হত্যার পর জাহাঙ্গীরের কর্মী জুয়েলের লাশ গাছে ঝুলিয়ে পেটায় সন্ত্রাসীরা
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Tuesday, 30 July, 2024, 7:14 PM
হত্যার পর জাহাঙ্গীরের কর্মী জুয়েলের লাশ গাছে ঝুলিয়ে পেটায় সন্ত্রাসীরা
ছেলের জন্য কেঁদে কেঁদে চোখের জল শুকিয়ে গেছে বৃদ্ধ বারেক মোল্লার। তার গগনবিদারী আর্তনাদ কেউ থামাতে পারছে না। স্ত্রীকে হারানোর পর একমাত্র ছেলে জুয়েল মোল্লাই ছিলেন বারেক মোল্লার ভরসা।
জুয়েল মোল্লা তার বৃদ্ধ বাবাকে তিনবেলা রান্না করে খাওয়াতেন। জামা কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করে দিতেন জুয়েল। সেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন বারেক মোল্লা।
কোটা আন্দোলনের সময় গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের গাড়িবহরের সঙ্গী হয়ে জুয়েল মোল্লা ১৯ জুলাই ঢাকায় রওনা করেন। গাড়িবহরটি টঙ্গী ব্রিজ পার হয়ে উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় গিয়ে পৌঁছলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মিশে থাকা সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন।
হামলায় সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, কাউন্সিলর মীর ওসমান গনি কাজল, কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদুল হাসান বিল্লালসহ অন্তত ৫০ নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় জাহাঙ্গীর আলমকে বাঁচাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের আক্রোশে পড়েন জুয়েল মোল্লা। সন্ত্রাসীরা জুয়েল মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করে একটি গাছের সঙ্গে পা উপর দিকে ঝুলিয়ে রাখে। প্রায় দুই ঘণ্টা ঝুলে থাকার পর বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওপেন ফায়ার করে এলাকা ফাঁকা করে জুয়েল মোল্লার লাশ এবং একটি বাড়ির বাথরুমে আটকে থাকা জাহাঙ্গীর আলম ও হামলায় আহত তার কয়েক সঙ্গীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
জুয়েল মোল্লার বাড়ি মহানগরের চান্দরা গ্রামে। বারেক মোল্লা তার স্ত্রীকে হারিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একমাত্র ছেলে হামিদুল ইসলাম জুয়েল মোল্লাকে নিয়েই ছিল তার সংসার।
জুয়েল মোল্লা শুরুর দিকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে যুবলীগের সদস্য হন। গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ছিল তার গভীর সম্পর্ক। জুয়েলকে সব সময় নিজের কাছাকাছি রাখতেন জাহাঙ্গীর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পিটুনিতে গুরুতর আহত জুয়েল মোল্লার চার হাত-পা বেঁধে ফেলে একদল সন্ত্রাসী। পরে দড়ি ও ডিশের তার দিয়ে বাঁধা জুয়েলের হাত-পায়ের মাঝখানের ফাঁকা স্থান দিয়ে বাঁশ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব পাশের একটি বটগাছে জুয়েল মোল্লাকে ঝুলিয়ে আবারো নিথর নিস্তব্ধ ঝুলন্ত মরদেহের ওপর চলে মারপিট। এভাবে লাশের ওপরই চলে নির্মম নির্যাতন। গাছে ঝুলিয়ে জুয়েলের লাশের ওপর চালানো নির্যাতনের একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সুযোগ নেওয়া সন্ত্রাসীরা প্রথমে জাহাঙ্গীরের ওপর হামলা চালায়। ইটপাটকেল লাঠিসোটার আঘাতে তার মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। এ সময় জাহাঙ্গীরের ওপর আঘাত ফেরাতে এগিয়ে যান জুয়েল মোল্লা। তখন জুয়েল মোল্লাকে জাহাঙ্গীরের পিএস আখ্যা দিয়ে তাকে ধরে ফেলে। শুরু হয় মধ্যযুগীয় নির্যাতন। গুরুতর আহতাবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ৩৩ নম্বর রোডের একটি বাড়ির ৭ তলার বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নেন।
তারা আরও জানান, জাহাঙ্গীর আলমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই বাড়ির ছাদ পর্যন্ত গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাহাঙ্গীর আলমকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে এবং মাথায় ১৭টি সেলাই দেওয়া হয়। পরদিন ভোরে বিশেষ একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার তার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, জাহাঙ্গীর শঙ্কামুক্ত হলেও অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।
জুয়েলের বাবা বারেক মোল্লা বলেন, আমার কলিজার টুকরাটার কী অপরাধ ছিল। এভাবেই কি মানুষকে মানুষ মারতে পারে। ওদের বুকটা কি একবারও কাঁপল না? আমার ছেলের হত্যার বিচার দেখেই যেন আমার মরণ হয়।