শিবালয় বন্দর বাজার রাস্তাটির বেহাল দশা দেখার কেউ নেই
শাহজাহান বিশ্বাস,মানিকগঞ্জ
|
শিবালয় বন্দর বাজার রাস্তাটির বেহাল দশা দেখার কেউ নেই মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আরিচা ঘাটের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হচ্ছে শিবালয় বন্দর বাজার। এ বাজারের যে প্রধান রাস্তাটি রয়েছে, তার বর্তমান অবস্থা একেবারেই বেহাল দশা। যানবাহন চলাচলতো দুরের কথা পায়ে হাটাই কষ্টকর।আরিচা বাসস্ট্যান্ড থেকে গরু হাট পর্যন্ত এক কিলোমিটার জুরে রাস্তাটির মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ফুট রাস্তা একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি নামলেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। এতে বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতা এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এ রাস্তাটি প্রায় দুই বছরের অধিক সময় ধরে এ রকম বেহাল দশা হলেও দেখার যেন কেউ নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথসহ সংশ্লিষ্টদেরকে একাধিকবার জানানোর পরও রাস্তাটি মেরামত না করায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে। স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে পুরাতন এ বন্দর বাজার ব্যবসা বাণিজ্যের দিক দিয়ে অতীত ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শেষ প্রান্তে এবং আরিচা ঘাট সংলগ্ন যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এ বন্দর বাজার। প্রায় তিন হাজার লোকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ বাজারে। সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে এখানে। হাটবারের দিন গরু-ছাগল বহনকারী প্রায় ২শ’ ট্রাক-পিকআপ গাড়ি চলাচল করে এ রাস্তা দিয়ে। আরিচা গরুর হাট ও বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার বেইজের গাড়ি এবং পিসিপোল কারখানার পোল পরিবহনের বড় বড় লরি গাড়ি চলাচলের এক মাত্র রাস্তা এটি। আরিচা থেকে পাটুরিয়া ঘাটে যাওয়ার যে আঞ্চলিক সড়ক তার সংযোগ রয়েছে এ রাস্তার সাথে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫শ’ রিক্সা ও অটো রিক্সা চলাচল করে থাকে। এছাড়া বন্দর বাজারের ব্যবসায়ীদের মালামালা নিয়ে যানবাহন চলাচলের প্রধান রাস্তা এটি। এ রাস্তার পাশেই রয়েছে আবাসিক বাসাবাড়ি, বিআইডব্লিউটিসি’র অফিস। আলমারি,সুকেজসহ নানাবিধ ফার্নিচারের দোকান ও রড, সিমেন্ট,টিন, স্বর্ণের, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, স্টুডিও, হার্ডওয়ার এবং ঔষুধের দোকানসহ নানাবিধ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ রাস্তার দু’ পাশে। ধান, চাল, কাঠ, টিন, মাছের আড়ৎ এবং আস্তর বালু চাতালের ট্রাক চলাচলের এক মাত্র রাস্তা এটি। ভুক্তভোগী ব্যাবসায়ীরা জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে মাঝে মধ্যে নাম মাত্র সংস্কার করা হয়।এতে রাস্তার এ সমস্যা দুর না হয়ে বরং আরো বাড়ে। বর্ষা মৌসুমসহ প্রায় সারা বছরই এ রাস্তার বেহাল দশায় মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। আরিচা ঘাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শুকুর আলী শিকদার বলেন, ৫০ থেকে ৫৫ বছরের পুরানো এ রাস্তাটি দুই বছর ধরে বেহাল দশা হলেও এটি দেখার কেউ নেই। আরিচা ঘাটের এ বন্দর বাজারে প্রায় তিন হাজার ব্যবসায়ীর বসবাস। এখানে একটি গরু-ছাগল ও ধানের হাট রয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে পাটুরিয়া ঘাট ও ঝিটকা হয়ে মানিকগঞ্জেও যাওয়া যায়। এত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি বিগত দুই বছর ধরে ভেঙ্গে রয়েছে, এটা দেখার মতো একটা লোক নাই। রাস্তাটির মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি নামলে হাটু পানি বাজে এ রাস্তা দিয়ে হাটা যায় না। রাস্তাটির মেরামত কাজ না করে রোডস এন্ড হাইওয়ে, না করে এলজিইডি, না করে উপজেলা প্রশাসন। কেউ করে না। তাহলে কি এ রাস্তটি এভাবেই থাকবে? সারাদেশে যখন এত উন্নয়ন হইল, তাহলে আমাদের আরিচা ঘাটের উন্নয়ন হয় না কেন? এটা আমাদের দু:খ। এই রাস্তটি মেরামত করলে আরিচা ঘাটের অনেক উন্নয়ন হবে। অতিদ্রুত এই রাস্তাটি মেরামতের দাবী জানান তিনি। ভ্যানচালক আব্দুর রহমান বলেন, ভাঙ্গাচুড়া এ রাস্তা দিয়ে ভ্যান চালাতে গেলে ভ্যান উল্টে যায়। টায়ার, টিউব, রিং ও ব্যাটারি বসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা অনেক অসুবিধার মধ্যে আছি। রিক্সাচালক বাবুল বলেন, আরিচা বাসস্ট্যান্ড থেকে গরুর হাট পর্যন্ত রাস্তাটির খুব খারাপ অবস্থা। এখানে একটু বৃষ্টি নামলে অনেক পানি জমে। তখন পায়ে হাটাও অনেক কষ্ট হয়। অনেকেই এ রাস্তার কথা শুনলে আসতে চান না। বৃষ্টি হলে এ রাস্তা দিয়ে হাটা যায় না। বয়স্ক ও নারীদের অনেক কষ্ট করে ও সাবধানতার সহিত চলতে হয়। রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করা দরকার। বন্দর বাজারের সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আরিচাতে যখন ঘাট ছিল তখন এ বাজার আরো জমজমাট ছিল। ঘাট চলে যাবার পর কিছুটা স্থবিরতা এসেছিল। কিন্তু সপ্তাহে দুই দিন হাট বসাতে এ বাজার আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এখানে পাশ^বর্তি জেলা ফরিদপুর, রাজবাড়ি, পাবনা এবং মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর, হরিরামপুর এসব পাশ^বর্তি উপজেলা থেকেও লোকজন আসে গরু ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ডাক হয় আরিচা গরু হাট।এ হাট এবারও ৭কোটি টাকারও অধিক ডাক হয়েছে। হাট বারের দিন অসংখ্য গাড়ি যাতায়াত করে থাকে এ রাস্তা দিয়ে।এছাড়া বন্দন ইজারা দিয়ে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার রাজস্ব নিচ্ছে বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ।কিন্তু দীর্ঘ একযুগেরও বেশী সময় ধরে বন্দরের রাস্তা ঘাটের কোন উন্নয়ন নেই।ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের নেই কোন সুযোগ সুবিধা। তাই বন্দর বাজার ব্যাবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে এ বাজারের সকল রাস্তা মেরামতের দাবী জানান তিনি। এলজিইডির শিবালয় থানা ইঞ্জিনিয়ার মোবারক হোসেন বলেন, এ রাস্তাটির বেহাল দশার কথা আমাকে অনেকেই জানিয়েছেন। তাই এটি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। কিন্তু রাস্তাটি আমাদের না বলে মেরামত করতে পারছি না। এটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা। মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করে তার নাগাল পাওয়া যায়নি। শাহজাহান বিশ্বাস, মানিকগঞ্জ থেকে। ০১৭১১-৭৩৩৬৫১। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |