ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৩০ ভাদ্র ১৪৩১
সিরাজগঞ্জে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি এখন বিলুপ্তির পথে
আজিজুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশ: Wednesday, 4 September, 2024, 8:12 PM

সিরাজগঞ্জে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি এখন বিলুপ্তির পথে

সিরাজগঞ্জে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকি এখন বিলুপ্তির পথে

সিরাজগঞ্জে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন পালকী এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিয়েতে পালকির ব্যবহার অবহেলিত হয়ে পরেছে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে গেছে বিয়ের সংস্কৃতি। আর তাই সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে ঐতিহ্যের পালকি হারিয়েছে চাহিদা। অথচ দুই যুগের বেশি সময় আগেও আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পালকি ব্যবহার হতো ব্যাপক ভাবেই।  বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ১০-১২ দিন পূর্বে থেকেই পালকির বাহকদের ও মালিকদের বুকিং করে রাখা হত। তবে পালকি সচরাচর তিন ধরনের হয়ে থাকে।সাধারণ পালকি, আয়না পালকি ও ময়ূরপঙ্খি পালকি।ওই সব পালকিতে কাঠের তৈরি পাখি, পুতুল ও লতাপাতা নকশা দিয়ে তৈরি হতো।

এখন যান্ত্রিক যুগে এসে পালকি সোনার হরিণ হয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, বিজ্ঞানের আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে বাঙালি ঐতিহ্যের প্রতীক পালকির প্রচলন। এখন আর আগের মতো পালকির ব্যবহার চোখে পড়ে না। মেয়েরা আর পালকিতে চড়ে বিয়ের স্বপ্ন দেখে না। বিয়েতে পালকির সেই স্থান এখন দখল করে নিয়েছে জাঁকজমক ভাবে সাজানো প্রাইভেট কার, মাইক্রো, বাস, কিংবা সিএনজি। আগে দেখেছি ৬ কিংবা ৪ বেহারার পালকি নিয়ে গানের তালে তালে বর-বধুকে নিয়ে গ্রামের মেঠোপথ প্রান্তর পেড়িয়ে বরযাত্রীরা বিয়ে সম্পন্ন করতো। বেহারারা সমবেত গানের তালে তালে এগিয়ে যেত পাড়ি দিত দীর্ঘ পথ। আর বর যাত্রীরা পালকির পিছনে পিছনে দৌড়ে কিংবা দ্রুত হেটে যেতো। গাঁয়ের মেঠোপথ প্রান্তর ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে পালকির বহর এগিয়ে চলতো নিরন্তর। আর পিছনে বরযাত্রীরা চলতো। দূরের পথিকরা সেই দৃশ্য কত না অপলোকদৃষ্টি দেখতো।  

আগের যুগে বর ও কণের বাড়ী নেচে গেয়ে মাতাতেন বেহারারা। পালকীতে বর ও কনের দৃশ্য যেন খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। পালকীতে বর ও কনেকে রেখে গান গেয়ে টাকা উত্তোলন করতো। বিয়ে বাড়ীতে আগত নারী-পুরুষ, সবাই চারদিকে দাঁড়িয়ে বেহারার গান শুনতো। তারা মাতিয়ে রাখতো বিয়ে বাড়ী গুলোকে। কিন্তু সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। ধনী বলে নয়,গরীব,দিনমজুররাও বিয়েতে পালকির ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। সবাই এখন ঝুঁকছে আধুনিক যান্ত্রিক বাহনগুলোর দিকে। আর তাই ঐতিহ্যের পালকি হারিয়েছে ঐতিহ্য। গ্রামাঞ্চলে দেখা না মেলা ঐতিহ্যের পালকি অদূর ভবিষ্যতে বিয়ের সংস্কৃতি থেকে চিরতরে নির্বাসিত হবে এমন শঙ্কাই প্রতিয়মান হচ্ছে। সেই সাথে বেহারারাও এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পালকী এখন  ঠাঁই করে নিয়েছে জাদুঘরে। প্রাচীন ও মধ্য যুগের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে পালকি এখন আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ মাত্র। 

সিরাজগঞ্জ সদরের রমেশ চন্দ্র (৫৫) জানান, এখনও আমাদের কাছে পালকি আছে খুব যত্ন করে স্মৃতি হিসাবে রেখে দিয়েছি।  বছরে দু-একবার ভাড়া আসে। আগের মতো ভাড়া না পাওয়ায় এখন আমরা অন্য পেশা বেছে নিয়েছি।

রায়গঞ্জের সত্যজিৎ বাগদীর ছেলে হরিদাস বাগদী (৫০) জানান, বিয়েতে পালকির ব্যবহার না থাকায় আমাদের অনেকেই বেহারার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। পালকি'র চাহিদা না থাকার কারণে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। সারা মাসেও ১টি বিয়ের বায়না আসেনা তাই আমাদের জীবন কাটছে অতি কষ্টে।

সিরাজগঞ্জ জেলায় এখন আর পালকি যেনো চোখেই পড়ে না। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ বাহনটি এখন প্রায় বিলুপ্তির  পথে। তবে এখনও কোথাও কোথাও শখের বসে কিংবা ভিন্নভাবে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে অনেকেই পালকির খোঁজ করেন। এই পালকি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বাংলার মানুষের হাজার বছরের ঐতিহ্য হয়ে চিরকাল রয়ে যাবে।

� পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ �







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: [email protected]
কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status