নিউজিল্যান্ডে রেকর্ড সংখ্যক তরুণ-তরুণীর দেশ ছাড়ার নেপথ্যে যেসব কারণ
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Thursday, 5 September, 2024, 4:57 PM
নিউজিল্যান্ডে রেকর্ড সংখ্যক তরুণ-তরুণীর দেশ ছাড়ার নেপথ্যে যেসব কারণ
জেসিকা চোং নামের এক তরুণী নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে তার এবং তার সঙ্গীর জন্মদিন উদযাপনের জন্য সম্প্রতি পার্টির আমন্ত্রণপত্র পাঠাতে শুরু করেছিলেন। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাদের খুব কাছের বন্ধুদের মধ্যে অনেকে এতে যোগ দিতে ব্যর্থ হবেন। গত কয়েক মাসে তাদের অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন। এতে দেশটিতে এখন পরস্পর পরিচিত মানুষের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। জেসিকার এমন অভিজ্ঞতা দেশটিতে চলতে থাকা নেতিবাচক প্রবণতাকেই প্রতিফলিত করছে।
একটি প্রগতিশীল আশ্রয়স্থল হিসেবে দেশটির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি থাকা সত্ত্বেও জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় মাত্রার চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থানের অভাব 'ভয়াবহ' পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এতে করে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ নিউজিল্যান্ড ছাড়ছেন এবং দেশটিতে কেমন যেন পরিচিত মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। জেসিকার মনে হচ্ছে, দেশটিকে কেমন যেন একটু খালি খালি (জনশূন্য) মনে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে জেসিকা জানিয়েছেন, যিনি নিজেই লন্ডনে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। 'এটি আসলে এক ধরনের আনন্দের বিষয় হতে যাচ্ছে। কারণে লন্ডনে আমরা আমাদের আত্মীয় ও বন্ধুদের খুঁজে পাবো এবং আড্ডা দিতে পারবো। এটি প্রত্যাশা হতে পারে না তবে তা আমাদের জন্য সুন্দর হবে।'
'স্ট্যাটিস্টিকস নিউজিল্যান্ড'-এর অস্থায়ী পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এক লাখ ৩১ হাজার ২০০ মানুষ নিউজিল্যান্ড ছেড়েছেন, যা এখন পর্যন্ত দেশটিতে সবচেয়ে বেশি।
কোভিড-১৯ মহামারির আগে এক বছরে দেশ ছেড়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ২০০ জন। সম্প্রতি যারা চলে গেছেন তাদের প্রায় ৪০ শতাংশের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৩০ বছরের এর মধ্যে।এমন বহির্মুখী গমন প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞরা শঙ্কিত হয়ে বলেন এদের অনেকেই আর মাতৃভূমিতে ফিরে আসবেন না। এমন প্রবণতা ধারণারও বাইরে। ওয়েলিংটনভিত্তিক পরামর্শদাতা সংস্থা ইনফোমেট্রিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্র্যাড ওলসেন আল জাজিরাকে বলেন, নিউজিল্যান্ড থেকে এমন মাত্রায় নাগরিক চলে যাওয়ার মতো ঘটনা আমরা আগে দেখিনি।
নিউজিল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন এবং কম জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি। এর নাগরিকদের অস্থায়ীভাবে বিদেশে চলে যাওয়ার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে যা স্থানীয়রা 'বিদেশী অভিজ্ঞতা' বলে অভিহিত করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান তারা।
দেশটিতে বসবাসকারী ৫২ লাখ নিউজিল্যান্ডবাসী ছাড়াও আনুমানিক ১০ লাখ নাগরিক বিদেশে বসবাস করেন। যখন মহামারি আঘাত হানে, তখন ৫০ হাজারের বেশি নাগরিক বেশি নিউজিল্যান্ডে ফিরে আসেন। সেই সময় কঠোর লকডাউন এবং সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ মেনে চলা হতো। দেশটিকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কোভিড-মুক্ত রাখায় এটি বিদেশে প্রশংসা পায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যদিও নিউজিল্যান্ড অর্থনৈতিকভাবে সংগ্রাম করেছে। তারপরও জুন মাসে অর্থনীতি গত ১৮ মাসের ব্যবধানে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে।