ট্যুর অপারেটররা গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন: বেঁচে থাকার প্রশ্নে সঠিক পদ্ধতিতে ভ্যাট দিতে রাজি
মজিবুর রহমান পান্না
|
![]() ট্যুর অপারেটররা গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন: বেঁচে থাকার প্রশ্নে সঠিক পদ্ধতিতে ভ্যাট দিতে রাজি নতুন সময়: ট্যুরিজম ডেভেলেপার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিডাব) কি? টিডাব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য কি ছিল? এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? জহিরুল ইসলাম ডালটন: টিডাব হচ্ছে ট্যুরিজম ডেভেলেপার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ । এটি একটি এপেক্স বডি যেখানে ট্যুর অপারেটরাই মেম্বার হতে পারে। এছাড়া হোটেল , রিসোর্টগুলোও আমাদের মেম্বার হতে পারে। এয়ারলাইনস গুলোও আমাদের আসোসিয়েশনের মেম্বার। টিডাবের মূল লক্ষ্য উহার মেম্বারদের স্বার্থ রক্ষা করা। এই এসোসিয়েশন বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে সরকারের সাথে বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী কাজে সরকারকে সহযোগীতা করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে পর্যটন খাতের উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করছে। ইন্ডাস্ট্রির স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা নিয়ে সরকারের সাথে বুঝা-পড়া করে সমাধানের চেষ্টা করে। পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরণের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধি ও দীর্ঘদিনের পূরনো সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ ও সহযোগিতা করে । এই ইন্ডাস্ট্রির বেশকিছু স্টেক হোল্ডার আছে যেমন, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড, এয়ারলাইন্স, নদী ও স্থলপথে ব্যবহৃত ট্রান্সপোটেশন, হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ট্যুরিজম নিয়ে বিশেষায়িত মিডিয়া এবং এখাতের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আরো যত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান আছে সবাইকে নিয়ে একসাথে স্মার্ট ও পজেটিভ বাংলাদেশ বিনির্মানে দেশের অবস্থানকে গ্লোবালি রিপ্রেজেন্ট করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একটি অন্যতম ট্যুরিস্ট কান্ট্রি হিসেবে পরিচিত করারও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আমরা সকল স্টেক হোল্ডারদের একসাথ করে সরকারের সাথে বাংলাদেশের ট্যুরিজম সেক্টরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। নতুন সময়: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে ট্যুর অপারেটরদের ভূমিকা কতখানি? জহিরুল ইসলাম ডালটন: ট্যুর অপারেটর আপনাকে একটা ডেস্টিনেশনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যত ধরণের সহযোগীতা লাগে, ভিসা প্রসেসিং থেকে শুরু করে, এয়ারটিকেটিং, হোটেল বুকিং, ট্রান্সপোর্টেশন, ফুডিং ও রেস্টুরেন্ট ইস্যু সহ সব কিছু মিলিয়ে যে প্যাকেজ তৈরি করা হয় সেটাই ট্যুর অপারেটরদের কাজ। ট্যুর অপারেটর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের লোকেশন গুলো নিয়ে প্যাকেজ তৈরি করে। সেখানে শুধু ভিসা ছাড়া সব কাজ যেমন এয়ার টিকেট, ঘুরার জন্যে ট্রান্সপোর্ট এরেঞ্জ, হোটেল বুকিং ও ট্যুরিস্টের কাংখিত জায়গা পরিদর্শন বা সাইট সিয়িং এর ব্যবস্থা সব কিছুই করতে হয় অপারেটরকে। আর এই কাজটা করতে এসে ট্যুর অপারেটররা প্রথমত ডেস্টিনেশন প্রোমোট করে। নিজ দেশকে পরিচিত করে তুলতে এই যে প্রমোটের কাজটা কিন্তু অপারেটররাই করছে। এই প্রোমোশনের মধ্যে এয়ার টিকেট, হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিভিন্নজনের। সবার প্রোডাক্ট একসাথ করে সেটাকে ব্রান্ডিং করে একজনকে ট্যুরিস্টকে প্রপার গাইড সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসার দায়িত্বটা ট্যুর অপারেটররাই পালন করে। নতুন সময়: পর্যটন খাতে ট্যুর অপারেটর সেবার উপর আরোপিত ভ্যাট আপনাদের এবং ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রির উপর কি ধরণের প্রভাব পড়তে পারে? জহিরুল ইসলাম ডালটন: সরকার এবং বাংলাদেশ বড় যে ক্ষতির সম্মুখীন বা অপারেটররাও যেখানে ধরা খেয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার অবস্থায় চলে যাচ্ছে সেটা হলো এদেশর প্রায় ৩০ শতাংশ হোটেল ও টিকেট বুকিংয়ের বড় রেভিনিউ, বুকিং ডটকম এর মতো প্রতিষ্ঠানদের হাতে চলে যাচ্ছে। যারা বিনা ট্রেড লাইসেন্স, বিনা ট্যাক্স, বিনা অফিস ও স্টাফ এমনকি এদেশে কোন ব্যাংক একাউন্ট ছাড়াই ব্যবসা করে যাচ্ছে। এরা বাংলাদেশকে একরকম বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনলাইনে বিদেশে বসে হোটেলগুলির মোট সেলের রেভিনিউ নিয়ে যাচ্ছে। অনলাইন বুকিং সিস্টেমে যে কেউ অনলাইনে হোটেল বা টিকেট বুকি করতে পারে এবং হোটেলে এসে থাকতে পারে। এতে করে হোটেলের পুরো সেলের ৩০% ব্যবসা অনলাইন বুকিংয়ের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে ঐসব ব্যবসায়ীদের হাতে। ধরুন একটা হোটেল ৫ কোটি টাকা সেল করল তখন এই পুরো সেলের ৩০% চলে যাচ্ছে অনলাইন বুকিং কোম্পানিগুলোতে। তারা বাংলাদেশ সরকারকে কোনো রকম ট্যাক্স প্রদান না করেই ব্যবসা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে কিভাবে টাকাগুলো গ্রহণ করছে বা বাংলাদেশের হোটেলগুলো কিভাবে এই টাকা বুকিং কোম্পানিগুলোতে পাঠাচ্ছে। এটা প্রশ্ন? এটা আপনারাই বের করেন। ঐ হোটেলগুলো অনলাইন কোমপানিগুলোকে ১২-১৫% কমিশন দেয় ঐ সেলের উপরে। আর এই কমিশনটাও তারা কিভাবে পায়? সে তুলনায় বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটর কোম্পানিগুলোর কথা চিন্তা করেন? বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটর কোম্পানিগুলো কি পায়? যদি আপনি চেইন হোটেলগুলোর কথা বলেন, সে হোটেল গুলো বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের এই কমিশনটা দেয়না। ১১২ ডলার যদি হোটেলর রুম রেন্ট হয় সেখানে ১০০ ডলার রুম রেন্ট আর বাকি ১২ ডলার তারা বুকিং কোম্পানিগুলোর জন্যে কমিশন হিসেবে রেখে দেয়। এই ১২ ডলার কিন্তু হোটেলগুলো বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের দেয়না। তারা বলে তাদের আইন নাই, পলিসী নাই। ইন্টারন্যাশনাল চেইন হোটেল হওয়ায় আমাদের হেড কোয়াটার অন্য দেশে তাই লোকাল অপারেটরদের সাথে তারা এটা করতে পারেনা। এ ধরণের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তারা বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের এই ১২% কমিশন থেকে বঞ্চিত রাখে। এবং এটা বছরের পর বছর ধরে চলছে ফলে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে আর ট্যুর অপারেটররা বঞ্চিত হয় কমিশনের ন্যূন্যতম সুবিধা থেকে। নতুন সময়: বর্তমানে ট্যুর অপারেটর সেবার উপর আরোপিত ভ্যাট নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই, এ ব্যাপারে কিছু বলুন। জহিরুল ইসলাম ডালটন: যে সমস্যাগুলোর কথা বললাম সেগুলো এখন পর্যন্ত অমীমাংসিত রয়ে গেছে। সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কোনো উদোগও নেয়া হয়নি। এই যে ট্যুর অপারেটর সেবার উপর ভ্যাট আরোপ নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অনেকটা মরার উপর খরার খাঁ। ভ্যাটের টাকা সরকারের কাছে যাবে, সরকার সে টাকা বাংলাদেশেই খরচ করবে। এটা আমাদের জন্য পজেটিভ। কিন্তু নেতিবাচক দিকটা হচ্ছে এটার যে ক্ল্যারিফিকেশন সেটা নিয়ে। অর্থ্যাৎ এই ভ্যাট টা কিভাবে নিচেছন? কিসের উপর দিচ্ছি আমরা এই ভ্যাট? সমস্যাটা হচ্ছে – আমরা যখন কোনো ইনভয়েস প্রস্তুত করি এবং সেটা কোনো ক্লায়েন্টকে দেই। আর এই ইনভয়েসের উপর যদি ১৫% ভ্যাট টা নির্ধারণ হয় তাহলে আমরা ক্লায়েন্ট হারাবো। আরো একটু উদাহরণ দিয়ে যদি বলি- ইনভয়েসে হোটেলের রুম ভাড়া যদি আসে ৫০০০/- টাকা, ভ্যাট সহ রুমরেন্ট আসে ৫৫০০/-, একইভাবে যদি এয়ার টিকেট কিনি এবং সেখানে এয়ার টিকেটের ভ্যাট দেই, এবং আমার এআই সহ সব মিলিয়ে মোট টাকা চার্জ করে সেই টাকার উপর আরো ১৫% ভ্যাট যোগ করে যদি ট্যুরিস্টকে অফার করি, সেটা তার জন্যে ওভার ইনভয়েস হয়ে যায়।এই অবস্থায় যদি আমরা অফারটা সেল করি এতে ২টা ঘটনা ঘটে- একটা হলো ঐ ক্লায়েন্ট আমার কাছে আসলে তাকে এক্সট্রা ভ্যাট দিতে হচ্ছে। তার বদলে সে সরাসরি হোটেল বুক করবে, সরাসরি এয়ার টিকেট কিনবে। আমার কাছে আর আসবেনা, যা ট্যুর অপারেটরদের জন্য একটা হুমকি, যার মানে দাঁড়ালো ট্যুর অপারেটরদের ব্যবসা বন্ধ। আর দ্বিতীয় যে ব্যাপারটি সেটি হলো- আমার কাছ থেকে এরকম হাই প্রাইস দেখে ঐ ট্যুরিস্ট অন্যদেশের সিদ্ধান্ত নিবে। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |