গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কপালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফুল না দেওয়াকে কেন্দ্র করে এক শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক সদস্য ও তার সহযোগীরা এ মারধর করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকের।
শনিবার (০৮জুন ২০২৪) বিকালে উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের কপালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালে ইউএনওর সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক (৪৪)। এ ঘটনার পর তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি কপালেশ্বর গ্রামের ফাইজ উদ্দিন পালোয়ানের ছেলে এবং ওই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত। ঘটনার দিনগত রাত ১২টার দিকে কাপাসিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।
অভিযুক্ত ব্যাক্তিরা হলেন বিল্লাল হোসেন (৪২), তিনি উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের আব্দুল হাই হারুর ছেলে এবং বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বলে জানা গেছে। অপর সহযোগীরা হলেন উপজেলার নামিলা গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (৪৫), কপালেশ্বর গ্রামের মৃত আবুল কাশেমের ছেলে সোহেল রানা (৪২), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান (৪৪) এবং মৃত গিয়াস উদ্দিন মাঝির ছেলে নাসির উদ্দিন রবিন (৪১)।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সভাপতি হিসেবে আমি ফুল প্রত্যাশা করিনি। তারপরও আামার সামনে অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন সিনিয়র শিক্ষক মোজাম্মেল হককে পিটিয়ে আহত করেছেন। পরে কাপাসিয়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় দুই পক্ষকে শান্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইন বলেন, ‘অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন আমাকে বলেছিলেন ইউএনওর জন্য ফুলেল শুভেচ্ছার ব্যবস্থা করতে। আমি বলেছিলাম ইউএনওকে উপজেলায় ফুল দেওয়া হয়েছে। এরপরও ফুল দিতে চাপ দিলে আমি বোঝানোর চেষ্টা করি। শনিবার সভা চলাকালে বিল্লাল ইউএনওর সামনে আমাকে গালি দেন। এ সময় শিক্ষক মোজাম্মেল হক প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিল্লাল, সাবেক সভাপতি ও তার লোকজন শিক্ষক মোজাম্মেলকে মারধর করে আহত করেছেন।
আহত শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শনিবার বিকালে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউএনওর উপস্থিতিতে সভা চলছিল। ইউএনওকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা না জানানোর কারণে সভায় বিল্লাল হোসেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে গালি দেন। তার প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে বিল্লাল ও তার চার সহযোগী আমার নাক- মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি দিতে শুরু করেন। এতে আমি আহত হই।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর বিল্লাল তার ৩৫-৪০ সহযোগীকে নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষক ও আমাকে সুযোগে পেলে যেকোনও সময় উচিত শিক্ষা দেওয়ার হুমকি দেন। তাদের হুমকিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। থানায় অভিযোগ দিয়ার পরও এখনো কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেনকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খান বলেন, ‘যারা শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া দরকার।