আত্মহত্যার প্রবণতা রুখতে মাইলের পর মাইল সাইকেল নিয়ে ছুটে চলেছেন কলকাতার বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাস
নুর-আমিন,খানসামা,দিনাজপুর
|
আত্মহত্যার প্রবণতা রুখতে মাইলের পর মাইল সাইকেল নিয়ে ছুটে চলেছেন কলকাতার বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাস দিনে দিনে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। বাদ যাচ্ছে না স্কুল পড়ুয়ারাও। সমাজে এই মারাত্মক প্রবণতাকে রুখতে মাইলের পর মাইল সাইকেল নিয়ে ছুটে চলেছেন কলকাতার বাসিন্দা সঞ্জয় বিশ্বাস। তিনি চার বছর ধরে 'আত্মহত্যাকে না বলি' বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে সাইকেল চালিয়ে ভারতের ২৬টি রাজ্য ভ্রমণ করেন। তবে, শুধু ভারতে তার সচেতনতা কার্যক্রম থেকে নেই। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে তিনি অবস্থান করছেন বাংলাদেশে। এর পিছনে রয়েছে এক করুণ কাহিনি। সঞ্জয় নিজেও দুবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। কোনওভাবে ব্যর্থ হন তিনি। কিন্তু বুঝতে পারেন নিজের ভুল। তারপর থেকেই মানুষের মনে চেতনা আনতে দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়ান সঞ্জয়। ‘আত্মহত্যা যন্ত্রণার শেষ করে না, এটি অন্য কাউকে দিয়ে যায়’ এই মন্ত্র বাংলা, হিন্দি, ইংরেজিতে লিখে পোস্টার বানিয়ে সাইকেলে লাগিয়ে ছুটছেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার গাইঘাটার থানার ঠাকুরনগরের বছর তেত্রিশের যুবক সঞ্জয় বিশ্বাস। জানা যায়, ইতিমধ্যে ভারতের ২৪টি রাজ্য ঘোরা হয়ে গিয়েছে তাঁর। এর আগেও এসেছিলেন বাংলাদেশে। শনিবার (৯ জুন) বিকেলে বাংলাদেশের ৪৯তম জেলা হিসেবে দিনাজপুরের খানসামায় অবস্থান করেন। এ বিষয়ে সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, 'ভারতের মতো জনবহুল দেশে আত্মহত্যা একটি ভয়াবহ সমস্যা। যে কারণে আমি সাইকেলে চালিয়ে আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করছি।' তিনি বলেন, 'গ্রাজুয়েশন পাশ করে কোনও কাজ না পেয়ে ছোট খাবারের দোকান শুরু করি। সেই ব্যবসা অচিরেই বন্ধ হয়ে যায়। তারপর লকডাউনের ঠিক আগে আবার নতুন দোকান শুরু করি। তার দেড় মাসের মধ্যে শুরু হয় লকডাউন। সেই কারণে ফের বন্ধ হয়ে যায় দোকান। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ি। সব পুঁজি প্রায় শেষ। সব হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হই। কিন্তু, তাতে সফল হইনি। তারপরই আত্মহত্যার খারাপ দিক সম্পর্কে অবগত হই। বাবা–মায়ের মানসিক অবস্থা বুঝতে পেরে নিজের পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে পথে নামি। করোনা পর্ব মিটতেই সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি। তিনি আরো বলেন, আমার দেশের ইতিমধ্যে ২৪টি রাজ্য, বাংলাদেশ ঘুরে ফেলেছি। বাংলাদেশ গিয়ে আত্মহত্যা না করা নিয়ে বক্তব্যও পেশ করেছেন তিনি। মিলেছে প্রশংসাপত্র ও ক্রেস্ট। সঞ্জয় আরও বলেন, কঠিন পরিস্থিতিতে অনেকেই আমায় বলে রোজ সাইকেল নিয়ে ঘুরতে। সেই থেকেই এই পরিকল্পনা। তাঁর এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বলিউড তারকা সোনু সুদ। মুম্বাইয়ের অভিনেতা নিজে দেখা করে সঞ্জয়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কীভাবে চলে এই সাইকেল যাত্রার বার্তা? সঞ্জয় বলেন, এখন পরিচিতি বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশ, পণ্ডিচেরির আশ্রম থেকে আমাকে সাহায্য করা হয় এই সাইকেল যাত্রার জন্য। প্রচুর পরিচিত মানুষ জুটেছেন। তাঁরাও সাহায্য করেন। বাংলাদেশ সফরে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যেখানেই যাচ্ছি মানুষ আপনজনের মতো কাছে টেনে নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বাইকার ও সাইক্লিং গ্রুপের সদস্যরাও আমাকে সাহায্য করছেন।' |
পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ |