প্রেস সচিব হওয়ার আগে ১৮৬৩ গালাগাল খান তিনি
সাঈদুর রহমান রিমন
|
নাঈমুল ইসলাম খানের সৃষ্টিশীল মেধা, যোগ্যতা আর শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতা মিলিয়েই "প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব" পদটি শোভিত হয়েছে। “কৃতজ্ঞতা“ বলছি এই কারণে যে, আওয়ামীলীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ দিকে দেশের সিংহভাগ টিভি চ্যানেলের টকশো সমূহ একচেটিয়া সরকার বিরোধী বক্তব্য, মন্তব্য, বিশ্লেষণের ঝড় চলছিল। ওই সময় টকশোগুলোতে সরকার বিরোধী ঘোর সমালোচকদের বিপরীতে আওয়ামীলীগের সমর্থনে মিনমিনে কন্ঠে কিছু বলার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ ওই সময়ে দেশ কাঁপানো সরকার বিরোধী সব সমালোচক, গবেষক, বিশ্লেষকদের তাত্ত্বিক, যৌক্তিক কিংবা একপেশের আগ্রাসী বক্তব্যের বিপরীতে শক্তপোক্ত ঢাল হিসেবে কঠিন ভূমিকায় সদা তৎপর ছিলেন নাঈমুল ইসলাম খান। টিভি চ্যানেলগুলোর নানা কারিশমায় যুক্ত করা দেশী, প্রবাসী বক্তা, অবসরপ্রাপ্ত ঝানু আমলা, প্রতিরক্ষা বিশারদদের সম্মিলিত যুক্তি তর্ককে তিনি একাই তোপের মতো উড়িয়ে দিয়েছেন। এ জন্য কোনো কোনো টোকশো অনুষ্ঠানে তাকেও পাল্টা হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে, শিকার হতে হয়েছে নানা অসভ্যতারও। বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র জগতের একটি আলোচিত নাম নাঈমুল ইসলাম খান। তিন দশকের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি নিজ হাতে গড়েছেন উল্লেখসংখ্যক সংবাদপত্র এবং তৈরি করেছেন অসংখ্য সাংবাদিক। নাঈমুল ইসলাম খানের টকশোতে কথা বলা নিয়ে যেমনি তার রয়েছে সমর্থক তেমনি রয়েছে তার মন্তব্যের উল্লেখ সংখ্যক ঘোর বিরোধীও। যে কোনো প্রশ্নের মুখামুখি হতে সদা প্রস্তুত থাকা নাঈমুল ইসলাম খানকে তখন হাজারো বাক্যবাণে জর্জরিত করা হয়েছে, বিব্রত করা হয়েছে বারবার। এরপরও ‘টকশো’তে তিনি কখনোই জানতে চাইতেন না তার সঙ্গে কে কে আছেন’। একাকী হওয়া সত্ত্বেও ধারাবাহিক লড়াইয়ের ওই ময়দান তাকে কখনও ছাড়তে দেখা যায়নি, বরং বীরত্বের সঙ্গে নির্বিকার ভাবেই বাকযুদ্ধ চালিয়ে গেছেন তিনি। এ কারণে টিভি চ্যানেলের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান সম্প্রচাররত অবস্থায়ও নাঈমুল ইসলাম খানকে আওয়ামীলীগের পা চাটা দালাল, বিক্রি হওয়া সাংবাদিক, অভিশপ্ত বুদ্ধিজীবী-গোলাম ইত্যাদি জঘণ্য বিশেষণ সংবলিত গালাগাল গোটা দেশবাসী সরাসরিই শুনতে পেয়েছেন। ওই সময় আমার এক রিপোর্টার ভাগ্নে পর পর দুই রাতে অনুষ্ঠিত টকশোর বিপরীতে অনলাইন মন্তব্য ঘর ঘেঁটে ১৮৬৩ টি বিশ্রী, নোংরা গালাগাল একত্রিত করে। সবগুলোই নাঈমুল ইসলাম খান, তার পরিবার, বাবা-মা কে আক্রমণ করে লেখা ও বলার অযোগ্য সে গালাগালগুলো ভাগ্নে ৪৭টি পাতায় রীতিমত প্রিন্ট করে এনে আমার টেবিলে জমা দেয়। আমি তো অবাক! জিজ্ঞাসা করি এসব কী গালাগাল শিক্ষার স্ক্রীপ্ট বানানোর জন্য এভাবে প্রিন্ট করলে? কারণটা কি? জবাবে ওই ভাগ্নেটি যা বলেছিল তাতে আমি থ বনে যাই। সে বলতে থাকে- যে যাই বলুক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর আবেগী আর অসামান্য কৃতজ্ঞতা বোধসম্পন্ন একজন মানুষ। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেষ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যার্পণের পর তাকে ঘিরে কেউ একটা সমাবেশ-মহাসমাবেশ আয়োজন করতে সাহস পর্যন্ত পাচ্ছিলেন না। চারদিকে নানা বাহিনীর রক্তচক্ষুর ভয়ে সবাই ছিলেন সন্ত্রস্ত। কিন্ত ওই সময় ইলিয়াস মোল্লা এমপি‘র বাবা হারুন রশীদ মোল্লা তার মিরপুরে বীরত্বের সঙ্গে শেখ হাসিনার জন্য প্রথম মহাসমাবেশটির আয়োজন করেছিলেন। সেই কৃতজ্ঞতাটুকু ৪৩ বছর ধরে দেখিয়ে আসতেও দ্বিধা করেননি শেখ হাসিনা। হাজারো বাদ, প্রতিবাদ, অদক্ষতা, অভিযোগ সত্তেও হারুন রশীদ মোল্লার ছেলে ইলিয়াস মোল্লাকেই তিনি দলীয় মনোনয়নে এমপি বানিয়ে আসছেন। গফরগাঁওয়ে রিকসা চালক কর্তৃক একখন্ড বসতভিটে শেখ হাসিনার নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার বিপরীতেও প্রধানমন্ত্রীর কৃতজ্ঞতা প্রদর্শনের বিষয়টি সারা দেশের মানুষ জেনেছে, দেখেছে। আমার প্রশ্ন এসবের সঙ্গে এই গালাগালের সম্পর্কটা কি? রিপোর্টার ভাগ্নের সাবলীল জবাব- দেখবেন আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনার জন্য হাজার হাজার গালি খাওয়ার বিপরীতে কোন একদিন নাঈমুল ইসলাম খানের ভাগ্যেও কৃতজ্ঞতার পুরস্কার জুটবে। আমি তার পাগলামি কথাবার্তাকে সেদিন নিছক হাসি তামাশার ছলেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। এখনও যে সে মন্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে ভাগ্নেকে ভবিষ্যত বিশেষজ্ঞ ভাবছি- তা কিন্তু নয়। তবে এটাও শতভাগ সত্য যে,প্রেধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীত ভুলেন না, নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রেও তার জুড়ি মেলা ভার।
|
� পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ � |