মাংস কতটা উপকারী? ঈদে মাংস কতটুকু খাবেন?
নতুন সময় প্রতিবেদক
|
![]() মাংস কতটা উপকারী? ঈদে মাংস কতটুকু খাবেন? মাংস আমাদের প্রিয় এবং শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি খাবার। বর্তমান বাজারমূল্যের কারণে বেশির ভাগ মানুষের পক্ষে সারা বছর মাংস কিনে খাওয়া সম্ভব হয় না। তাই এই ঈদ মাংস খাওয়া এবং সংরক্ষণের উপযুক্ত সময়। মাংস সম্পর্কে আমাদের সবার মধ্যে অনেক ধারণা প্রচলিত আছে, যেমন– মাংস খেলে আমাদের শরীরে মেদ বা কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়, যা থেকে হতে পারে হৃদ্রোগ, হাইপারটেনশন, স্ট্রোক ইত্যাদি অসুখ। অথচ এর চেয়ে বেশি সমস্যা হতে পারে আমরা যদি বেশি বেশি সাদা চাল, সাদা আটা ময়দা, অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার, প্যাকেটজাত রেডিমেড খাবার, বোতলজাত এনার্জি ও কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি খাবার হিসেবে গ্রহণ করি। প্রতি ১০০ গ্রাম ডিমে যতটুকু কোলেস্টেরল থাকে, ১০০ গ্রাম মাংসে এর চেয়ে অনেক কম কোলেস্টেরল থাকে। সঠিক নিয়মে রান্না করে পরিমিত পরিমাণে মাংস খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে, মাংস থেকে আমরা প্রচুর পুষ্টি উপাদান পাব। যা অন্য অনেক খাবারে পাওয়া যায় না। মাংসের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রথম শ্রেণির আমিষ, ভিটামিন (এ, বি২, বি৩, বি৬, বি১২)ও মিনারেল (জিংক,আয়রন, ফসফরাস, সেলেনিয়াম)। আমিষ দেহের বৃদ্ধিসাধন ও ক্ষয়পূরণে সহায়তা করে। ভিটামিন বি খাদ্য থেকে শক্তি তৈরি, স্নায়ুর গঠন ঠিক রাখে এবং খাবারের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে আয়রন, যা সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফসফরাস হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়তা করে এবং ক্ষয়রোধ করে। জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন টেস্টোস্টেরন তৈরিতে সহায়তা করে। মাংসে থাকা কোলেস্টেরল শরীরের গুরুত্বপূর্ণ হরমোন সেক্স হরমোন (টেস্টোস্টেরন,এস্ট্রোজেন, প্রজেস্টোরন) ও অ্যাড্রেনাল হরমোন তৈরিতে সহায়তা করে। আমাদের মস্তিষ্কের (ব্রেইনের) গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে এই কোলেস্টেরল। ২-১৮ বছরের শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের জন্য মাংস হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। শিশুদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অনেক কিছুই আমরা মাংস থেকে পেতে পারি। কোরবানির মাংস ভালো রাখতে যা করবেনকোরবানির মাংস ভালো রাখতে যা করবেন মাংসে থাকা এসেন্সিয়াল ফ্যাটি এসিড (লিনোলিক এসিড) ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সাধারণত এক বছর বয়স থেকে মানুষ পরিমিত পরিমাণে মাংস গ্রহণ করতে পারে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ থেকে ৫ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করতে হয়। যা পাওয়া যেতে পারে মাছ, মাংস, দুধ,ডিম, ডাল, বাদাম, বিচিজাতীয় খাবার থেকে। এগুলো বিভিন্ন খাবার থেকে নিতে পারলে ভালো হয়। ১০০ গ্রাম হাড় ছাড়া মাংস থেকে ২০ গ্রাম মত আমিষ পাওয়া যায়। একজন ৫০ কেজি ওজনের মানুষের প্রতিদিন ৫০-৭৫ গ্রাম আমিষের প্রয়োজন। এই পরিমাণ আমিষ পেতে প্রায় ২৫০ থেকে ৩৭৫ গ্রাম মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, বাদাম, বিচিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এর তিন ভাগের এক ভাগও মাংস থেকে গ্রহণ করতে চাইলে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম মাংস খুব সহজেই খাওয়া যায়। তবে যাদের বিভিন্ন রোগ আছে, যেমন: হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, স্ট্রোক, হার্টের অসুখ ইত্যাদি, তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে ঠিক করতে হবে কতটুকু আমিষ নিতে হবে। মাংস রান্নার ক্ষেত্রে আমাদের কতগুলো সাধারণ নিয়ম মানতে হবে। নিয়মগুলো হলো: ১. বাইরে থেকে দেখা যায় এমন শক্ত চর্বি বাদ দিতে হবে। ২. মাংস ছোট ছোট টুকরো করতে হবে। ৩. মাংসে তেল ও মসলা কম পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। ৪. রান্নার সময় টক দই, ভিনেগার ও আদা বাটা দিয়ে ম্যারিনেট করতে হবে। ৫. মাংস ভালোমতো সেদ্ধ করতে হবে। ৬. প্রাপ্তবয়স্ক ও সিনিয়র সিটিজেনদের ক্ষেত্রে সলিড মাংস খেতে হবে। ৭. চর্বিযুক্ত অংশ ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, যেমন: মগজ, কলিজা, হার্ট, কিডনি, তিলি, জিহ্বা ইত্যাদি বাদ দিতে হবে। তবে নরম হাড় ও লিগামেন্ট খেতে পারবে। মাংস খাওয়ার সময় প্রচুর শাকসবজি ও সালাদ খেতে হবে। এতে হজম ভালো হবে। পোলাও, বিরিয়ানি, পরোটা, লুচি ইত্যাদির সঙ্গে মাংস না খেয়ে, বাদামি চালের ভাত ও বাদামি আটার রুটির সাথে মাংস খেতে পারলে ভালো হবে। এ সময়ে ডেজার্ট, যেমন: ফিরনি, পায়েস, পুডিং, কাস্টার্ড, জর্দা, মিষ্টিদই ইত্যাদি খাওয়া বাদ দেওয়াই ভালো, তবে টক দই খাওয়া যাবে।
|
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |