প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তির আয়ের ওপর সর্বোচ্চ কর ৩০ শতাংশ ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। তবে এই একই প্রস্তাবে বেশ কিছু খাতের আয়কে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক খাত।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামী ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এই বাজেটে রাজস্ব আয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত নানা ধরনের কর থেকেই আসবে মোট রাজস্ব আয়ের ৬০ দশমিক ২ শতাংশ।
ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বেড়েছে। তবে এর মধ্যেও কিছু খাতকে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আইটি সেবাসমূহসহ অন্যান্য কতিপয় খাতে ১ জুলাই ২০২৪ হতে ৩০ জুন ২০২৭ পর্যন্ত অর্জিত আয়কে করমুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রীর করমুক্ত রাখার জন্য প্রস্তাবিত খাতগুলো হলো—এআই বেজড্ সলিউশন ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ব্লকচেইন বেজড্ সলিউশন ডেভেলপমেন্ট, রোবোটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার অ্যাজ আ সার্ভিস, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ডিজিটাল ডেটা এনালাইটিক্স ও ডেটা সাইয়েন্স, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস, ইত্যাদি।
এ ছাড়া নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রস্তাবে তিনি বলেন, ‘মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছরের বেশিয় বয়সের করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা হইবে ৪ লাখ টাকা, তৃতীয় লিঙ্গের এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ৫ লাখ টাকা, কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য ৫০ হাজার টাকা বেশি হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যেকোনো একজন এই সুবিধা ভোগ করবেন।’
উল্লেখ্য, নতুন বছরের বাজেটে ব্যক্তির বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ কর প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। আর কালো টাকা সাদা করতে কর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির আয় বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা হলে তাকে কর দিতে হবে না। আর ব্যক্তি আয়ে সর্বোচ্চ কর প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সাড়ে তিন লাখের পরবর্তী এক লাখ টাকা আয়ে ৫ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখে ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখে ১৫ শতাংশ, এরপরের ৫ লাখে ২০ শতাংশ, পরের ২০ লাখে ২৫ শতাংশ এবং এর বেশি আয় হলে ৩০ শতাংশ আয়কর দিতে হবে।’
এর আগে বিকেল বেলা ৩টার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে স্পিকার শিরীন শারমিনের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য শুরু করেন।
বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে, বিশেষ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।