ই-পেপার সোমবার ১৪ নভেম্বর ২০২২
ই-পেপার |  সদস্য হোন |  পডকাস্ট |  গুগলী |  ডিসকাউন্ট শপ
শুক্রবার ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩ মাঘ ১৪৩১
অতীত ‘উত্তেজনা’ ভুলে সামনে তাকানোর মন্ত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র
নতুন সময় ডেস্ক
প্রকাশ: Thursday, 16 May, 2024, 10:14 AM

অতীত ‘উত্তেজনা’ ভুলে সামনে তাকানোর মন্ত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র

অতীত ‘উত্তেজনা’ ভুলে সামনে তাকানোর মন্ত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র

প্রথমে মানবাধিকার প্রশ্নে এলিট ফোর্স র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় দুই দেশের মধ্যে যে ‘উত্তেজনা’ তৈরি হয়েছিল, তা ভুলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে সামনে তাকাতে চান দেশটির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

বুধবার ১৫ মে, ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। দুই দেশের জনগণের মধ্যে আস্থা পুনর্র্নিমাণের চেষ্টা করাই তার এবারের বাংলাদেশ সফরের উদ্দেশ্য বলে মন্তব্য করেন ডোনাল্ড লু।

“সবাই জানেন, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক উত্তেজনা ছিল। এখানে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সহিংসতাহীন নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কঠোর পরিশ্রম করে। এর ফলে কিছু উত্তেজনা তৈরি হয়।” এ উত্তেজনাকে সম্পর্কের (কূটনীতি) সাধারণ বিষয় হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়।
“আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার উপায় খুঁজতে চাই। আমাদের সম্পর্কের মধ্যে যেসব কঠিন বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে মন্ত্রীর (হাছান মাহমুদ) সঙ্গে কথা বলেছি।”

কঠিন বিষয় বলতে ‘র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং শ্রম সংস্কার, মানবাধিকার ও ব্যবসায় পরিবেশের সংস্কার’ এর কথা বলেছেন এই মার্কিন সহকারী মন্ত্রী।

এসব কঠিন ইস্যুতে কাজ করার জন্য ইতিবাচক সহযোগিতার ভিত্তিতে যেসব বিষয় রয়েছে, সেগুলো নিয়ে এগোতে চান তিনি। তিনি বলেন, “নতুন বিনিয়োগ, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং ক্লিন এনার্জির মতো ইস্যুতে সহযোগিতার বিষয়ে আমাদের আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে।” দুর্নীতির বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে লু বলেন, “সরকারকে স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলতে এবং দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার ক্ষেত্র বাড়াতে আমাদের অনেক কিছু করার আছে।”

ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এ সময় ঢাকা সফরের আরেকটি কারণের কথা বলেছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তারা ভাষায়, বাংলাদেশে করের আওতা কীভাবে বাড়ানো যায়, যার ভিত্তিতে সব বাংলাদেশি তার ভাগের দেনাটা পরিশোধ করতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য সম্প্রতি তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মন্ত্রী (পররাষ্ট্রমন্ত্রী)। এবারের সফরের অভিজ্ঞতাকে ‘চমৎকার’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।

তিন দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় পৌঁছান ডোনাল্ড লু। ওই দিন রাতে গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজের মধ্য দিয়ে তার সরকারি কর্মসূচি শুরু হয়। বুধবার বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন তিনি। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তিনি বসেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে কিছু সময় ক্রিকেট খেলার কথাও রয়েছে তার।

লু-সাবের বৈঠকে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা: পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় পরিবেশ সুরক্ষার নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে কীভাবে কাজ করা যায় তা নিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ডোনাল্ড লুর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বুধবার সচিবালয়ে সাবের হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকের পর পরিবেশমন্ত্রী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। শুরুতেই তিনি বলেন, “আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছি, অতীতের কোনো বিষয় নিয়ে কথা হয়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার সুবিধার্থে এটা আগেই জানিয়ে রাখলাম।”

জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মানবাধিকার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। অবাধ, নিরপেক্ষ ও নির্বিঘ্ন নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতিতে কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে নির্বাচনের পাঁচ মাসের মাথায় ডলান্ড লুর এবারের সফরে সম্পর্ক উন্নয়নের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ এবং আমেরিকার মধ্যে যে সম্পর্ক আছে এটাকে আমরা কিভাবে আগামী দিনে এগিয়ে নিতে পারি। সেখানে সার্বিকভাবে যে বিষয়গুলোতে আমাদের অবস্থান অভিন্ন, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং আমেরিকা কীভাবে যৌথভাবে কাজ করতে পারে মূলত আমরা সেটা নিয়ে আলাপ করেছি।

“জলবায়ু নিয়ে কথা বলার সময় পরিবেশ, বন ও জীব বৈচিত্র্যের বিষয়গুলো চলে আসে। এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আগামী দিনে আমরা একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। সেজন্য হয়ত আমাদের একটা ওয়ার্কিং গ্রুপের মতো কিছু একটা থাকতে পারে। এখানে আমরা পাঁচ বছরের একটা কর্মসূচি হাতে নেব। এই কর্মসূচির অধিনে প্রতিবছর কী কী কাজ হবে সেটা থাকবে।” পরিবেশমন্ত্রী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কর্মসূচিতে আমেরিকার প্রাইভেট সেক্টরেরও আগ্রহ রয়েছে। আমাদের যে মুজিব ক্লাইমেট প্রসারিটি প্ল্যান আছে, এর কিছু অংশে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর আগ্রহ রয়েছে।” ভবিষ্যতে পরিবেশ ও জলবায়ু সুরক্ষায় বিনামূল্যে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার স্যাটেলাইট ইমেজের সহযোগিতা পাওয়ার বিষয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে বলে জানান সাবের। তিনি বলেন, “পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে আজকের আলোচনায় আমাদের দুজনের অবস্থান ছিল অভিন্ন। শুধু আর্থিক সহযোগিতা নয়, গবেষণা ও কারিগরি তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নাসার বেশকিছু স্যাটেলাইট আছে, বর্তমানে এরা বেশকিছু দেশে তথ্য দিচ্ছে। আগামীতে হয়তো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য তারা স্যাটেলাইটের এসব তথ্য দেবে। বাংলাদেশের বিষয়টাও তারা বিবেচনা করবে এবং এটা হয়তো আমরা খুব কম মূল্যে অথবা বিনামূল্যে পাব।

“কোন জায়গায় বন উজাড় হচ্ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা কোথায় বাড়ছে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এর তথ্যগুলো আমরা রিয়েল টাইমে পাব। এটা হবে আমাদের জন্য অনেক বড় একটা বিষয়। স্মার্ট এগ্রিকালচারের ক্ষেত্রে তাদের সাথে আমাদের একটা কোয়ালিশন রয়েছে। এসব বিষয়ে একটা ভালো ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আজকের এই আলোচনার ভিত্তিতে আগামী দিনে আমরা বসে কর্মক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করব।” তিন দিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজের মধ্য দিয়ে ডোনাল্ড লুর সরকারি কর্মসূচি শুরু হয়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় লুর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও ডোনাল্ড লু বৈঠক করেন। তার সফরে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে র‌্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা সোমবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ
সম্পাদক : নাজমুল হক শ্যামল
দৈনিক নতুন সময়, গ্রীন ট্রেড পয়েন্ট, ৭ বীর উত্তম এ কে খন্দকার রোড, মহাখালী বা/এ, ঢাকা ১২১২।
ফোন: ৫৮৩১২৮৮৮, ০১৯৯৪ ৬৬৬০৮৯, ইমেইল: info@notunshomoy.com
প্রকাশক : প্রবাসী মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন লি.-এর পক্ষে কাজী তোফায়েল আহম্মদ। কপিরাইট © দৈনিক নতুন সময় সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft
DMCA.com Protection Status