মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমার বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন, পাকসেনাদের হাত থেকে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে হাত- চোখ বাঁধা বন্দুকের গুলি থেকে নিজেকে অলৌকিক ভাবে বাঁচাতে পেরেছিলেন। আরো অনেক ইতিহাস আছে। আমার বাবা বলতেন এদেশের সকল জনগন বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যুদ্ধ চলা কালীন এ দেশের সকল মানুষেই মুক্তি যোদ্ধা ছিলো। হাতিয়ার গণহত্যা সেটা আমার দাদার সম্পূর্ণ বাড়িটিকে কেন্দ্র করেই হয়েছিলো। সেই গণহত্যায় আমার আপন চাচা জ্যাঠা ও ভাইরাসহ ৩৫ জনকে পাকবাহিনী ব্যানোয়েট খুঁচিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিলো। থাক সেসব কথা। আমি মুক্তিযুদ্ধের কোন ইতিহাস লিখতে বসিনি। তবে বর্তমান প্রক্ষাপটে বাবার সেই কথাটি বারবার মনে পড়ে "এদেশের সকল মানুষেই মুক্তিযোদ্ধা"- তবে কথাটি এখন আমার কাছে ভুল মনে হচ্ছে। সেই ভুলের খেসারত দিয়েছি আমি, যুদ্ধকালীন জন্ম গ্রহন করে ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। আমার বাপ দাদারাও হতে পারেনি। সাটিফিকেট অর্জন করতে হবে সে সময় সেটাও তারা ভাবেনি। মুক্তিযুদ্ধ শেষে সাধারণ মানুষ হয়ে সাধারণ ভাবে বেঁচে ছিলেন। আমাদের খাইয়ে পরিয়ে সাধারণ ভাবেই বাঁচিয়ে রেখছেন। বাবার মৃত্যু হয়েছে আমরা বিশেষ করে আমি চাকুরির পিছে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে কোটার পাল্লায় পড়ে চাকুরির বয়স শেষ করেছি। এখন নিজের ছেলে- মেয়েকে ভার্সিটি কলেজ পড়াচ্ছি। আর কদিন পড়েই ছেলে- মেয়ের পড়া- লেখা শেষ করবে। ভাবছি মেয়েকে বিসিএস করাবো। কিন্তু ভয় পাচ্ছি কোটা বিশ্লেষণ করে দেখছি বৃথাই সে স্বপ্ন! বিসিএস ক্যাডারে আমি আমরা যারা সাধারণ যাদের কোন কোটা নেই তারা হুদাই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। যেমন:- বিসিএস কোটার বিন্যাসঃ- মুক্তিযোদ্ধার কোটাঃ ৩০%, নারী কোটাঃ ১০%, জেলা কোটাঃ ১০%, উপজাতি কোটা ৫%, প্রতিবন্ধি কোটা ১%, মোটঃ ৫৬% বাকী ৪৪% সাধারণ কোটা। অনেক হিসাব নিকেশের পর আমরা যারা সাধারণ ভাগে পরি কি? প্রশ্ন রাখলাম। এরপর আসা যাক ১ম ও ২য় শ্রেণী নন ক্যাডার কোটায়ঃ- এতে মুক্তিযোদ্ধার কোটাঃ ৩০%, নারী কোটাঃ ১৫%, জেলা কোটাঃ ১০%, উপজাতি কোটা ৫%, প্রতিবন্ধি কোটা ১%, মোটঃ ৬১%। এই কোটায় মেয়ে হয়ত প্রতিযোগিতা করতে পারে। কিন্তু ছেলের বেলায় বাকী ৩৯% সাধারণ কোটার ভাগাভাগিতে টিকে যাওয়া সহজ নয়। এরপর আসি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ কোটা বিন্যাসেঃ- এতে নারী কোটা ৬০%, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%, পোষ্য কোটা ৫%, প্রতিবন্ধি কোটা ১% মোট= ৯৬% কোটা অর্থাৎ বাকী ৪% সাধারণ কোটায় ছেলেকে শিক্ষক বানানোর স্বপ্ন স্বপনই থেকে যাবে। ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষা কিংবা মেধাবী তৈরি করে এদেশে চাকুরির আশা করা বোকামো ছাড়া আর কিছু হতে পারে বলে বিশ্বাস করিনা। তাই ভাবছি মেয়েকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার আশা বাদ দিয়ে স্কুলের মাষ্টারনি হওয়ার পরামর্শ দেব। আর ছেলেকে পড়ালেখা বাদ দিয়ে কোন রাজনৈতিক নেতাকে তেল মেরে মেরে নেতা হতে বলবো। ছেলে এখনো জানে না নেতাদের বেতন সবার চেয়ে বেশি। নেতা হতে পারলে ভালো। না হলে মারে খাবে। আমি বাপু সাধারণ কোটার মানুষ অতোসব বুজি কম!