কেন বারবার ডুবছে সিলেট অঞ্চল
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() কেন বারবার ডুবছে সিলেট অঞ্চল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বিপর্যয় হঠাৎ করে হয়নি। প্রতিবছরই হাওর ডোবে; কৃষকের কান্না কেউ শোনে না। কয়েক বছর ডুবছে সিলেট শহরও। বাঁধ নির্মাণকাজে দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে কান্না থামবে না। তারা বলছেন, এমন দুর্যোগ অনেকটা মানবসৃষ্ট। নদী গিলে খাচ্ছে দখলদাররা। অপরিকল্পিত উন্নয়নে বানের পানি এখন আর নামার সুযোগ নেই। বছরের পর বছর গাফিলতি সিলেট অঞ্চলের মানুষের জন্য বয়ে এনেছে ক্ষতি। বন্যার পেছনে অতিবৃষ্টির বাইরে আরও অনেক কারণ দেখছেন গবেষকরাও। তাদের ভাষ্য, নদনদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নাব্য হারিয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ, রাস্তা ও স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়েছে। নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। এসব বন্ধ না হলে সামনে আরও বড় বিপদের শঙ্কা তাদের। প্রকৃতির হেঁয়ালি আচরণ সুনামগঞ্জ সীমান্ত থেকেই ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি এলাকা শুরু। ফলে সেখানকার পানি সরাসরি বাংলাদেশের হাওরে মেশে। ভৈরব কিংবা মেঘনা নদী হয়ে সাগরে চলে যায়। অতীতে বৃষ্টি বেশি হলেও নদী গতিশীল ছিল। এখন নদীতে পানির প্রবাহ নেই বলে মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার কারণে বৃষ্টির ধরন বদলেছে। এখন অনেক ভারী বৃষ্টি হয়। চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হলে তা ছয় থেকে আট ঘণ্টার ভেতরে তাহিরপুরে চলে আসে। সেখানে এসে পানি তো আর দ্রুত নামতে পারছে না। ফলে তখন সেটা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে বন্যা তৈরি করছে। মানবসৃষ্ট কারণেও ডুবছে সিলেট শহর ও হাওরের নদীগুলোর পানি ধারণের সক্ষমতা কমে এসেছে। হাওর, খাল ও পুকুর ভরাট করে উন্নয়ন হচ্ছে। সিলেট নগরের যে উপশহর প্রতিবছরই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়, সেটি আগে ছিল ডিবির হাওর। সেখানে এখন আবাসন করা হয়েছে। ফলে যে পানি এই হাওর ধারণ করত, সেই পানি এখন সিলেট নগরে চলে আসে। একই সঙ্গে হাওরে আরও কয়েকটি বড় বড় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সিলেটের বেশির ভাগ পানি অপসারণের জায়গা সুরমা নদী। কিন্তু জকিগঞ্জের অমলসিদ থেকে সুনামগঞ্জের ভাটিতে মেঘনা নদী পর্যন্ত এলাকা সুরমা কখনও খনন হয়নি। এ কারণে পানি দ্রুত নামছে না। এর বাইরে কিশোরগঞ্জে হাওরের মধ্যখান দখল করে মিঠামইন-অষ্টগ্রাম রাস্তা করা হয়েছে, সেটিও সিলেটে জলমগ্ন হওয়ার কারণ বলে মনে করেন কেউ কেউ। সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল হাদী বলেন, প্রকৃতিগত কারণে সিলেট ঝুঁকিপূর্ণ। ৩২টি আন্তঃসীমান্ত নদীর মধ্যে মাত্র আটটি নদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্বীকৃত। নদীকে নদী হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে কীভাবে উদ্যোগ নেওয়া হবে? সিলেটের বিশ্বনাথের বাসিয়া নদীসহ অনেক নদীর উৎসমুখ বন্ধ ও কোনটি আবার মরে গেছে। শুধু সুরমা ও কুশিয়ারা খনন করে বন্যা থেকে মুক্তি মিলবে না। বন্যার কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, প্রতিবছর বন্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে বন্যার ধরন নিয়ে। এর পেছনে একক কোনো কিছুকে দায়ী করা যাবে না। এর দায় সবার। কতটা প্রভাব ইটনা-মিঠামইন সড়কের কিশোরগঞ্জের ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কের কারণে সিলেট অঞ্চলের বন্যার আকার মারাত্মক ধারণ করেছে– এমন বিষয় নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ওই সড়ককে দায়ী করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। বাস্তবে সিলেটের পানি প্রবাহে কতটুকু সেই সড়কটি অন্তরায় তার কোনো গবেষণা নেই। সিলেট ও সুনামগঞ্জের চলমান বন্যার জন্য ওই সড়ক দায়ী কিনা– এমন প্রশ্নে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সমকালকে বলেন, মিঠামইন সড়কের দূরত্ব সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে অনেক দূর। হাজার হাজার রাস্তা হয়েছে। সেটা এককভাবে দায়ী কীভাবে হয়, সেই সরলীকরণ করতে রাজি নই। পরিকল্পনা নিয়ে এগুলো সমাধান আসবে। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, মিঠামইন সড়কটি বন্যার কারণ বলে মনে হয় না। এখনও সেই সড়কের প্রভাব তেমন পড়েনি। ভবিষ্যতে পড়তে পারে। কারণ কয়েক বছর পর ওই এলাকার হাওর ও বিল ভরাট হয়ে যেতে পারে। তখন সিলেট অঞ্চলে প্রভাব পড়বে। সিলেট শহর রক্ষার জন্য নদীর তীরে বাঁধ প্রয়োজন। |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |