প্রতিদিন বিভিন্ন রগে আক্রান্ত হয় মানুষ। কিছু রোখ আছে যেগুলো হলে সারাজীবন সাবধানে চলতে হয়।এরমধ্যে আছে হৃদরোগ। বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যায় হৃদরোগে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে অল্প বয়সেও হৃদরোগে আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এ থেকেই বোধা যায় সুস্থ থাকতে হলে হৃদরোগ প্রতিরোধ দরকার কেন।
চিকিৎসকরা বলছেন হৃদরোগের চিকিৎসার চেয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ উত্তম। আর এ ক্ষেত্রে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বলছেন ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক নূরুল আলম। চিকিৎসকদের মতে যে কোনো শারীরিক নড়াচড়া যেটাতে দেহের ঐচ্ছিক পেশী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে এবং পেশীর এই কাজের জন্য ক্যালরি বা শক্তির ব্যয় ঘটে সেটিই শারীরিক পরিশ্রম বা ফিজিক্যাল এক্টিভিটি।
ব্যায়াম বা শারীরিক শ্রমের মূল উদ্দেশ্যই হল অতিরিক্ত মেদ বা ক্যালরি বার্ন করা। তাই খেলাধুলা, হাঁটাচলা, গৃহস্থালির কাজ, ভ্রমণ, বিনোদনমূলক কাজ কিংবা শরীরচর্চার মতো কাজ করতে হবে প্রতিদিন ।
কোন ধরণের ব্যায়াম বা পরিশ্রম কতটা দরকার চিকিৎসকরা বলছেন হার্ট সুস্থ রাখতে শারীরিক শ্রম, খাবার দাবার ও ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ- এটি একজন মানুষকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন আছে যে ঠিক কোন ধরণের পরিশ্রম কতটা করা উচিত হার্ট সুস্থ রাখার জন্য। ডাঃ নূরুল আলম বলছেন হার্ট সুস্থ রাখার জন্য সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটা দরকার। কিন্তু কারও যদি তেমন সময় না থাকে বা সুযোগ না হয় তাহলে তাকে বাসায় বা কর্মক্ষেত্রে হেটে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা, অফিস বা বাসাতেই হাঁটা কিংবা অফিসে আসার সময় বা বাসায় যাওয়ার সময় গাড়ী একটু দুরে রেখে হেটে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। আসলে সব পরিশ্রম বা ব্যায়াম সব বয়সের সবাই হয়তো পারবেন না। সে কারণে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এটি করা যেতে পারে।
তার মতে হার্টের জন্য দরকার একটু দ্রুত গতিতে হাঁটা, যা হার্টের রেট বাড়াতে সহায়তা করবে। আবার হাঁটা ছাড়াও সাঁতার ও সাইক্লিংয়ের মতো ব্যায়াম হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু এটি বয়স ভেদে সবার জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। এজন্যই হাঁটাহাঁটির বিষয়টিই সবাইকে বেশি জোর দিয়ে বলা হয়।
কিন্তু যাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পারিবারিক ইতিহাস আছে কিংবা ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা আছে তাদের আগে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো তার জন্য কোন পরিশ্রম বা ব্যায়াম কার্যকর হবে তা ঠিক করে নিতে হবে।
কোন বয়সে কতটুকু শারীরিক পরিশ্রম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ হলো কিশোর বয়সে বিশেষ করে ৫-১৭ বছর বয়স প্রতিদিন প্রায় এক ঘণ্টা ভালোভাবে শারীরিক পরিশ্রম করা দরকার । বিশেষ করে ওই বয়সে পেশী ও হাড়কে শক্তিশালী করে এমন কোন ব্যায়াম বা শরীরচর্চা সপ্তাহে অন্তত তিন বার করা উচিত। এক্ষেত্রে খেলাধুলা ভালো ভূমিকা পালন করে।
আর আঠার বছরের বেশি বয়সীদের আরও উচ্চমাত্রার শারীরিক পরিশ্রম করা দরকার। তাদের মাঝারি ও উচ্চমাত্রার ব্যায়াম বা শরীর চর্চার মতো কাজে বেশি সময় দিতে হবে। একই সাথে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী হাড় শক্তিশালী করে এমন ব্যায়াম সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার করা দরকার।