ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩ মাঘ ১৪৩১
হাজার হাজার কোটি টাকা থেকেও বাংলাদেশের বড় ক্ষতি কী হলো?
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Monday, 29 July, 2024, 1:51 PM
সর্বশেষ আপডেট: Monday, 29 July, 2024, 2:02 PM

হাজার হাজার কোটি টাকা থেকেও বাংলাদেশের বড় ক্ষতি কী হলো?

হাজার হাজার কোটি টাকা থেকেও বাংলাদেশের বড় ক্ষতি কী হলো?

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে করা আন্দোলন ও চলমান কারফিউয়ের প্রভাবে দেশের চ্যালেঞ্জিং অর্থনীতি আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।


এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতময় পরিস্থিতিতে দেশের মোট অর্থনীতির ৫০ হাজার কোটি টাকার থেকেও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। তবে এ কয়দিনে অর্থের যতই ক্ষতি হোক, এটিকে প্রাথমিক ক্ষতি ধরে বাংলাদেশকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির জন্য প্রস্তুত হতে হবে বলে জানান অর্থনীতিবিদরা।

চলতি মাসের ১৫ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া মৃত্যুর খবর প্রসঙ্গে রোববার (২৮ জুলাই) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত এ আন্দোলনকে ঘিরে মৃতের সংখ্যা ১৪৭।

এই বিশাল সংখ্যক মৃত্যুর হিসাবের পাশাপাশি প্রতিদিনই আসছে খাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ক্ষতির নানামুখী পরিসংখ্যান। একেকটি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠন খাতভিত্তিক এসব ক্ষতির চিত্র দেখালেও সর্বোপরি এ ক্ষতির পরিমাণ কত তা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া যায়নি কোনো তথ্য।

কেউ বলছেন সর্বসাকুল্যে এই ক্ষতির পরিমাণ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, কেউবা বলছেন ৫০ হাজার কোটি আবার অন্য কোনো অর্থনীতিবিদের হিসাবে এই ক্ষতি ৮০ হাজার কোটি টাকা।

ক্ষতির পরিমাণ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজি স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবির সময় সংবাদকে বলেন, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নানামুখী প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় এ কয়দিনে রাষ্ট্রের মোট ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন ধরলে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং সর্বোচ্চ ধরলে ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
 
এই পরিমাণ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বাংলাদেশের কতদিন সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ বলেন, অবকাঠামোগত যেসব ক্ষতি হয়েছে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত সময় লাগবে। অন্যদিকে ব্যবসায়িক খাতে যা ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে উঠতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তবে টাকার অঙ্কে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি ধাপে ধাপে বাংলাদেশ পুষিয়ে উঠতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদে এ আন্দোলনে সহিংসতা, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া, আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকা- সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

দেশের একেক খাতের বৈশিষ্ট্য একেক রকম উল্লেখ করে মাহফুজ কবির বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত পোশাকশিল্প। এই খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয় আসে এবং এই খাতটিই সবচেয়ে নাজুক খাত হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। অনেকেই বলছেন বিদেশি ক্রেতারা রফতানি বাজার বদলে ফেলতে পারেন। বাস্তবতা হচ্ছে ইতোমধ্যে অনেক বিদেশি ক্রেতা তাদের রফতানি বাজার বদলে ফেলেছেন। এটি বড় অংশের না হলেও যেসব ক্রেতা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ভিয়েতনাম চলে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লাগবে এবং প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হবে।

যদি এখনই বাণিজ্য, পররাষ্ট্র এবং অর্থ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে সমন্বিত উদ্যোগ না নেয় তাহলে আপতদৃষ্টিতে পোশাক খাতকে যতটা নাজুক দেখা যাচ্ছে, আগামীতে এটি আরও বিপদে পড়বে। এর পাশাপাশি এ কয়দিনে যা ঘটছে সেটি প্রশমনে মন্ত্রণালয় একা শতভাগ করতে পারবে না। এক্ষেত্রে যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী আছেন তারা বাংলাদেশে বাজার ধরে রাখতে বিদেশি ক্রেতাদের অনুরোধ করলে সুফল আশা করা যায় বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

তবে বর্তমানে বিদেশি ক্রেতা থেকে শুরু করে বিদেশি সংস্থাগুলো বাংলাদেশ নিয়ে কী ভাবছে এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান সময় সংবাদকে বলেন, সবদিক থেকে নেতিবাচক খবর আসছে। এ কয়দিনে যা হয়ে গেল তা অকল্পনীয়। বিদেশি নানা সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এতটুকুই বোঝা যাচ্ছে আপাতত তারা বাংলাদেশ নিয়ে ইতিবাচক কিছু ভাবছেন না।

এতদিন ধরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ নিজের যে ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছে তা এ কয়দিনে হুমকির মুখে পড়েছে উল্লেখ করে আনিস বলেন, আর্থিক ক্ষতি সামলে ওঠা যাবে। কিন্তু অবস্তুগত যা কিছু হারিয়েছে বাংলাদেশ তা পুনরুদ্ধারে কতদিন সময় লাগবে, আদৌ পুনরুদ্ধার করা যাবে কিনা এটিই এখন বড় অনিশ্চয়তা।

তবে পোশাক খাতের এই ক্ষতি সামলে উঠতে পারলেও বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসবে বৈদেশিক বিনিয়োগে। বিশেষ করে জিটুজি পর্যায়ের বিনিয়োগ অনেকটা সরকারের আলোচনার টেবিলের দক্ষতার ওপর নির্ভর করলেও, প্রাইভেট খাতের বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশকে ভুগতে হবে। বাংলাদেশে প্রাইভেট খাতের অনেক বিনিয়োগ পাইপলাইনে আছে। যারা সংঘাতের এ রূপ দেখেছে তারা আর যা হোক এখানে বিনিয়োগ করতে কয়েক দফা চিন্তা করবে। বিশেষ করে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামোর পেছনে সরকার যে পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে তার বিপরীতে প্রাইভেট বিনিয়োগ না আসলে দেশীয় অর্থনীতি বিপদে পড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ মাহফুজ।

এসব তাত্ত্বিক হিসাব-নিকাশের বাইরে একটি বিষয় স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে- সরকারের সঙ্গে দেশের বড় অংশের জনগণের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্বের কারণে দেশের জনগণকে রাষ্ট্রের কল্যাণে সম্পৃক্ত করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। বিশেষ করে বৈধ চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সের ওপর বড় রকমের ধাক্কা আসতে পারে উল্লেখ করে মাহফুজ কবির বলেন, ইতোমধ্যে সংঘাতের এ কয়দিনে ১ বিলিয়ন ডলারের মতো বৈদেশিক মুদ্রা দেশে হুন্ডির মাধ্যমে প্রবেশ করেছে। যেভাবেই হোক সরাসরি সরকার বা এনজিওর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে এ দূরত্ব ঘোচাতে না পারলে বিপদ আরও বাড়বে।

সদ্য সমাপ্ত সংঘাতের কারণে দেশের রেমিট্যান্সে কী ধরণের প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অতনু রব্বানী বলেন, বর্তমানে যে আস্থা বা বিশ্বাসের ফাঁটল দেখা দিয়েছে সেটি সমাধানের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু প্রবাসীরা তখনই বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাবে যখন তারা ভালো দাম পাবে। এ সুযোগে হুন্ডি যদি তাদের সুবিধা আরও বাড়িয়ে দেয় তাহলে রেমিট্যান্সের ওপর চাপ পড়বে।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ। কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status