ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
রোববার ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ৩ ফাল্গুন ১৪৩১
নতুন আতঙ্ক রাসেলস ভাইপার, ঝুঁকি মোকাবিলায় যা করণীয়
নতুন সময় প্রতিবেদক
প্রকাশ: Friday, 21 June, 2024, 12:22 PM

নতুন আতঙ্ক রাসেলস ভাইপার, ঝুঁকি মোকাবিলায় যা করণীয়

নতুন আতঙ্ক রাসেলস ভাইপার, ঝুঁকি মোকাবিলায় যা করণীয়

বর্তমানে বাংলাদেশের নতুন এক আতঙ্কের নাম রাসেলস ভাইপার। প্রায় বিলুপ্ত এ সাপটি দেশে তার পরিসর বিস্তার করছে; আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সর্বত্র। এর বিচরণ আগে বরেন্দ্র এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, এমনকি ঢাকার উপকণ্ঠেও দেখা যাচ্ছে।

শুধুমাত্র এ বছরে, রাসেলস ভাইপারের কামড়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপরই এর  কার্যকরী প্রতিরোধব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।

ক্রমবর্ধমান ঘটনা এবং পরিবেশগত প্রভাব

বর্তমানে রাসেলস ভাইপারের বিস্তার এর ছোবলজনিত ঘটনাগুলোর জন্য খাদ্যশৃঙ্খলার ব্যাঘাতকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
 
বন্যপ্রাণী এবং পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ডক্টর আবু সাঈদ বলেন, নির্বিচারে শিয়াল, গুইসাপ এবং বেজির মতো প্রাকৃতিক শিকারী হত্যার জন্য রাসেলস ভাইপার তথা সাপের সংখ্যা বাড়ছে। পরিবেশগত এ ভারসাম্যহীনতা এর উচ্চ প্রজনন হারের জন্য দায়ী।
  
রাসেলস ভাইপার, স্থানীয়ভাবে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া নামে পরিচিত। একটি স্ত্রী সাপ একসঙ্গে ২০ থেকে ৪০টি, কখনো কখনো ৮০টি বাচ্চারও জন্ম দিয়ে থাকে।  ফসলের ক্ষেতে ইঁদুর এবং ব্যাঙের সহজলভ্যতার কারণে এদের সংখ্যা বেশি হারে বাড়ছে।
 
বৈশিষ্ট্য ও ঝুঁকি
রাসেলস ভাইপার বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে একটি। এটি দেখতে অনেকটা বাচ্চা অজগরের মতো। এর একটি চ্যাপ্টা ত্রিভুজাকার মাথা রয়েছে, যাতে রয়েছে গাঢ় বাদামি ছোপছোপ দাগ। দেখতে এমন হওয়ায় এটি সহজেই শুকনো পাতা বা ধানের ক্ষেতের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে।
 
রাসেলস ভাইপার অন্যান্য সাপের মতো নয়। এরা বেশ আক্রমণাত্মক। কোনো কিছু নিজেদের জন্য হুমকি মনে করলেই তারা আক্রমণ করে। আর এ সময় তারা অবিশ্বাস্য গতিতে ছোবল হানে। পুরো এ প্রক্রিয়াটি এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের এক ভাগ সময়ে তারা সম্পন্ন করে। এছাড়া, এরা যখন উত্তেজিত হয়, তখন প্রেসার কুকারের মতো জোরে জোরে হিস হিস শব্দ করে।
  
রাসেলস ভাইপারের বিষ হেমাটোটক্সিক, যা টিস্যুর মারাত্মক ক্ষতি করে। এর এক ছোবলে শরীর দ্রুত ফুলে যায় এবং এর ফলে শরীরের ফুসফুস ও কিডনিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আর দ্রুত চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত স্থান কামড়ের পাঁচ মিনিটের মধ্যে পচতে শুরু করে।

সম্প্রসারণ এবং জনস্বাস্থ্যের হুমকি
এক সময়কার বরেন্দ্র অঞ্চলের রাসেলস ভাইপার এখন পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা নদীর অববাহিকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যাসহ বাংলাদেশের অন্তত ২৫টি জেলায় নিজের বংশ বিস্তার করেছে। এ সম্প্রসারণের ফলে সাপের কামড়ের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে কৃষক এবং জেলেদের মধ্যে যারা প্রায়ই পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়া কাজ করেন, তাদের জন্য এটি বেশি বিপজ্জনক।
 
এছাড়া, সাপের কামড় নিয়ে গ্রামাঞ্চলে যেসব প্রচলিত বিশ্বাস ও কুসংস্কার রয়েছে, তা প্রায়শই এর চিকিৎসাকে বিলম্ব করে। এতে রোগীর সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
  
উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অ্যান্টিভেনম বিতরণ করা হচ্ছে। তবে, সাপের কামড়ের পর রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া জরুরি। কেননা, আইসিইউ সহায়তা ছাড়া এসব রোগীকে বাঁচানো কষ্টসাধ্য। আর রোগীকে হাসপাতালে নিতে দেরি হলে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার মৃত্যু হয়।
 
প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ
রাসেলস ভাইপারের পুনরুত্থান জনস্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪ লাখেরও বেশি সাপের কামড়ের ঘটনা ও এর ফলে ৭ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
 
এসব ঘটনা মোকাবিলায় কার্যকর প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা অপরিহার্য। আর এসব ঘটনা থেকে সুরক্ষার জন্য ডা. আবু সাঈদ কৃষকদের গামবুট পরার পরামর্শ দেন।
 
মিয়ানমারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সেমিনারে এ ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়। দেশটির তাউংডউইংই শহরে করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৯ শতাংশ কৃষক, যারা ফ্যাং-প্রুফ বুট পরেন, তারা সাপের কামড় থেকে নিজেদের সম্পূর্ণ সুরক্ষিত মনে করেন। এ বুটগুলো হালকা, আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী হওয়ায় এগুলো বিনামূল্যে বিতরণ না করলেও ৯৯ শতাংশ কৃষক এগুলো কিনতে ইচ্ছুক।
  
এছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেমিনারে উন্নত প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি, অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ সাপের কামড় প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ডাক্তার, নার্স ও স্থানীয় কমিউনিটির শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়েছে। এই কৌশলগুলো বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
 
সেমিনারে যেসব পরামর্শ দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো:
পপুলেশন স্টাডিজ: সাপের কামড়ের প্রকৃত ঘটনা, মৃত্যুহার এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা সম্পর্কে জানার জন্য গবেষণা করা।
 
সাপ বিতরণের গবেষণা: বিষধর সাপের প্রজাতি বিতরণের জন্য বন বিভাগকে সহায়তা করা।
উন্নত প্রাথমিক চিকিৎসা: প্রেসার প্যাড/ইমোবিলাইজেশন পদ্ধতি প্রয়োগ।
প্রাথমিক অ্যান্টিভেনম সরবরাহ: বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে অ্যান্টিভেনমের প্রাথমিক ব্যবহার সম্পর্কে জানা।
 
সাপ শনাক্তকরণ: সাপ শনাক্তকরণের জন্য র‌্যাপিড টেস্ট প্রয়োগ।
অ্যান্টিভেনমের কার্যকারিতা অধ্যয়ন: নতুন অ্যান্টিভেনম ফর্মুলেশনগুলোর কার্যকারিতা এবং প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গবেষণা করা।
 
শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ: চিকিৎসাকর্মী ও বিভিন্ন সম্প্রায়ের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রচার করা।
 
বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপারের ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা বিশেষ করে কৃষক ও জেলেদের রক্ষা করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, প্রাথমিক চিকিৎসা ও চিকিৎসার উন্নয়ন ও জনসাধারণকে শিক্ষা দেয়ার মধ্যদিয়ে দেশে মারাত্মক এ সাপের ঝুঁকি কমাতে পারে।
  
এছাড়াও অ্যান্টিভেনম সরবরাহ এবং সচেতনতা বাড়ানোর চলমান প্রচেষ্টা এ ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানুষের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
 

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ। কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status