসা করেন। তবে গ্রেপ্তার হওয়া আনিসুর রহমান ইফাত নগরের চান্দগাঁও থানা এলাকার একটি কলেজে পড়াশোনা করেন। নিহত শাহাদাতের সঙ্গে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্যদের আগে থেকে কোনো পরিচয় ছিল না। নিছক ছিনতাইকারী সন্দেহে শাহাদাতকে পিটিয়ে মারা হয়। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নগরের ষোলশহর ২ নম্বর গেইট বিপ্লব উদ্যান এলাকা থেকে ‘চট্টগ্রাম ছাত্র জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ এর এডিমন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আনিসুর রহমান ও এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাজী তারেক আরও জানান, শাহাদাত হত্যায় শুধু গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন নয়, আরও ১৮/২০জন জড়িত আছে। শাহাদাতকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের খুঁটির সঙ্গে হাত-পা বেঁধে গান গেয়ে পেটানো হয়।এক গ্রুপ পিটিয়ে চলে যাওয়ার পর আরেক গ্রুপ এসে শাহাদাতকে আবার পেটানো শুরু করে। এভাবে এক পর্যায়ে সে নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পরে তার লাশ ফেলে দেওয়া হয় প্রবর্তক মোড় এলাকায়। তবে কারা, কীভাবে সেদিন শাহাদাতের লাশ প্রবর্তক এলাকার সড়কের পাশে ফেলে রেখে রেখেছিল তার তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে। শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের এক মাস ৬ দিন পর ২১ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক যুবককে বেঁধে পেটানোর ২০ সেকেন্ডের ভিডিও ভাইরাল হলে তার পরিচয় মেলে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর গত ১৩ আগস্টের রাতে শাহাদাতকে যখন মারধর করা হয়, সেসময় থানায় পুলিশ থাকলেও তাদের তেমন সক্রিয়তা ছিল না। এছাড়া সড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সেই সময়ে সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল শিক্ষার্থীরা। ১৪ আগস্ট প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনা শাহ মাজারের সামনের সড়কে রাস্তায় শাহাদাত হোসেনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন সেখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। তারাই প্রথমে লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। পরে পুলিশ খবর পেয়ে চমেক হাসপাতালে যায় ও পরবর্তীতে আইনি কাজ শেষ করেন। ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, নীল রঙের গেঞ্জি এবং জিন্স প্যান্ট পরা এক যুবক ঢুলছেন। যার দুই হাত বেঁধে রাখা হয়েছে স্টিলের পাইপের সঙ্গে। আর এই যুবককে ঘিরে গোল হয়ে কয়েকজন যুবক চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গান গাইছে। ভিডিওতে কয়েকজন যুবকের হাতে লাঠিও দেখা যায়। ঘটনার পরের দিন পাঁচলাইশ থানায় ভিকটিমের বাবা মো. হারুন অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। শাহাদাত হোসেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন কোতোয়ালী থানাধীন বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে। তার স্ত্রী এখন অন্তঃসত্ত্বা। গত ১৩ আগস্ট সাগর নামে এক বন্ধুর কাছে পাওনা টাকা আনতে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন শাহাদাত।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |