আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৮ বার্তা দিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
নতুন সময় ডেস্ক
|
![]() আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ৮ বার্তা দিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামের বক্তব্য’ শিরোনামে ফেইসবুকে নতুন এ বার্তা পোস্ট দিয়েছেন তিন সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদ। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৃথক বার্তায় নতুন কিছু কর্মসূচির কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ। পরে রাত সোয়া ১২টায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি মামলায় জড়িত ও গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য 'লিগ্যাল এইড ফর স্টুডেন্টস' গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে 'ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স' গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় মেডিকেল শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়কদের স্ব-উদ্যোগে এটি গঠনের আহ্বান করা হয়। দেশজুড়ে নজিরবিহীন সহিংসতা, প্রাণহানির মধ্যে কারফিউ জারির সঙ্গে সেনা মোতায়েনের পর বৃহস্পতিবার প্রথমবার এমন বার্তা দিলেন আন্দোলনের এই সমন্বয়করা। তাদের সর্বশেষ কর্মসূচি ছিল ১৮ জুলাইয়ের কমপ্লিট শাটডাউন। নাহিদ ইসলামের বার্তায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে আন্দোলন সমন্বয়কারী ও সংগঠকদের নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ সম্পর্কে বলা হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া জারি করা কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে গ্রহণ না করার কথা তুলে ধরে নাহিদ বলেন, “যথাযথ সংলাপের পরিবেশ তৈরি করে নীতিনির্ধারণী জায়গায় সকল পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। “সরকার চাইলে যেকোনো সময়ই ইচ্ছামত কোটা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে পারে। তাই অংশীজনদের অংশগ্রহণে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে, যা কোটা পদ্ধতির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করবে। কোটার যেকোনো পরিবর্তন এই কমিশনের সুপারিশ সাপেক্ষে হতে হবে। আমাদের একদফার সংসদে আইন পাশের বিষয়টি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই কোটা সমস্যার এখনও চূড়ান্ত সমাধান হয়নি।” তিনি বলেন, “২০১৮ সালেও আন্দোলনের চাপে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। ৬ বছরেই সেটা বাতিল করা হয়৷ আমরা এই পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপনের খেলায় আর বিশ্বাস করি না।” বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই মন্তব্য করে নাহিদের অভিযোগ, “তাই প্রজ্ঞাপন জারির সাথেই এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না। ছাত্র-নাগরিক হত্যা ও গুম-খুনের বিচার, রাষ্ট্রীয় ক্ষয়ক্ষতির বিচার, মামলা প্রত্যাহার ও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তি, আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ এবং সকল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির উৎখাত ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারের দাবিতে দফাভিত্তিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।” শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের করণীয় হিসেবে আট দফা বার্তায় বলা হয় >>রংপুরের আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের স্মরণ করুন। তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করুন। তাদের প্রতিবাদী স্পিরিটকে ধারণ করুন। শহীদদের কবর জিয়ারত করুন। তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করুন। >>হাসপাতালে প্রচুর মানুষ আহত অবস্থায় কাতরাচ্ছে। হাসপাতালে যান, তাদেরকে যথাসম্ভব সহোযোগিতা করার চেষ্টা করুন। আমরা ঢাকা থেকে দ্রুতই একটা ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স গঠনের উদ্যোগ নিব। >>এখনেও অনেক লাশের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়নি। সক্ষমতা থাকলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করতে সহায়তা করুন৷ মর্যাদার সাথে তাদের দাফন করুন। জানাজায় অংশগ্রহণ করুন। >>প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে ও এলাকায় কারা শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করুন ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ করুন৷ আমরা পরবর্তীতে সমন্বয় করব। >>যেসব সন্ত্রাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হত্যা ও হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল, তাদেক চিহ্নিত করে রাখুন। >>যারা যে স্থানে আন্দোলন করেছেন নতুন করে সংগঠিত হন। সকলে নিরাপদে থাকুন, চিকিৎসা নিন এবং গ্রেপ্তার এড়ান। ফেইসবুকে ক্ষোভ না ঝেড়ে মাঠের প্রস্তুতি নিন। ইন্টারনেটনির্ভর না হয়ে বিকল্প কিছু পরিকল্পনা ভাবুন। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সকলের সাথে যোগাযোগ করব। >>শিক্ষার্থীরা যার যার ক্যাম্পাস ও হল খোলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দিন। শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করুন। >>যেসকল শিক্ষার্থী ভাই ও বোন প্রবাসে আছেন আন্তর্জাতিকভাবে এই ক্র্যাকডাউন ও হত্যা-নিপীড়ন প্রচার করুন। বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্র-নাগরিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান। ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার’ সেই সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে নাহিদ বলেন, “শুক্রবার ১৯ জুলাই রাত ৮ থেকে ১০টা পর্যন্ত আমাকে নানা পক্ষ থেকে জোরাজুরি করা হয় সরকারের সাথে আলোচনায় বসার জন্য এবং কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য। আমি সংলাপের আহ্বানকে বরাবরের মত প্রত্যাখ্যান করি। “পরে কারফিউ এর ভেতরেও শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহতের ঘোষণা দিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি লিখি এবং বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে মেসেজটি পৌঁছাই। কিন্তু কোনো ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদটি রাতে প্রচার করা হয়নি।” তিনি বলেন, “পরের ঘটনা আপনারা সকলেই জানেন- আমাকে সেই রাতেই তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সাথে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সমন্বয়ককে সেই রাতে গুম করা হয়। পরের ঘটনাক্রম থেকে আমাদের বিচ্ছিন্ন করতে এবং আমাদের নেতৃত্ব ও নির্দেশনা ঠেকাতে এই গুমের পরিকল্পনা। “ইন্টারনেট বন্ধ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ সরকারের কব্জায় থাকায় যেসব সমন্বয়ক বাহিরে ছিল তাদের নির্দেশনা প্রচার করা হয়নি অথবা বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। পুরো সময়টায় আমাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।” যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে আট দফা ও নয় দফা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আট দফা ও নয় দফার সাথে কোনো নীতিগতবিরোধ নেই। মূল বক্তব্য একই। “যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক হলে সকলের সাথে আলোচনা করে আমরা চূড়ান্ত বক্তব্য ও কর্মপরিকল্পনা সকলের সামনে পেশ করবো।” নাহিদ বলেন, “এখন আমাদের জরুরি চারটি দাবি হলো- ইন্টারনেট খুলে দেওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার করে সকল ক্যাম্পাসের হল খুলে দেওয়া, কারফিউ প্রত্যাহার করা এবং সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। “আমাদের দুটি দাবি ইতোমধ্যে আংশিক পূরণ হলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস খুলে দিতে হবে ও কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে।” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৃথক বার্তায় নতুন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ। তার বার্তায় বলা হয়েছে, "শহীদদের স্মরণে শুক্রবার দেশব্যাপী মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সব ধর্মীয় স্থানে প্রার্থনা, বাদ জুমা দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজা এবং শহীদদের স্মরণে শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। গ্রাম, হাট-বাজার, উপজেলা শহর, জেলা শহরসহ সর্বত্র মসজিদ থেকে গায়েবানা জানাজা শেষে শোক মিছিল বের করুন। “প্রত্যেক শহীদের নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করুন। নিষ্ঠাবান শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান, ছাত্রদের স্মৃতিসম্ভ তৈরিতে সহযোগিতা করুন।" এদিকে দুপুরে অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলামের নামে আন্দোলনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে এক লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, "আমাদের ভাইদের শহিদ করা হয়েছে, আমাদেরকে হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে, রাজপথে এখনো গুলি চলছে — এই অবস্থায় আমরা কোনো ধরনের সংলাপে যাবো না। সরকারকে সংলাপের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।" "ইন্টারনেট বন্ধ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ সরকারের কব্জায় থাকায় যেসব সমন্বয়ক বাহিরে ছিল তাদের নির্দেশনা প্রচার করা হয়নি অথবা বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে। পুরো সময়টায় আমাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।" |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |